বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার পথচলা মসৃণ হোক

December 6, 2022 | 10:30 am

কামরুল হাসান নাসিম

ক’য়েক বছর আগের কথা। টানা বেশ কিছু দিন আর ঘুমোতে পারছিলাম না। সাংবাদিকতার ধর্ম খুঁজতে যেয়ে এমনটি হচ্ছিল। অতঃপর ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করলাম। ‘জার্নালিজম’ শীর্ষক ওই চলচ্চিত্রে সাংবাদিকতার রঙ কেমন হতে পারে, তা উপস্থাপন করে অবশেষে নিদ্রায় গেলাম। এখনও প্রায়শই ঘুম ভেঙ্গে যায়। উপলক্ষ, প্রায় সেই আগেরটাই। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর নীতি, সুনীতি ও কুনীতি পরখ করার অভ্যাসে আছি আর মন খারাপ করি।

বিজ্ঞাপন

নীতির নামে দেশের প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব কার্যালয়ে একটি গোপন কক্ষ আছে। না, এই কক্ষে সম্পাদক বসেন না। বসেন না প্রকাশকও। তবে তারাই বৈঠক করেন, সেখানে আড্ডার ছলে। আত্মকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের মাধ্যমে তাদের পথচলার কথিত স্লোগান, আমরা আছি তথ্য সরবরাহে !

সংবাদকর্মীদের মুক্তমত রাখার প্রধান অন্তরায় প্রকাশক তথা মালিক নামের মানুষগুলো। যারা নিজের কাছে এক বা একাধিক গণমাধ্যম রেখে দিয়ে বলতে চায়, আমরা শক্তিশালী! তাই তাদের মন ভাল থাকে। যে মন দিয়ে তারা রাজনৈতিক কায়দায় নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে সমৃদ্ধ করে। জিম মরিসন তাই একদিন বলেছিলেন, “যে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, সে মনকে নিয়ন্ত্রণ করে”।

মন তাই বিক্ষিপ্তাকারে সংবাদকর্মীদের প্রাণকোষকেও হলুদ করে। তখন অভিমানের সুরে এক বিদগ্ধজন গাইলেন, “কলম তরবারির চেয়ে শক্তিশালী ছিল কিন্তু তারপর জিহ্বা দখল করে নিল।”

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে একটার পর একটা সংবাদমাধ্যম গণমাধ্যমের বাজারে এসেই যাচ্ছে দেশে। “অনেক বেশি দরকারী তাগিদে প্রকাশনার এমন উৎসবের মিছিলে অকেজো লোকের অংশগ্রহণ বেড়েই যাচ্ছে।”-এমন মত সাংবাদিক কামরুল হাসান নাসিমের।

মানচিত্রভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার সুশাসন কায়েমে সংবাদমাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আজকের বাস্তবতায় মাত্র ৬টি সংবাদমাধ্যম বিবেক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে সাংবাদিকতার বিকাশকে সমৃদ্ধ করতে পারে। যদি তারা মানচিত্র প্রথায় বিশ্বাস করতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে তথ্য সরবরাহের কাজে থাকতে পারে। কিন্তু, সব ক্ষেত্রে তা কী হচ্ছে?

খোদ আমেরিকার মত রাষ্ট্রেও হচ্ছে না। লারা ট্রাম্পের সেই উক্তিটি আমাকে ভাবায়। তিনি বলেছিলেন যে, “আমাদের সকলকে অবশ্যই রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা করতে একত্রিত হতে হবে, বেশিরভাগ জাতীয় সংবাদ মাধ্যম এবং ধর্মান্ধদের অমানবিক বক্তব্য প্রচার করাটার কৃষ্টিকে অস্বীকার করতে হবে”।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশেও তো ঠিকই একই অবস্থা। লারার সুরেই ধ্বনিত হতে হয়! বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দলের নামে জামায়াতেবাদী দল একটা আছে। সেই দলের প্রচারণায় থাকাটাকে কী বলে? অতি আস্তিক শক্তির সখ্যতায় তাদেরকে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল করে দেখানোর যে চেষ্টা, এমন সংস্কৃতি সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিএনপি যেমন একটি রাজনৈতিক অপশক্তি আর তাদের সকল প্রকারের খবরাখবর তুলে ধরাটা সাংবাদিকতার শর্তকে পূরণ করে না, যখন তাদের রাজনীতি জনস্বার্থে নিষ্পত্তি নয় এবং রাষ্ট্রবিরোধিতার কাতারেও পড়ে। তাহলে সাম্প্রতিক সময়ে যে সকল সংবাদমাধ্যম তাদের কথিত সমাবেশগুলোর খবর পরিবেশনে যেয়ে বলছে, তাদের নেতাকর্মীরা চিড়া-গুড়-মুড়ি নিয়ে যোগ দিচ্ছে, আবার সত্যান্বেষী হয়ে দেখা যাচ্ছে যে, ডেকচির পর ডেকচিতে রান্না চলে বিরিয়ানী খাওয়ার ধুম-অথচ, তা তুলে ধরা হচ্ছে না। এত টাকার যোগান নিয়ে কেন কোনো প্রতিবেদন নেই? অথচ, কী সুন্দর করে রাজনৈতিক অপশক্তির তথ্য বা তাদের নামধারী নেতাদের বক্তব্য পরিবেশন করা হচ্ছে ! এই ধরনের সাংবাদিকতার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞায় পড়া উচিত ওই সকল গণমাধ্যমগুলোর।

“একজন দরিদ্র ঘাতকের চেয়ে একজন ভালো সাংবাদিক ভালো।” এমন তাগিদে বলাই যায় যে, সাধারণ জনশ্রেণির অজ্ঞতা তাদেরকে সংবাদমাধ্যমমুখী করায়- কিন্তু, তোমাকে শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদন তৈয়ার করে মানুষের পক্ষে কাজ করতে হবে। আজকের পৃথিবীতে অর্থবহ একটি গণমাধ্যমেরও কলংকের দাগ থাকবে, যখন তা প্রকাশকের স্বার্থ সংরক্ষণে জাগে, ক্ষেত্রবিশেষ চুপ থাকে বা আপস করে। এর বাইরে সেই সংবাদমাধ্যমের সব ভালটাকে পাঠক গ্রহণ করুক। সূক্ষ্ন ফাঁকি দিয়ে তারা কিছু ক্ষেত্রে পাঠক শ্রেণিকে বোকা বানাবে, কিন্তু তা মেনে নিয়েই বলতে হবে, এগিয়ে যাও, খুব ভাল হচ্ছে তোমাদের সাংবাদিকতা।

দার্শনিক ঈশ্বরমিত্র বলছেন, কথাসাহিত্য সাংবাদিকতার চেয়ে উৎকৃষ্ট পথ। দূরদৃষ্টি দিয়ে বলতে চাইলে, ধারাভাষ্য প্রদানের দিক বিচার করলে তা প্রমাণিত সত্য হয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিকতার প্রথম শর্ত, তোমার মন কে অনুসন্ধানী করে একাকিত্বের তীরে নিয়ে যাও। দ্বিতীয়ত, তোমার অবস্থান জনাকীর্ণ আলয়ে হয়েও তুমি একাই থাকবে। তৃতীয়ত, তুমি সত্যান্বেষী হয়ে তৃতীয় চোখ দিয়ে দেখতে ও বুঝতে চেষ্টা কর। চতুর্থত, তুমি সৃজনশীল হয়ে সাহিত্যের ভাষার রচনায় সিক্ত হয়ে প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তর খোঁজ। দেখবে, একটা প্রতিবেদন দাঁড়িয়ে যাবে, অতঃপর তা চলে যাক একটার পর একটা ডেস্ক পেরিয়ে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঈশ্বরমিত্র বলছেন, প্রত্যেকটি মুলধারার সংবাদমাধ্যম হল একটি পাউরুটির সেই স্লাইস, যা বাটার ও জ্যামযুক্ত, মজা করে খাও, অন্যান্য শুকনো স্লাইসগুলোর দিকে তাকিও না, পাউরুটির মালিক নিজের জন্য তা রেখেছেন।

সংবাদমাধ্যম ফলত এই গ্রহে ঈশ্বরের নীতি প্রণয়নে সচেষ্ট থেকে সেরাটা দিতে পারত। বাংলাদেশের গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম রয়েছে, যারা কিছুটা প্রচলিত সাংবাদিকতার বৈশ্বিক মান ধরে রাখার চেষ্টা করেও। কিন্তু, সে সংখ্যাটা নগণ্য। তবুও সবকিছুকে সুন্দর করে দেখতে চাইলে মন্দ লাগে না। কনফুসিয়াসও বলেছিল, সব কিছুরই সৌন্দর্য আছে, কিন্তু সবাই তা দেখে না।

সবাই অনেক কিছুই দেখে না, বোঝে না। সৌন্দর্যপিয়াসী দলের গোত্রটি অসাধারণ শ্রেণিভুক্ত মনুষ্য প্রাণেরা। যারা এও দাবী করবে, নারী সরবরাহ করে কেহ সম্পাদক হয়ে যাচ্ছে না তো? কোনো একটি রাজনৈতিক অপশক্তির মুখপাত্র হয়ে কোনো সংবাদমাধ্যম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে না তো? ব্যাবসায়িক হাতিয়ার হয়ে গণমাধ্যম কাজ করে যাচ্ছে না তো ?

প্রশ্ন করতে করতে থামতে বলা হবে। ঈশ্বর বলবেন, তুমি এবার থামো। এই সকল প্রত্যেকটি অসুখই রয়েছে তোমার দেশের গণমাধ্যমগুলোর। মাথা নিচু করে রেখে স্নান সেরে নেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া ভাল। এরপর বিকেল করে সারাবাংলায় রাখবো চোখ। ওরা লড়ছে! ওদের সবাই মাঝি। নৌকায় করে রওনা করেছে। পাঁচ বছর হল! গ্রীষ্ম যায়, বর্ষা যায়, শরত পেরিয়ে হেমন্তের অন্তিমক্ষণ জানান দেয়, নবান্নের উৎসবে এই সেদিনেও হেসেছি। অর্ধযুগে পা রেখে আসন্ন শীতের মহড়াকে ডিঙিয়ে নতুন বছরকেও ‘সারাবাংলা’ সু স্বাগত বলবে !

সারাবাংলায় প্রতিভাধর সংবাদকর্মীরা রয়েছেন। যারা ইতিহাস, সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি মানবসভ্যতার আধুনিক সড়কে অগ্রগণ্য পথিক হয়ে ধারা ভাঙ্গার মত সত্তাসমূহও। তাদের জন্য আমার অনেক ভালোবাসা। সে ভালোবাসায় খাদ নেই। ওরা জানে লড়তে। বিডিনিউজ২৪ যদি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হয়, সারাবাংলা যেন কিলিয়ান এমবাপ্পে! তবে, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। যা এমবাপ্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য! বৈশ্বিক পর্যায়ে সেরা হতে হলে তাকেও অন্তত দেড় যুগ ফুটবল খেলে যেতে হবে।

সারাবাংলার পথচলা মসৃণ হোক। শুভ কামনা !

সারাবাংলা/এজেড/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন