বিজ্ঞাপন

১২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট অর্থনীতি সমিতির

May 26, 2018 | 12:41 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এটি অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট চেয়ে আড়াইগুন বেশি। বিকল্প বাজেট প্রস্তাবে মোট বাজেটের ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা আসবে রাজস্ব আয় থেকে। এর মধ্যে সরাসরি রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ৭ লাখ ২৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, রাজস্ব বোর্ড বর্হিভূত কর ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ঘাটতি দেখানো হয়েছে।

শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ বাজেট পেশ করেন। এ সময় সংগঠনের সহসভাপতি এজেডএম সালেহ, অধ্যাপক হান্নানা বেগম, সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এফসিএ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবুল বারকাত বলেন, ‘বরাবরের মতোই এবারের বাজেটের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ ও দুর্বল দিক হলো সময়মত এবং মানসম্মত বাস্তবায়ন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভাগকে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। অন্যথায় তাদের শাস্তির বিধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নে আমরা সংবিধানের বিধানসমৃহকে ভিত্তিহিসিবে ধরে নিয়েছি।’

প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেপে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এই বরাদ্দের ৫৮ শতাংশ অর্থ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ২ লাখ ৫২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, জনপ্রশাসন খাতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৮ হাজার কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ৮৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ৭২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত ঘাটতি বাজেটের অর্থ বৈদেশিক ঋণের পরিবর্তে নতুন কয়েকটি খাত থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। খাতগুলোর মধ্যে বন্ড বাজার থেকে ৪৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ লাখ কোটি টাকা, দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ ২০ হাজার কোটি টাকা এবং ৬০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঘাটতি মোকাবেলা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ লাথ ৬৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৬ সালে মৌলবাদের অর্থনীতির নীট মুনাফা ৩ হাজার ১ট২ কোটি টাকা, দেশের মূল অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশ হলেও মৌলবাদের অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা ৯ থেকে ১০ শতাংশ। গত ৪০ বছরে দেশে মৌলবাদের অর্থনীতির নীট মুনাফা ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ জঙ্গিত্ব যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরুদ্ধ, সংবিধান বিরুদ্ধ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বিরুদ্ধ তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক – অর্থনীতিক দর্শন বিনির্মাতাদের অবশ্যই এ বিষয়ে গুরুত্বনদিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ বলা হলেও দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৫ লাখ।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল অসংক্রামক রোগের বিস্তৃতি বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছর ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যাচ্ছে। তাই প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আবুল বারকাত বলেন, স্বাধীনকতার পর ১৯৭২ সাল থেকে এখন এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪/১৫ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার পেয়েছে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকার মত। অথচ বাংলাদেশে কালো টাকার পারিমাণ জিডিপির ৮২/৮৩ শতাংশ। সে হিসেবে এটা ১৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ফলে কালো টাকা থেকে সরকার সাত লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনা সম্ভব।

আবুল বারকাত বলেন, বর্তমানে দেশে বড়জোর ১০০ জন ব্যক্তি বছরে ১ কোটি টাকা অথবা তার বেশি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কর দেন। বাস্তবে এই সংখ্যা হওয়ার কথা কমপক্ষে ৫০ হাজার জন। যেখান থেকে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব।

সারাবাংলা/জিএস/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন