Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রাম জুড়ে নৃশংসতার ছাপ, এখনও গ্রেফতার হয়নি মূল আসামিরা


৩০ এপ্রিল ২০২০ ২২:১১ | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ২২:১৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ধ্বংসস্তুপের ওপর বসে বিলাপ করছিল ৭০ বছর বয়সী জাহানারা বেগম। তার একমাত্র ঘরটি পুড়ে ছাই করে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। চার লাখ টাকা খরচে ঘরটি বেঁধে ছিলেন। ছিলো নতুন আসবাবপত্রও। কিন্তু বর্বর হামলা তার সে ঘরকে করেছে ধ্বংসস্তুপ। ঘরের চারদিকে এখন পুড়ে যাওয়া টিন আর কয়লা। জাহানারার মতো আরও অনেকেই তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

বলা হচ্ছিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের উত্তর লক্ষীপুর হাজিরহাটি গ্রামের কথা। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাজিরহাটি, থানাকান্দি, সাতঘরহাটি ও গৌরনগর এই চারটি গ্রামে ১৯৮৬ সাল থেকে গ্রাম্য আধিপত্য নিয়ে চলে আসছে বিরোধ। এই বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ হয় ২০১১ সালে পার্শ্ববর্তী বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহমেদের যোগদানের মাধ্যমে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, কবির চেয়ারম্যান তার ব্যাক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য এই দাঙ্গা লাগিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল ওই গ্রামে চলে এই বর্বর হামলার ঘটনা। ওই হামলাই মোবারক নামে এক ব্যাক্তির পা কেটে হয়েছে মধ্যযুগীয় উল্লাস। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন পা নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সারা গ্রামে করেছে মিছিল। এমন নৃশংস ঘটনারা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে শুরু হয় তোলপাড়।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রাম জুড়ে ভয়াল নৃশংসতার ছাপ। কোথাও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও তাণ্ডব চালিয়ে তছনছ করা বসতভিটা। চালানো হয়েছে লুটতরাজ। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়।

স্থানীয়রা জানায়, কোথাও সারিবদ্ধ ভাবে ছয়টি, কোথাও দু’টি, আবার কোথাও একটি এমন করে প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ১২ এপ্রিলের ঘটনায়। এমন কি বাড়ির আশপাশে থাকা গাছপালাও তাদের আগুন থেকে রক্ষা পায়নি।

কথা হয় হামলায় দুই ঘর হারানো বৃদ্ধ শিশু মিয়ার সঙ্গে। তিনি ১২ এপ্রিলে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আধিপত্য নিয়ে কাউসার মোল্লা ও কাউসার মাস্টারের নেতৃত্বে পাঁচগ্রামের লাঠিয়াল বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় হাজিরহাটি গ্রামে। মুহূর্তে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তছনছ করে দেয় বাড়িঘর। আমার সারা জীবনের রোজগার ও তিন ছেলের আয়ের টাকা দিয়ে দুটি বসত ঘর তৈরি করেছিলাম। কয়েকশ লাঠিয়াল বাহিনী আমার দুটি ঘরে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘরে থাকা সব কিছু জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’

হামলায় পা হারিয়ে নিহত মোবারেকের ভাই জালালের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের উপর হামলার খবর শোনে দিশেহারা হয়ে ছুটলেও কিছু করার ছিল না। দূর থেকে ভাইয়ের আর্তনাদ শুনেছি কিন্তু এগিয়ে যেতে সাহস পায়নি। আমার ভাই জীবন বাঁচানোর জন্য অন্যের বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নিলেও সেখানেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। এই বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের মূল নায়ক কবির চেয়ারম্যান ও কাউসার মাস্টারকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আমি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

নিহত মোবারকের স্ত্রী সাফিয়া বলেন, ‘তারা আমার স্বামীর পা কেটে নিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনোজিৎ রায় বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি ও নিহত মোবারকের স্ত্রী বাদি হয়ে একটি মামলা হয়েছে। এ দুইটি মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।’

কবির চেয়ারম্যান গ্রাম পা কেটে উল্লাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোবারক মোবারক হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর