বিজ্ঞাপন

৫ বছরেও কেনা হয়নি বিএসএমএমইউ’র লিনিয়ার মেশিন!

February 7, 2019 | 10:24 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ৫ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার রোগীদের রেডিও থেরাপি মেশিন (লিনিয়ার এক্সিলারেটর) কেনার জন্য ৫ কোটি টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ৫ বছর পার হয়ে গেলেও আজও সেই মেশিন কিনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সারাবাংলাকে উপাচার্য জানিয়েছেন, মেশিন কেনা হচ্ছে। কিন্তু সেটা কবে নাগাদ তার জবাব দিতে পারেননি। আর ক্রয় কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন না।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, ‘মেশিন যে কেনা হচ্ছে, সেটা তো আমরাও জানি, কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। তারা পুরানো মেশিন ৫ কোটি বেশি টাকা দিয়ে কিনছে, এইটাই তো আমাদের প্রশ্ন।

সূত্র জানায়, লিনিয়ার মেশিন কেনার জন্য ২০১৭ সালের জুন মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। শর্ত পূরণ করে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমমানের মেশিন প্রায় ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন কিনতে টেন্ডার আহ্বান করে বিএসএমএমইউ। টেন্ডার মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অসন্তোষ ও জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ক্রয় সংক্রান্ত স্বচ্ছতা আনয়নে ও জটিলতা নিরসনে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তদন্ত কমিটি পূর্বের টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের সুপারিশ করে। সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেন্ডার সংক্রান্ত কারিগরি উপ-কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এত কিছুর পরও সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছুই হয়নি। এখনও বেশি দামে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে তৎপর ক্রয় কমিটি।’ তিনি বলেন, ‘মেশিন কেনা হবে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের জন্য। কিন্তু উপ-কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিব দুজনেই মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কারিগরি উপ-কমিটির তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বেশি দামে ওই নির্দিষ্ট কোম্পানির মেশিন কিনতে সব সদস্যকে চাপ দেওয়া হয়।

একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, লিনিয়ার মেশিন ক্রয়-প্রক্রিয়ার একেবারে শুরু থেকে মারাত্মক অনিয়ম এবং বিশাল অংকের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ক্রয় কমিটি তাদের পছন্দের কোম্পানির কাছ থেকে মেশিনটি কেনার জন্য যাবতীয় অপতৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে। একের পর এক কমিটি হয়েছে, দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে পুরনো মডেলের মেশিন কেনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, ভিসি-প্রোভিসির হাতাহাতি হয়েছে, পত্রিকায় প্রচুর রিপোর্ট হয়েছে, কয়েকজনকে চেয়ারও ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু সেই লিনিয়ার মেশিনটি এখনো কেনা হয়নি।

সূত্র জানায়, পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার পর টেন্ডারের সব শর্ত মেনে দেশের মাত্র দুটি কোম্পানি এতে অংশ নিতে সমর্থ হয়। এরমধ্যে একটি কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দরপত্রে উল্লিখিত শর্ত পূরণে সক্ষম মেশিনের দাম প্রস্তাব করে ২১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।

অন্যদিকে, অন্য কোম্পানির প্রস্তাবিত দাম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা কমে উন্নতমানের টেন্ডারের শর্ত পূরণে সক্ষম মেশিন সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়।

বিজ্ঞাপন

অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে উন্নতমানের ক্যান্সার চিকিৎসার মেশিন সরবরাহ করায় ক্যান্সার হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ওই কোম্পানির কাছ থেকে লিনিয়ার এক্সিলারেটর ক্রয় করে থাকে বলে জানা গেছে। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে লিনিয়ার কিনতে আগ্রহী।

এতে করে অপেক্ষাকৃত স্পল্পমূল্যে মেশিন সরবরাহে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় কমিটিকে পিপিআর রুল অনুসারে ক্রয় কমিটিকে ক্লিনিক্যাল ভিজিটের আমন্ত্রণ জানায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি এবং কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটির চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা বেশি দামে লিনিয়ার কিনতে সম্মত করিয়েছেন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ক্রয় কমিটির সভায় আগামী ১ অক্টোবর বেশি দামে মেশিন সরবরাহ করতে তাদের পছন্দের কোম্পানিকে ক্রয় আদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

লিনিয়ার মেশিন কেনার কতদূর অগ্রগতি হলো, জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেশিন কেনা তো হচ্ছে।’

ক্রয় কমিটি জটিলতা কাটলো কি না, জানতে চাইলে উপাচার্য পাল্টা প্রশ্ন করেন, কী কী জটিলতা ছিল? পরে তিনি বলেন, ‘দুইটি কোম্পানি বিট করেছে। ক্রয় কমিটি, টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন কমিটি যেগুলোকে দেখেছে। একটা কোম্পানি সব ধরনের শর্ত পূরণ করেছে।’

কোন কোম্পানি শর্ত পূরণ করেছে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না। তবে একটি কোম্পানিই করেছে। তাদেরই ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে।’ তাহলে শিগগিরই মেশিন পাওয়া যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও বলেন, ‘সিডিউল টাইমের মধ্যেই পাওয়া যাবে।’

সিডিউল টাইম কবে নাগাদ, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এটা তো ক্রয় কমিটি জানে।’

পরে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আরও বলেন, ‘তবে এর যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এটা তো অত্যন্ত স্পর্শকাতর জিনিস, তার জন্য সব ঠিকঠাক করার জন্য আমরা ভিজিট করেছি, দেখতেছি। ‘তিনি বলেন, ‘এমনিতে তো পত্রপত্রিকায় অনেক কিছুই উঠতেছে যে, এর মধ্যে অনেক দুর্নীতি হয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে। তো আমি আপডেটগুলা ওপরের লেভেলে জানিয়েছি যে, এই সিচুয়েশন, তারা আমাকে বলেছেন, যারা পাবেন না, তারা অনেক কিছুই লিখবেন, তুমি ঠিক থাকলেই হলো।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘প্রক্রিয়াগত দিক থেকে আমরা ঠিকই আছি। বাইরে যে যত কথাই বলুক, কোনো অ্যাজেন্সি যদি আমাদের চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে আমরা রেডি আছি জবাব দেওয়ার জন্য।’

লিনিয়ার মেশিন নিয়ে কথা বলতে চাইলে ক্রয় কমিটির প্রধান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলব না।’ বিষয়টি কারও সঙ্গেই কোনো কথা বলবেন না বলেও তিনি জানান।

সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন