বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল নাকি নির্বাচনী কেন্দ্র!

January 18, 2018 | 8:25 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ১৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় আজিমপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আত্মীয়কে নিয়ে আসেন মেরিনা বেগম। কিন্তু সেখানে ঢুকেই তিনি অবাক হয়ে যান! নিজের অজান্তেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘এটা কি হাসপাতাল? চিনতেই তো পারছি না!’

মেরিনা বেগমের মতোই ৫৫ বছরের ফয়জুল ইসলাম। তার ভাতিজাও হাসপাতালে ভর্তি। শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে আসা ফয়জুল ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এতদিন গ্রামে-গঞ্জে দেখিছে নির্বাচনের সময় এভাবে পোস্টার লাগানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে এভাবে পোস্টার লাগানো জীবনে দেখিনি। ঢামেকে এসে সেটাও দেখলাম।’

বিজ্ঞাপন

পেশায় শিক্ষক ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালের পরিবেশ যদি এমন হয়, তাহলে কী করে হবে? পুরো হাসপাতালের দেয়াল জুড়ে, সামনের খোলা অংশে রশি টাঙিয়ে পোস্টার ঝোলানো হয়েছে। এগুলো কি দেখার কেউ নেই? একটা হাসপাতালের পরিবেশ এমন হয়?— ক্ষোভের সঙ্গে বলেন ফয়জুল ইসলাম।’

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আপনি জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখেন, সেখানে ‘জরুরি বিভাগ’ লেখাটাই প্রায় ঢেকে গেছে, যেটুকু খালি আছে সেটুকুও হয়তো দু’দিনের মধ্যে ঢেকে যাবে।’

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, পুরো চত্বর জুড়ে নির্বাচনী ব্যানার-ফেস্টুনে ছয়লাব। কেবল চত্বরই নয়, হাসপাতালের ভেতরেও পোস্টার টাঙানো। এতে করে চিকিৎসকরাও বিব্রত-বিরক্ত।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা চলছে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার কারণে সব সময় ক্যাম্পাস শ্লোগানমুখর থাকায় তাদের লেখা-পড়াতেও ক্ষতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ২৭ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হবে। তাই ঢোকার মুখ থেকে শুরু করে পুরো হাসপাতাল জুড়েই শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। কেবল দেয়াল নয়, জরুরি বিভাগের সামনের খোলা জায়গায় রশি টাঙিয়ে সেখানেও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত পোস্টার।

গত ডিসেম্বর থেকেই চলছে এসব পোস্টার টাঙানোর কাজ। শুরুতে এত বেশি ছিল না। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পোস্টারের পর পোস্টার লাগছে হাসপাতালটিতে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, এর ফলে হাসপাতাল তার নিজস্বতা হারিয়েছে। আমরা চিকিৎসকরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। ওদের কাছে আমরা অসহায়।

কিন্তু যারা এসব পোস্টার লাগিয়েছেন তাদের কাছে এটা যেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সভাপতি প্রার্থী মো. রমিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৭/৮ বছর পর আমাদের চতুর্থ শ্রেণির নির্বাচন হচ্ছে। তাই প্রচার একটু বেশি।’

একই কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. শিপন মিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে, আনন্দে আনন্দে একটু বেশিই পোস্টার লাগানো হচ্ছে। মাত্র কয়েকটা দিনই তো। আবার খুলে ফেলা হবে।’

হাসপাতালের একাধিক বর্ষীয়ান চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, এটা কোনোভাবেই একটি হাসপাতালের পরিবেশ হতে পারে না। হাসপাতাল কী করে নির্বাচনী কেন্দ্রের মতো হতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই সূর্যের আলো নেই। তার ওপর এসব পোস্টারের কারণে দুপুর থেকেই হাসপাতাল অন্ধকার হতে শুরু করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোস্টার টাঙানো রশি নিচে নেমে এসেছে, হাঁটতে পারছি না আমরা। কিন্তু কাউকে কিছুই বলার নেই। নির্বাচনের কারণে প্রার্থীরা তাদের নিয়মিত কাজেও ঠিক মতো সময় দিতে পারছে না। এতে করে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পাসে শ্লোগান এবং রাতভর মিছিল-মিটিংয়ের কারণে তাদের লেখা-পড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিদ্যুৎ কান্তি পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

হাসপাতালের পরিবেশ এমন হতে পারে কিনা?— প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য না। হাসপাতালের পরিবেশের জন্য এটা ক্ষতিকর। আমরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচারণা চালাতে বলেছি।’

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন