Friday 13 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ, নেপথ্যে ‘উসকানি’ দেখছে প্রশাসন


১৬ এপ্রিল ২০২০ ২৩:৩২
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অভাবগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষকে উসকানি দিয়ে বিক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত দুইদিনে ত্রাণের জন্য কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসার পর প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্য পাবার কথা জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশজুড়ে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে প্রায় ২০ দিন ধরে কর্মহীন হয়ে থাকা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে আস্তে আস্তে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই চট্টগ্রাম নগরীতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও ত্রাণ দিচ্ছেন। এরপরও ত্রাণের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন অনেকে। নিম্ন আয়ের গরীব পরিবার, বস্তিবাসীর মধ্যে ত্রাণ নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সড়কে এসে বিক্ষোভ করছেন। এতে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে প্রায় হাজারখানেক নারীপুরুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নগরীর প্রবেশপথ কর্ণেলহাট এলাকায় সড়কে মানববন্ধন শুরু করেন। তাদের দাবি, তারা কেউ ত্রাণ পাননি। প্রায় একঘণ্টা সড়কে অবস্থানের পর পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।

স্থানীয় আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, “উত্তর পাহাড়তলী এবং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি করছেন, এমন অভিযোগ করে কয়েক’শ লোক মানববন্ধন শুরু করেন। এদের বেশ কয়েকটি পরিবারে পুলিশের পক্ষ থেকেও ত্রাণ গেছে। এরপরও তারা বিক্ষোভ করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে যেটা বোঝা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলরের প্রতিপক্ষরা তাদের ক্ষ্যাপিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে। কারণ, তাদের কাছে স্বজনপ্রীতির কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।”

উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের নিউ মনসুরাবাদ কলোনির বাসিন্দা জসিম উদ্দিন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলররা নিজেদের এলাকার ভোটার ছাড়া কাউকে ত্রাণ দিচ্ছেন না। আমরা রিকশা চালাতে পারছি না। সারাদিনে ৯০ টাকা- ১০০ টাকাও ভাড়া ওঠে না। এক মুঠো চালও ত্রাণ পাইনি। আমার বোনের পরিবারও পায়নি। আমরা না খেয়ে আছি।’

মানববন্ধন শেষ হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তে যান। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৌহিদুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুই কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা মানববন্ধনে গিয়েছিলেন তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা জানতে পেরেছি- বিএনপি নেতা রিপন, যুবলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন রুবেল, কসাই জসিম ও মুন্না নিউ মনসুরাবাদ কলোনি থেকে লোকজন নিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে। গত তিনদিন ধরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে। কাউন্সিলর জহুরুল হক জসিম ত্রাণ আত্মসাত করছেন, সরকার ত্রাণ দিলেও জেলা প্রশাসন সেগুলো রেখে দিয়েছে, চুরি করে চাল বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে- এমন অনেক ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে তাদের ক্ষুব্ধ করে তোলা হয়।’

‘অনেক পরিবারে অভাব আছে। কিন্তু একেবারে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে এমন পরিবার বেশি নেই। তাহলে তারা রাস্তায় নামল কেন? এর পেছনে আছে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ইস্যু। আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা। জেলা প্রশাসনের কাছে সরকারিভাবে ত্রাণ আছে শুধু চাল ও নগদ টাকা। কিন্তু লোকজনকে বলা হচ্ছে- আলু, তেল, পেঁয়াজ, লবণও নাকি সরকার ত্রাণ হিসেবে দিচ্ছে। এসব যখন জেলা প্রশাসন দিতে পারছে না, তখন মানুষকে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।’ বলেন তৌহিদুল।

দুই কাউন্সিলরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ৭০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।

উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল হক জসিম বলেন, ‘আমরা করপোরেশন থেকে ত্রাণ পেয়েছি ৩০০ প্যাকেটের মতো। কিন্তু ত্রাণপ্রার্থী হাজার, হাজার। যাদের মধ্যে তেমন অভাব নেই, তারাও ত্রাণের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। এর পেছনে রাজনীতি আছে।’

এর আগে নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই তক্তারপুল ও রাজাখালী বস্তি থেকে প্রায় হাজারখানেক নারীপুরুষ গিয়ে দু’টি স্পটে বিক্ষোভ করেন। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ত্রাণ দেওয়া হবে বলে গুজব ছড়িয়ে একটি মহল তাদের রাস্তায় নামায়। পরে তারা সরে যায়। ত্রাণ না পেয়ে বস্তির লোকজন বিক্ষোভ করে।’

উসকানি ত্রাণ বিক্ষোভ হত দরিদ্র