‘আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি না’
২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:০০ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৭
নীলফামারী: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি না। কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ যদি আমাদের খাওয়ায়, দাওয়াত দেয়, তাহলে আমরা খুশি হই। আমরা যদি এই মানুষদের ঘৃণা করতে না শিখি, তাহলে দুর্নীতির সংকট সহজে যাবে না।’
রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানি শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুর্নীতি অপসারণ আমাদেরই করতে হবে। নাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক সমাজ রেখে যেতে হবে।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি এমনও দেখেছি— একজন বাবা অত্যন্ত ধার্মিক ও সুফি ব্যক্তি, কিন্তু তিনি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে। এতে করে সমাজে খারাপ ও ভালো মিশে এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, কাউকে রাখা হবে আর কাউকে বাদ দেওয়া হবে তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে। যদি প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে চলে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে না।’
বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় নীলফামারীতে দুর্নীতির হার কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার তুলনায় এখানে দুর্নীতির সংখ্যা অনেক কম। এই জেলাকে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আশা করি, একদিন আপনারাই ঘোষণা করবেন— নীলফামারীই দেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা। যদি একেবারে দুর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব নাও হয়, অন্তত সেই পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই সহযোগিতা করবেন।’
চেয়ারম্যান স্বীকার করেন, ‘প্রায়শই শুনতে হয়— আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি, অথচ আমাদের অফিসেই দুর্নীতি হয়। এটি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যদি কেউ দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে পারেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারপ্রধান মনে করেন, আমাদের কর্মপদ্ধতিতে একটি দুর্বলতা রয়েছে। সেটি হলো আমরা পুরনো দুর্নীতির পেছনে সময় দিই। আমাদের কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যেন দুর্নীতি না হয়, সেই ব্যবস্থা করা। আমরা জানি কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ সতর্কতার জন্য এখনই কেন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না?’
গণশুনানি অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আকবার আলী আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক তালেবুর রহমান, নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহসিন।
পরে নীলফামারী সদর উপজেলার সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সেবার মান নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩১টি দফতরের বিরুদ্ধে ৮১টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা সেগুলোর বিষয়ে জবাবদিহি করেন।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)