বিজ্ঞাপন

২৩ জুন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন

May 23, 2018 | 2:45 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হবে আওয়ামী লীগের আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ১০ তলাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এ উপলক্ষ্যে বুধবার ভবনটির নির্মাণকাজের সবশেষ পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

বুধবার (২৩ মে) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নতুন কার্যালয় পরিদর্শন শেষে ওবায়দুল কাদের এবং গণপূর্তমন্ত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দেন এবং ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সঙ্গেও কথা বলেন।

এ ব্যাপারে ভবনটির নির্মাণ তদারকির কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী ইমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ভবনটির উদ্বোধন করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমাদের।

বিজ্ঞাপন

গত এপ্রিলে ভবনটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা থাকলেও কাজ শেষ না হওয়ায় পেছানো হয়েছে উদ্বোধনের সময়।আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ১০ তলা একটি ভবন। যার নির্মাণ কাজ শেষ এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজানো-গোছানো।

আধুনিক এই ভবনটির ছাদে বসছে হেলিপ্যাড, থাকছে কার লিফটসহ ভূমিকম্প ও অগ্নি প্রতিরোধে বাস বার ট্রাঙ্ককিং (বিবিটি) ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ সভাপতির জন্য রবাদ্দকৃত রুমটি ডাবল গ্লাসে বুলেট প্রুফড থাকবে। এ ছাড়াও ভবনটিতে থাকছে বেশ কয়েকটি কনফারেন্স হল, মিটিং রুম এবং নামাজের জায়গা।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ১৭মার্চ ভবনটির উদ্ধোধনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা ছিলো। তা পিছিয়ে পরে ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হবে, এমনটাই জানাচ্ছেন দলীয় সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করবেন। এ লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা অবশিষ্ট কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন।

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনের লিফট বসানো নিয়ে কিছু জটিলতার সূত্র ধরে উদ্বোধন কাজ কিছুটা দেরি হলেও এখন কাজ দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে।

ভবনে বসছে মোট তিনটি লিফট। যার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ থাকবে। বাকি দুটোর মধ্যে একটা সাধারণ এবং অন্যটি হুইলচেয়ার যুক্ত হবে। যাতে বর্ষীয়ান নেতাকর্মীরাসহ প্রতিবন্ধীরা উঠানামা করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

ভবনটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম মেনে তৈরি, এমনটা জানিয়ে নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলেন, চারিদিকে আলোবাতাস নিশ্চিত করতে ভবনের সবদিকেই দেয়ালের পাশে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। ভবনের জন্য বরাদ্দ করা জায়গা ছেড়েই তা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ভবনটির নিমাণের তদারকির কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার ইমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমদানিকৃত লিফটগুলো পোর্ট থেকে ছাড় করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এখন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আশা করি এপ্রিলেই উদ্বোধন করা হবে এই ভবন।

ভবনটির বিশেষত্ব নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইমান হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এটি শতভাগ রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করছি। কোথায় কোন বিন্দুমাত্র ফাঁকফোকর নেই।

বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফিট এবং পেছনের দিকে ১৭ ফিট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে তারা চাইলেই ক্ষমতাবলে অনেক কিছু করতে পারত। কিন্তু তেমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। এমনকি ভবনের তিনপাশেই আমরা নিজের জমি ছেড়ে দিয়ে ফাঁকা জায়গা রেখে দিয়েছি। এটি আওয়ামী লীগের অনুভূতির ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও অনুভূতি জড়িয়ে এর সঙ্গে। আমরা তার নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি।

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার এব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ভবন নির্মাণে রাজউকের নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে যেনো কোনো ব্যত্যয় না হয়। আমরা সেটাই করেছি। সম্পূর্ণ রুলসের মধ্যে থেকে সর্বাধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম এ ভবনটি তৈরি করা হয়েছে, বলেন এই প্রকৌশলী।

ভবন নির্মাণের ব্যয় নিয়ে কিছুটা বেড়েছে সে কথা স্বীকার করে তিনি জানান, ভবন তৈরির আগে ১৫ কোটি টাকারও কিছু বেশি বাজেট ছিল। এখন তা কিছুটা বেড়েছে। আর তার একটাই কারণ নির্মাণ শিল্পে খরচ বেড়ে যাওয়া।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভবনটিতে পার্কিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র দুটি ফ্লোর (তলা) রয়েছে। একটি রয়েছে গ্রাউন্ড ফ্লোর (নিচতলা) এবং অপরটি আন্ডার গ্রাউন্ড (মাটির নিচের তলা)। আর আন্ডার গ্রাউন্ডে পার্কিংয়ে যাওয়ার জন্য থাকবে কার লিফট। যে কোনো গাড়ি এসে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকে লিফট দিয়ে নিচে যাবে। ভবনের উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব কোণে হেঁটে উপরে ওঠার জন্য রয়েছে দু’টি সিঁড়ি। কার্যালয়ে পানি সরবরাহের জন্য থাকছে উপর-নিচে দুটি স্থায়ী রিজার্ভড ট্যাংকি।

ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড তৈরি হবে। এখানে সরাসরি হেলিকপ্টার অবতরণ করবে। দ্বিতীয় তলায় ৩৫০ জনের বসার ব্যবস্থায় তৈরি হচ্ছে কনফারেন্স হল। তৃতীয় তলায় হবে আরেকটি কনফারেন্স হল। এখানে ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। তিনতলার সামনের অংশটা ‘ওপেন স্কাই টেরাস’। অনেকটা বাসার ড্রইংরুম বা পাঁচতারকা হোটেলের আদলে করা হবে এই অংশ। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি থাকবে চা-কফি খাওয়ার আয়োজন। ভবনের চার ও পাঁচতলায় হবে বিভিন্ন কার্যালয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি থাকবে সহযোগী এবং অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। ছয়তলায় ছোট ছোট একাধিক কনফারেন্স ও মিটিং রুম করা হচ্ছে। সাত, আট ও নয়তলায় নেতাদের রুম বরাদ্দ থাকবে। দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের জন্যও স্বতন্ত্র রুম বরাদ্দ থাকবে। কমপক্ষে ২৫ জন বসতে পারে এমন আরও একটি কনফারেন্স রুম থাকবে আটতলায় এবং নয়তলায় ছোট পরিসরে থাকবে আরেকটি মিটিং রুম।

প্রকৌশলী জানান, ভবনটিতে কার্টেন ওয়াল ও থাই অ্যালুমিনিয়ামের টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের সামনের দেয়ালের দুই পাশ কাচ দিয়ে ঘেরা । আর মাঝখানটি সিরামিকের ইটের বন্ধনে গড়ে উঠেছে।

এর সামনের দেয়ালের দুই থেকে তিনতলা পর্যন্ত সাইনবোর্ডের দৃশ্যমান থাকবে। সাইনবোর্ডের বামে ঠিক মাঝখানে থাকবে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার’ ছবি, ডানে লেখা থাকবে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। আর ডানপাশের নিচে থাকবে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। সাইনবোর্ডের নিচে ডানপাশে (পূর্বদিকে) কনক্রিট দিয়ে বানানো হবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের ছবি। আর পশ্চিম পাশের দেয়ালে (পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে) লেখা থাকবে দলের চার মূলনীতি। নয়তলা ঘেঁষে লেখার উপরে থাকবে ‘অসাম্প্রদায়িক আর নিচে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’লেখা থাকবে এর বরাবর নিচে ছয়তলায় লেখা থাকবে ‘গণতন্ত্র এবং পাঁচতলায় উল্লেখ থাকবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। একইভাবে পূর্ব পাশের দেয়ালে (পূর্ব-দক্ষিণ কোণে) উপর থেকে নিচে অক্ষর বিন্যাসে ভাষা আন্দোলন ’৫২ এবং ’৭১ মুক্তিযুদ্ধ শব্দ দুটি।

ভবনের সামনে-পেছনে ছেড়ে দেয়া জায়গায় বাগান থাকবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ফ্লোরে বুলেট প্রুফ ডাবল গ্লাস লাগানো হবে। ৮ম ফ্লোরেই তার জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। এর ঠিক নিচের তলায় সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষের কক্ষ।

ভবনটির স্ট্রাকচার ডিজাইন এবং তৈরির কাজ করছে ‘দি ডিজাইনারস অ্যান্ড ম্যানেজারস’নামের একটি বেসরকারি ফার্ম।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের নিজস্ব ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই ২০১৬ পুরনো ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। সেপ্টেম্বরে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

২০১৭ সালের মধ্যেই ভবনটির কাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। গত বছর আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিস্থাপন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন