বিজ্ঞাপন

৬ মাস আগেই ছাদ কেটে স্বর্ণ চুরির পরিকল্পনা

April 18, 2018 | 6:12 pm

। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকাঃ  গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটে আমিন জুয়েলার্সের স্বর্ণ ও টাকা চুরির পরিকল্পনা করা হয় ছয় মাস আগেই। ওই মার্কেটের  রিকনস্ট্রাকশন সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন চুরির প্রস্তাব দেয় জুয়েলার্সের নিরাপত্তারক্ষী সোবহানকে। তবে  জুয়েলার্স মালিকের দীর্ঘদিনের  আস্থাভাজন এই নিরাপত্তাকর্মী  প্রথমে রাজী না হলেও সাদ্দাম তাকে বুঝিয়ে রাজী করায়। এরপরেই তারা চুরির পরিকল্পনা শুরু করে।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গুলশান থানার অপারেশন অফিসার আমিনুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান,সাদ্দামের পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাদের কাজ শেষ হওয়ার ঠিক একদিন আগেই চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। আর জুয়েলার্সের শোরুম বরাবর ঠিক ওপরের ছাদের এক ফুট বর্গাকার অংশ বাকী রেখে পুরো ছাদ প্লাস্টার করা হয়।ছাদের ওই ফাঁকা অংশটুকু পানির একটি ট্যাংকি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) পুরো ছাদের প্লাস্টারের কাজ শেষ হয়। শনিবার রাতে সাদ্দাম মেশিন দিয়ে ছাদের রড কাটে। এরপর নিরাপত্তাকর্মী সোবহানই শোরুমে ঢুকে স্বর্ণ ও টাকা চুরি করে বেরিয়ে আসে। পরে শেষ রাতেই ছাদের ওই অংশ ঢালাই করে  প্লাস্টার করে দেয় সাদ্দাম।

বিজ্ঞাপন

সাদ্দাম চুরির মালামাল নিয়ে রোববার চাঁদপুরে চলে যায়। পরে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে গ্রামের বাড়ি থেকে সটকে পড়ে সে। আর সোবহান তার ভাগের মালামালসহ তার স্ত্রীকে গোপালগঞ্জে পাঠায়।

এর আগে গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, চুরির ঘটনায় সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুস সোবহানের স্বীকারোক্তির পর চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং গুলশানের শেওড়া এলাকা থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার করা হয়।

তবে জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের ৬৮৯ ভরি স্বর্ণ ও ২৪ লাখ টাকা চুরি হয়েছে। আর পুলিশ উদ্ধার করেছে ৪৯৮ ভরি স্বর্ণ ও ২০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বাকী স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বওে জানান মোস্তাক আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

পরে স্বর্ণ  উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এসআই ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, সোবহানকে নিয়ে প্রথমে তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের নীলফা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে কাউকে না পাওয়ায় বাগেরহাটের চিতলমারীতে মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গোপালগঞ্জের নীলফা গ্রামের তাদের এক দু:সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সোবহানের স্ত্রীকে আটক করা হয় । এসময় ২৫৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার অভিযানের সদস্য এসআই আলম জানান, মাওয়া ঘাট এলাকার আরেক আত্মীয়ের বাসা থেকে ২৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে তাদের টিম। এরপর এই দুই টিম মানিকগঞ্জ সদরের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালায়। সেখানেও কিছু না পেয়ে গুলশানের শেওড়া এলাকার আরেক আত্মীয়ের বাসা থেকে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে আরেক টিম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের সহযোগি চোর সাদ্দামের নানার বাসার চাউলের ড্রাম থেকে ২১১ ভরি স্বর্ণ ও ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন

গুলশান-২ ডিসিসি মার্কেটের ছাদ কেটে আমিন জুয়েলার্সের স্বর্ণ ও টাকা চুরির ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৮ বছরের বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাজী সিরাজুল হক।

বুধবার দুপুরে গুলশান থানায় আয়োজিত  সংবাদ সম্মেলনে আমিন জুয়েলার্সের মালিক কাজী সিরাজুল হক সাংবাদিকদের আরও  বলেন, সোবহান ১৮ বছর ধরে এই জুয়েলার্সে কাজ করে,সবাই তাকে বিশ্বাস করতো। এমনকি স্বর্ণ ও টাকা চুরির ঘটনার পরেও সোবহান সবার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখে একবারও মনে হয়নি যে সেই এই জঘন্য কাজটি করেছে।

আমিন জুয়েলার্সের মালিক কাজী সিরাজুল হক এসময় পুলিশের কাজের প্রশংসা করে বলেন, এই প্রথম দেখলাম পুলিশ এতোদুর এগিয়েছে। তারা মাত্র দুদিনের মাথায় বেশিরভাগ স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার করেছে। পুলিশের এতোটা সক্ষমতা বেড়েছে তা ভাবতেও পারিনি।

সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন