Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যাত্রা শুরু করল ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ মে ২০২৫ ২২:১১ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৫ ০৯:৫৫

‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ পাইলট প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

ঢাকা: সরকারি বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করেছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’।

সোমবার (২৬ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই কার্যক্রমের পাইলট প্রকল্প শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ‍্যোক্তরা এই সেবাগুলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রদান করবেন।

পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র কার্যক্রম শুরু করেছে এবং স্বল্প সময়ের মধ‍্যে নীলক্ষেত কেন্দ্রও কার্যক্রম শুরু করবে।

বিজ্ঞাপন

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে তৈরি এই সেবার উদ্বোধন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, নানাবিধ হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগটি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে।’

একইভাবে সেবার সহজ প্রাপ‍্যতা নিশ্চিত করতে এক ঠিকানায় প্রয়োজনীয় সকল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সেবাকেন্দ্র তৈরির বিষয়ে উদ্যোগ নিতেও আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেন তিনি। একইসঙ্গে এই সেবার আওতায় সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিতভাবে সেবার আপডেট ও সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে যতগুলে সেবা এর আওতায় আনা যায় সবগুলোকে দ্রুত নিয়ে আসা।’

এ সময় বিভিন্ন নাগরিক সেবার প্রসঙ্গ টেনে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এমন ব‍্যবস্থা আমাদেরকে অবশ্যই দাঁড় করাতে হবে যাতে জন্মগ্রহণ করা মাত্রই শিশুরা জন্মনিবন্ধন সনদ পেয়ে যায়। এটাই যেন হয় তার নাগরিক স্বীকৃতি।’

নাগরিক সেবা কেন্দ্রের পরিচালনা ও মালিকানা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারা নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নিবেন। সেবা মান বজায় না রাখলে লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ নাগরিক সেবা বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি সেবা প্রদানের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার একটি আন্দোলন—যার ভিত্তি প্রযুক্তি এবং চালিকা শক্তি স্থানীয় উদ্যোক্তারা। অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সম্প্রসারণশীল এই উদ্যোগ সারাদেশে নাগরিক সেবার আকর্ষণীয় রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবে।’

আইসিটি বিভাগের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘শূন্য বাজেটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করেই সামনে এগিয়ে চলা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই উদ্যোগের মাধ্যমে পোস্ট অফিসসহ অব্যবহৃত সরকারি স্থাপনাগুলোকে রূপান্তর করে আধুনিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসে পরিণত করা হবে এবং সেগুলো স্থানীয় উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত হবে।’

তিনি জানান, নাগরিকদের জন্য হাঁটা-দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত এই নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় উদ্যোক্তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা দিবেন।

এই মডেলটি যেমন, সরকারি সেবা নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করবে, তেমনি দেশের যুবসমাজ ও নারীদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে জানিয়ে ফয়েজ ত‍ৈয়‍্যব বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসার নীতিমালায় অনুপ্রাণিত ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে চালিত এই উদ্যোগ হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি।’

তিনি বলেন, ‘এই সেবার লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যা নাগরিকদের জন্য কার্যকর এবং সহজলভ্য ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করবে এবং একইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’

তিনি জানান, নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ‍্যোক্তা হবার জন‍্য প্রথম ধাপে আবেদনকারীদের মধ্য কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০ জন নারী ও পুরুষ অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করা হয়। তাদের ডিজিটাল লিটারেসি, গ্রাহক সেবা ও ডিজিটাল সেবা প্রদানে নিবিড় প্রশিক্ষণ শেষে ১০০ জন উদ্যোক্তাকে (৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ) সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, তথ‍্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।

সারাবাংলা/জিএস/এইচআই

নাগরিক সেবা বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস