বিজ্ঞাপন

৪ মাসেও শুরু হয়নি সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প, বিপাকে ২০ হাজার জেলে

October 19, 2018 | 9:46 am

।। জামাল হোসেন বাপ্পা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

বাগেরহাট: সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ বনকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে এ বনের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ২০ হাজার জেলে ও বাওয়ালী। কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে অভয়ারণ্য ঘোষণার কারণে বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ জীবিকার অভাবে গত চার মাস ধরেই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উপজেলার বনসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ও খালের পাশে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো পড়ে আছে। কোনো কোনো নৌকা উঠিয়ে রাখা হয়েছে রাস্তায়।

কথা হয় চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিনের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৫ বছর বয়স থেকেই সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরে জীবিকা চালাই। কিন্তু গত চার মাস ধরে বনের মধ্যে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বেশ কিছুদিন চলেছি। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে এখন খুবই সমস্যায় আছি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দাদন হিসেবে নেওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার টাকার জন্য এখন মহাজনরা চাপ দিচ্ছে। কিভাবে টাকা ফেরত দেবো, তা ভেবে পাচ্ছি না।’

বিজ্ঞাপন

জেলে মামুন আকন বলেন, ‘সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ অঞ্চল অভয়ারণ্য ঘোষণার পর ২৭ শতাংশ এলাকায় মাত্র দুইশ থেকে তিনশ জেলে মাছ ধরতে পারে। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন অন্য জেলেরা। বর্তমানে সবাই অভাবের মধ্যে রয়েছে। অথচ চাঁদপাই রেঞ্জের মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বনবিভাগ।’

তিনি আরও বলেন, অভয়ারণ্য ঘোষণার পর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সপ্তাহখানেক দিনমজুরের কাজ করি। কিন্তু ওই এলাকায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি নেয়নি। ওখানকার শিক্ষকরা বললেন, ভর্তি নেওয়া যাবে না। আপনারা এখানে এসেছেন কাজ করার জন্য, আবার কখন চলে যাবেন; তাই আমরা ভর্তি নিতে পারব না। এরপর ফিরে এসেছি বাপের ভিটায়।

চালিতা বুনিয়া গ্রামের জেলে রেজাউল বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভালোভাবেই জীবন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বনে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় খুবই বিপদে পড়েছি। মহাজনের কাছে ৮০ হাজার টাকা দেনা।’

বিজ্ঞাপন

অন্যান্য এলাকার মতো শরণখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যও কমিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান আল আমিন, রেজাউল ও মামুন আকনের মতো অন্য জেলেরাও।

আরও পড়ুন: অজগরটি ফিরে গেল সুন্দরবনে

আরও পড়ুন: ‘সুন্দরবন রক্ষায় ১০ মাসেও কোনো জবাব মেলেনি সরকারের তরফ থেকে’

সুন্দরবন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জেলেদের পাশাপাশি স্থানীয় মৎস ব্যবসায়ীরাও এ পরিস্থিতিতে সমস্যার মুখে পড়েছেন। শরণখোলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাছ ধরার জন্য জেলেদের সুন্দরবনে পাঠাতে গেলে দাদন দিতে হয়। ওই দাদনের একটি অংশ পরিবারকে দিয়ে জেলেরা সুন্দরবনে মাছ শিকারে যায়। এ অবস্থায় শতাধিক জেলের কাছে আমার প্রায় ২১ লাখ টাকা দাদন দেওয়া রয়েছে। আমার কাছেও আবার অন্য বড় কারবারিরা টাকা পাবে। গত তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মুন্সি বলেন, ‘চার মাস ধরে স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য কেউ কেউ এরই মধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় পাড়ি জামিয়েছেন। যারা আছেন, তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের জেলেদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।’

এসব বিষয়ে সুন্দরবনের (পূর্ব) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে সুন্দরবন পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভায়রণ্য ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব বেকারদেরকে পুনর্বাসনের জন্য ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প আসছে।’

এই বন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি লাইভলিহুড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বনজীবীদের পুনর্বাসনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলেদের কর্মসংস্থানের সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ জানান মাহমুদুল হাসান।

সারাবাংলা/জেডএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন