বিজ্ঞাপন

হলের পার্লারে ছাত্রলীগ নেত্রীর চাঁদা দাবি

November 11, 2018 | 8:25 am

।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে হলের বিউটি পার্লার থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। পার্লার মালিক হল প্রশাসনকে চাঁদা দাবির বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। হল প্রশাসনও এই অভিযোগ পাওয়ার বিষয় স্বীকার করেছেন।

এছাড়াও কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লার বিরুদ্ধে হলের ক্যান্টিন, হল মেরামত, ইন্টারনেট সেবা, হলের বাইরের বিভিন্ন দোকান থেকেও চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে হল প্রশাসন।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর হলে একটি বিউটি পার্লার দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগের এই দুই নেত্রী সেখান থেকে মাঝে মাঝে ফ্রি কাজ করাতেন। সম্প্রতি পার্লারের মালিকের কাছে তারা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। অন্যথায় পার্লার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা।

বিজ্ঞাপন

পার্লার মালিক চাঁদা দাবির তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এদিকে ছাত্রলীগের এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে হল প্রশাসন হলের ডাইনিং থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন। হল প্রশাসনের একজন সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘তারা আরও চাঁদা নেওয়ার জন্য নিজেরা পোকা মেরে ছবি তুলে ফেসবুকে ছাড়েন। তারপর ক্যান্টিন মালিককে অপসারণের জন্য ছাত্রীদের দিয়ে মিছিল করান। অথচ হলের সাধারণ ছাত্রীদের ডাইনিং নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই ।’

বিজ্ঞাপন

সূত্র আরও জানিয়েছে, হলে কোনো প্রডাক্টের ক্যাম্পেইন করতে এলে এই দুই নেত্রী তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে বোরো প্লাস নামে একটি কোম্পানি হলে ক্যাম্পেইন করতে আসে। সেখান থেকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নেন।

সরেজমিনে হল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হলের বাইরে ফুসকা, তরি-তরকারি, চাসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। প্রত্যেক দোকানদারকে প্রতিদিন ১৫০টাকা দিতে হয় বলে তারা স্বীকার করেছে। কয়েকজন দোকানদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন লাইনম্যান আছে। সে প্রতিদিন টাকা তুলে। নেত্রীরা এই টাকার ভাগ পায়।’

কুয়েত মৈত্রী হল প্রশাসন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এসব অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিজেদের অসহায়ত্বও প্রকাশ করেন। হল প্রশাসনের উধ্বর্তন একজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হলের প্রতিটি কাজে এইসব (চাঁদা দাবির) কারণে হলের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তাদের কারণে হলে কর্মচারী নিয়োগও দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কর্মচারীদের কাছ থেকে নেত্রীরা তিন লাখ-চার লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের সন্তানদের চাকরিতে প্রবেশে করানোর অফার দেন। হল কর্তৃপক্ষ অনেকবার নেত্রীদের ডেকে বুঝিয়েছেন কিন্তু তারা এইসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।’

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের অভিযুক্ত দুই নেত্রী। অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আমাদের হলে তো কোনো পার্লারই ছিল না। দেড়/দুই মাস আগে তা হয়েছে। এরকম হলে তো তখনই শুনতেন।’

বিজ্ঞাপন

ক্যান্টিনে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হলের প্রভোস্ট আর ডাইনিং কমিটির সঙ্গে কথা বলুন। আমি কিছু জানি না।’

পার্লারে চাঁদা দাবির বিষয় অস্বীকার করে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা বলেন, ‘না, কে বলছে?’ অভিযোগ উঠেছে এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ দিয়েছে কে, একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ করবেন সেটা তো আমরা মানব না।’ এসময় অন্য অভিযোগগুলোও তিনি অস্বীকার করেন।’

বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল প্রাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. শবনম জাহান ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি।

চাঁদা দাবির বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনও কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

সারাবাংলা/কেকে/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন