বিজ্ঞাপন

২৪০০০০ আটকের মিশনে পুলিশ, টার্গেটে আ’লীগ-জাপা-জামায়াত-বিএনপি

December 10, 2018 | 3:05 pm

।।জামশেদ নাজিম, বিশেষ সংবাদদাতা।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও সহিংসতামুক্ত রাখতে সারাদেশে দুই লাখ ৪০ হাজার জনের একটি তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে তাদের আটক করে একটি সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষেই এই অভিযান। দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানাচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ও ভোট কেন্দ্রকেন্দ্রিক সহিংসতা ছড়াতে পারে, ভোট কেন্দ্রে হামলা ও ভোটারদের ওপর জোর খাটাতে পারে এমন সব ব্যক্তিদের এই তালিকায় আনা হয়েছে। সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থার করা পৃথক তালিকা ধরে একটি সমন্বিত তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে সারা দেশে এমন ব্যক্তির সংখ্যা দুই লাখ ৪০ হাজার দাঁড়িয়েছে বলে জানায় সূত্র।

সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক তালিকায় এ সংখ্যা আরও বেশি ছিলো। তবে সবগুলো তথ্য যাচাই বাছাই করে চুড়ান্ত তালিকা প্রনয়ন করে পুলিশ সদর দফতর।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ চূড়ান্ত হওয়ার পর এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের ধর-পাকড় শুরু হবে।

নির্বাচনী প্রচারনায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকরা মাঠে থাকবেন। তবে তাদের মধ্যে যারা সহিংস কিংবা প্রতিপক্ষর ওপর হামলা করতে পারে এমন রয়েছেন, তাদেরকেই চিহ্নিত করে আটক করা হবে।

নিবার্চন কমিশনের তরফ থেকে এই আটকাভিযানের পক্ষে সম্মতি রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে ওই তালিকা পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের প্রতিটি ইউনিট প্রধান ও পুলিশ সুপার বরাবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
ফেনী জেলার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর সরকার সারাবাংলাকে জানান, নিরাপদ ও সহিংসা প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন থেকে পুলিশ সদর দফতর হয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা এসেছে। তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুটি ধাপ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন থেকে ভোটগ্রহণের আগের দিন এবং ভোটগ্রহণের আগের রাত থেকে ভোটগ্রহণের দিন ও রাতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তারা।

একই সঙ্গে নির্বাচনী ফলাফলের প্রবর্তি সময়ও খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকতা। তিনি আরো বলেন, ভোটগ্রহণের আগের রাতে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র কেন্দ্রিক কিছু নেতা কর্মী আছেন যাদের নেতৃত্বে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট বক্স ছিনতাই কিংবা ভোট কেন্দ্রে হামলার আশংঙ্কা থাকে। ওই সব ব্যক্তিদেরই মুলত মাঠ থেকে রাখা হবে, বলেন ওই কর্মকর্তা।

প্রতিটি কেন্দ্র ধরে ধরে সম্ভব্য হামলারীর নাম ঠিকানা, কোন দলের সমর্থক ও কার জন্য ভোট কেন্দ্রে হামলা করতে পারে, তা উল্লেখ রয়েছে এই তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

গড়ে দেশের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে অন্তত ৬ জন করে নাম রয়েছে। কোনও কোনও ভোট কেন্দ্রে ৭ থেকে ১০ জনের নামও রয়েছে বলে জানায় সূত্র।

এই তালিকায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কর্মীদের নাম রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার নেতা কর্মী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির। বাকি সবাই বিএনপি, জামায়াতসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী।

আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে চিরুনী অভিযানের মাধ্যম এসব তালিকার সবাইকে গ্রেফতার করা হবে এমনটাই টার্গেট পুলিশের।
অতীতের বিভিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ, বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা মামলার আসামি ও তাদের সাম্প্রতিক সময়ের কার্যকলাপ নজরে রেখেই এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ড অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় নদী বন্দর এলাকায় এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন নৌ-বাহিনীর সদস্যরা।

তালিকার বিশ্লেষণে দেখা গেছে- সারাদেশে আটকের জন্য চিহ্নিতদের শীর্ষে রয়েছে চট্টগাম ও রাজশাহী বিভাগ। এরপর ঢাকা মেট্রপলিটন এলাকা।

নির্বাচনের আগে এমন অভিযান সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো প্রকার সহিংসতা করতে না পারে, ভোটের দিন ভোটাররা যেনো সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে পুলিশ।

নিজের এলাকার কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, নির্বাচনের আগে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি ভোট কেন্দ্র কারা দখল করতে পারে হামলা করতে পারে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারেই তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেশ ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই যেকোনো উৎসব কিংবা আয়োজনে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে, এমন মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচন একটি বড় উৎসব, সে উৎসবে থাকে পক্ষ-বিপক্ষ। তারা যেনো একে অপরকে কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে আমরা সেদিকে নজর রেখেই একটি সুন্দর নির্বাচনের আয়োজন করতে আইন প্রয়োগ করছি, বলেন আসাদুজ্জামান মিয়া।

সারাবাংলা/জেএন/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন