বিজ্ঞাপন

স্মৃতির গন্ধ মেখে নস্টালজিয়ায়

April 21, 2018 | 5:48 pm

রাজনীন ফারজানা ।।

বিজ্ঞাপন

 

আমাদের মনের মাঝে থাকে অনেকগুলো ঘর, যেখানে বাস করে টুকরো টুকরো অতীত। চলতি পথে নানারকম দৃশ্য, শব্দ কিংবা গন্ধ খুলে দেয় সেই দুয়ার আর আমরাও ফিরে তাকিয়ে দেখি যাপিত জীবনের কিছু অংশ। আবার কখনও কখনও অতীতের সুখস্মৃতির খোঁজে বেরিয়ে পড়ি স্মৃতিময় কোন জায়গার উদ্দেশ্যে।
এমনই এক জায়গা ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত নস্টালজিক ক্যাফে। খোলামেলা এই রেস্তোরাঁতে যেমন রয়েছে মুখরোচক খাবার, তেমনি আছে নির্বিঘ্ন আড্ডায় মেতে ওঠার সুযোগ। পরিবার, বন্ধু কিংবা বিশেষ কারও সাথে সময় কাটানোর ও আড্ডায় মেতে থাকার সুযোগের কারণে ঢাকায় গড়ে ওঠা ভিন্ন ধরণের রেস্তোরাঁগুলোর মাঝে অন্যতম জনপ্রিয় নস্টালজিক ক্যাফে।

বিজ্ঞাপন

মানুষের জীবনে কিছু স্মৃতি থাকে সামগ্রিক আর কিছু থাকে একান্ত নিজের। আমাদের দেশে বড় কোন গাছের নীচে চায়ের দোকানের আড্ডার স্মৃতিতে দুটোই মিশে আছে। এমনই কিছু সুন্দর স্মৃতিকে জাগ্রত রাখার ইচ্ছা বুকে নিয়ে ২০১৫’র ১২ই এপ্রিল ছয় বন্ধু মিলে শুরু করেছিলেন কন্টিনেন্টাল রেস্টুরেন্ট নস্টালজিক ক্যাফে। ছাত্রজীবন আর অতীতের যাপিত জীবনের সুখস্মৃতিকে ধারণ করতেই এই রেস্টুরেন্ট। ক্যাফের নস্টালজিয়া নামটির উৎপত্তিও এই ভাবনা থেকেই। উদ্যোক্তারা চেয়েছিলেন, মানুষ যেন এই রেস্টুরেন্টে এসে স্মৃতিময়তার মাঝে সুন্দর কিছু সময় কাটাতে পারেন।

ধানমন্ডির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টের সাথে শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতি কিংবা আবেগই নয় জড়িয়ে আছে জাতীয় নেতার স্মৃতি। এই রেস্টুরেন্ট যে ভবনে অবস্থিত সেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের বাড়ি। এই বাড়ির সামনে রাস্তার উপর আছে একটা আমগাছ। তাজউদ্দীনের স্মৃতিবিজড়িত এই আমগাছটিতে নস্টালজিক ক্যাফের পক্ষ থেকে সাজানো হয়েছে রঙ বেরঙের বাহারি শেডে ঢাকা লাইট দিয়ে। আর গাছের নীচেই একটা কাঠের সাইনবোর্ডে ইংরেজি হরফে লেখা নস্টালজিক আপনাকে স্বাগত জানাবে ভবনের টপ ফ্লোরের রেস্তোরাঁতে স্মৃতির উষ্ণতা মেখে কাটিয়ে দিতে দারুণ কিছু প্রহর।

বিজ্ঞাপন

রেস্তোরাঁর ভেতরে পা দেওয়ার আগেই আপনাদের দৃষ্টি কেড়ে নেবে লিফটের বাইরে চমৎকার করে সাজানো ছোট্ট লবি। সবুজ গাছপালা, ছোট্ট সিটিং স্পেস আর মাটির টাবে ভেসে বেড়ানো রঙিন মাছ স্বাগত জানাবে আপনাকে। এরপর রেস্তোরাঁর ভেতরে পা দিতেই আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবে দু’টো বটগাছ। না, সতিকারের বটগাছ না। কাঠের পিলার আর ছাদজুড়ে পেইন্টিঙের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বটগাছের অনুভূতি। পেইন্টেড বটগাছের নীচে ছড়ানো ছিটানো নানা রকম সিটিং স্পেস। মনে হবে ঠিক যেন বটগাছের আড্ডা ডাকছে আপনাকে।

সেই আড্ডার লোভেই এখানে ভিড় জমায় নানা বয়েসী মানুষ। কেউ আসেন বন্ধুবান্ধবের সাথে, কেউ পরিবার আর কেউ প্রিয় মানুষের সাথে। রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সিফাত রেজা জানালেন, সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি নিরিবিলি আড্ডা দেওয়ার এমন চমৎকার জায়গার টানে বারবার ফিরে আসেন কোন কোন ক্রেতা। আবার কোনও কোনও নিয়মিত ক্রেতাকে মেম্বারশিপ কার্ড দেওয়ার মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় বলেও জানান তিনি। মেম্বারশিপ কার্ডধারীরা ১৫ শতাংশ ছাড় উপভোগ করেন এই রেস্তোরাঁতে।

বিজ্ঞাপন

ক্যাফে নস্টালজিকের একপাশের দেওয়ালজুড়ে রয়েছে হাতে আঁকা ছবি। নীল প্যাটার্ন পেইন্টিং করা দেওয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে এমন কিছু জিনিসের ছবি যা আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে, যেমন- গ্রামোফোন, পুরনো দিনের ল্যান্ডফোন, মোবাইল, বিউগল, লাটিম, রুবিক কিউব, এন্টেনাযুক্ত টেলিভিশন, লুডোর ছক্কা, ক্যাসেট প্লেয়ার, হেডফোন, সিডি, টর্চ আর টর্চের ব্যাটারি, ডাকবাক্স আর চিঠি, রেডিও, ভেসপার ছবি। এই দেওয়ালজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টুকরো টুকরো স্মৃতি কোন এক যুগলকে নিয়ে যাবে ল্যান্ডফোনের দিনের বুক দুরুদুরু করা মধুর আলাপনের স্মৃতিমাখা দিনে। জানালার পাশে কফির কাপে আড্ডায় মেতে ওঠা কোন কর্পোরেট চাকুরে বন্ধুর দল হয়ত ফিরে যাবে তাদের লুডোর আড্ডায় মেতে ওঠা দিনগুলোতে।

কাঁচের জানালার ওপাশে ধানমন্ডির চমৎকার ভিউ। বসন্তের বিকেলে বসেও মনে হতে পারে, ‘ইসস যদি বৃষ্টি নামত!’ এমন একটা জায়গায় বসে কফি খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতে দেখতে এক দুপুর পাড়ি দিয়ে আসাই যায় ঢাকার অন্য প্রান্ত থেকে। দুঃখের হোক কী সুখের, স্মৃতি সবসময় রঙিন। তাই হয়ত নস্টালজিয়ার সিটিং এরেঞ্জমেন্টও নানা রঙে রঙিন। আরামাদায়ক কাঠের চেয়ারগুলোর ডিজাইনের ভিন্নতাতেও চোখে পড়ে রুচির ছোঁয়া। চেয়ারে বসে আড্ডা দিতে ক্লান্ত লাগলে একপাশের বটগাছের নীচে রঙিন কুশনে সাজানো ছোট্ট গোল বিছানায় আধাশোয়া হয়েও মেতে উঠতে পারেন আড্ডায়।

এখানকার উষ্ণ আর অভিজাত ইন্টেরিয়রের সাথে ম্যাচ করেই সাজানো হয়েছে মেন্যুকার্ড। সিফাত রেজা জানালেন নস্টালজিক ক্যাফের খাবারের বিশেষত্ব হল, ‘সব উপাদানই তাজা আর খাবার অর্ডার দেওয়ার পর তৈরি করে দেওয়া হয়।’

নস্টালজিকের জনপ্রিয় খাবারগুলোর মাঝে অন্যতম লেমন গার্লিক চিকেন উইথ ম্যাশড পটেটো এন্ড স্যটেড ভেজিটেবলস। লেবু, রসুন আর অন্যান্য মশলার সুঘ্রাণের সাথে ম্যাশড পটেটোর মাখন আর ক্রিমি সুস্বাদ। সবমিলিয়ে নানারকম স্বাদ ও গন্ধের দুর্দান্ত ব্যলান্সের ডিশটা পূর্ণতা পায় সাথে যদি থাকে এক গ্লাস নস্টালজিক মিক্স।

নস্টালজিক মিক্স নামক মকটেলের স্বাদ আবার ঋতুভেদে বদলে যায়। কখনও তাতে পাবেন কাঁচা আম আর আনারস তো কখনও আনারস আর মাল্টার স্বাদ। মকটেলের পাশাপাশি পাবেন লেমনেড, নানারকম শেক, লাচ্ছি, সফট ড্রিংক্স, চা ও কফি।

এসব ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় নানারকম স্যুপ, স্টেক, কাবাব, মোমো, বারবিকিউ, র‍্যাপ, সালাদ, চিকেন ও বিফের আলাদা আলাদা প্রিপারেশন, সি ফুড, পানীয় ও ডেজার্ট। আলাদা আলাদা মেন্যু থেকে নানারকম খাবার আর পানীয় বাছাই করতে ঝামেলা লাগলে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন যেকোন একটি প্লেটার। তিনটি ভিন্ন প্লেটারে পাবেন তিনরকম বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। ফ্রায়েড রাইস, স্টিমড চিকেন মোমো, স্যটেড ভেজিটেবলস, ক্যাশুনাট স্যালাডের সাথে পেরি পেরি চিকেন! এরকম বৈচিত্র্যময় খাবার একই প্লেটারে পেতে আপনাকে যেতেই হবে ক্যাফে নস্টালজিয়ায়। বাকিসব প্লেটারেও পাবেন ভিন্নতা। কোনটায় পাবেন গ্রিলড পটেটো তো কোনটায় গ্রিলড চিকেন স্যালাড।

মূলত কন্টিনেন্টাল এই রেস্তোরাঁর মেন্যুতে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে স্পেশাল রেশমি চিকেন খিচুড়ি। পর্যাপ্ত পরিমাণ খিচুড়ির সাথে এক প্লেটে পাবেন দুই টুকরো মশলাদার মুরগির মাংস। চিকেন রেশমি খিচুড়ির সাথে মিশিয়ে দেওয়া আচারের ঘ্রাণ যে কারও মুখে জল এনে দেবে।

নস্টালজিক ক্যাফেতে পাবেন হাসিমুখ সার্ভিসপারসন আর নিরিবিলি আড্ডা দেওয়ার সুযোগ। সেই সাথে ‘ফ্রেশলি মেড’ খাবারের দামটাও হাতের নাগালেই। নস্টালজিক ক্যাফের পূর্ণ মেন্যু ও খাবারের দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে যে কেউ ভিজিট করতে পারেন তাদের ফেসবুক পেইজ।

https://www.facebook.com/nostalgicbd/

 

ছবি – আশীষ সেনগুপ্ত 

 

সারাবাংলা/আরএফ/এসএস/আরএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন