Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫-৬ মাত্রা উষ্ণায়নে পৃথিবী হবে প্রাণহীন, গবেষণাপত্রে হুঁশিয়ারি


৩০ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:২৩

বিশ্ব উষ্ণায়নে এভাবেই মারা পড়বে একের পর এক প্রাণি-প্রজাতি… ছবিটি দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

গবেষকরা ২০০০ প্রজাতির প্রাণী ও গাছ নিয়ে এই গবেষণায় কাজ করেছেন
একটি প্রজাতির ধ্বংসের সূত্র ধরে অন্য একটি প্রজাতি ধ্বংস হওয়ার কারণ পরীক্ষা করেছেন
দেখেছেন, বিশ্বের তাপমাত্রা ৫-৬ ডিগ্রি বাড়লেই পৃথিবী নামের গ্রহটি প্রাণশূন্য হয়ে পড়বে

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে নতুন গবেষণা বলছে, কেবল এই কারণেই পৃথিবী নামের গ্রহটি একদিন প্রাণহীন হয়ে পড়বে। তারা বলেছেন, একটি প্রজাতির ধ্বংস অন্য একটি প্রজাতিকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। কারণ একটির জীবন অন্যরটির ওপর নির্ভরশীল কিংবা ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত। গবেষকরা বলছেন, এর সবশেষ পরিণতি হিসেবে বিশ্ব প্রাণশূন্য হয়ে পড়াও অসম্ভব কিছু নয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যদি আর মাত্র ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তাহলে অনেক প্রজাতিই বিশ্ব থেকে চিরতরে ঝরে যাবে।

প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে— এমন প্রাণিকূলও পড়ে যাবে বড় ধরনের সংকটে। এতে প্রাণহীন পরিপার্শ্বের সঙ্গে গাছপালা-পশুপাখির পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া অকেজো হয়ে পড়বে।

ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার থেকে পরিচালিত একটি গবেষণার পর এসব তথ্য জানানো হচ্ছে। ইতালি ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা যৌথভাবে এতে কাজ করেন। ভার্চুয়াল আর্থ তৈরি করে অত্যন্ত সুচারুভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন গবেষক-বিজ্ঞানীরা।

এতে তারা দুই হাজার প্রজাতির প্রাণী ও গাছপালার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। গবেষণায় তারা পরিবেশ- প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রাণীকূলের বিলুপ্তিকেই অন্যতম পরিণতি হিসেবে দেখতে পান।

বিজ্ঞাপন

গবেষণাপত্রের প্রধান রচয়িতা ড. জিওভানি স্ট্রোনা জানান, এই গবেষণায় তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রাণীকূলের টিকে থাকার সক্ষমতা নিয়েই কাজ করেছেন এবং তারা দেখেছেন, বিশ্বের সব প্রাণীরই একটি সঙ্গে অপরটির জীবন চক্র কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। আর সে কারণেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও টিকে থাকার জন্য নাজুক— এমন কোনো প্রজাতি ধ্বংস কিংবা বিলুপ্ত হলে তার অনিবার্য ফল হিসেবে অতি প্রতিকূলতায় টিকে থাকতে পারে— এমন প্রজাতিগুলোও ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথেই যাবে।

আরেক গবেষক অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিনডারস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্র্যাডশ’ বলেন, প্রজাতিগুলোর এই একে অপরের কারণে বিলুপ্তির মুখে পড়ার বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রাণীকূলের ওপর অতীতে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অন্তত দশগুণ বেশি হবে বলেই তারা ধারণা করছেন।

অধ্যাপক ব্র্যাডশ’র মতে, এই ডমিনো ইফেক্টকে (একের পর এক ক্রম বৃদ্ধিমূলক প্রতিক্রিয়া) গুরুত্বের সঙ্গে না দেখা বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বৈরী আবহাওয়া সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সে কারণে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে স্বাস্থ্য সমস্য এখন চরমে। গত দু’দশকে এ কারণে শত কোটি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবদাহ, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দাবানল— এসবই হচ্ছে। আর এসবের পরিণতিতে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ল্যানসেট কাউন্টডাউনের নির্বাহী পরিচালক নিক ওয়াটস বলছিলেন, বিষয়টি এখন তার রাতের ঘুমই কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ঝড়-বন্যার কথাই ধরুন। এগুলো যে কেবল সরাসরি কিছু ক্ষতি বা ক্ষতের কারণ হয় তা-ই নয়, এর কারণে হাসপাতালগুলো বন্ধ রাখতে হয়। এতে রোগবালাই বাড়তে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যেরও হয় বড় ধরনের ক্ষতি। কারণ এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষ তার ঘরবাড়ি হারায়, প্রিয়জনকেও হারিয়ে ফেলে।

বিজ্ঞাপন

একইভাবে দাবানল মানুষকে পুড়িয়ে মারে এবং কেবল বাস্তুচ্যুতই করে না, এতে বায়ু দূষণ আরও তীব্র হয়, বিস্তৃত এলাকায় সে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে।

সারাবিশ্বের ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, চিকিৎসক ও নীতি বিশেষজ্ঞরা মিলে এই ল্যানসেট রিপোর্ট দিয়েছেন। এতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর ওপরই জোর দেওয়া হয়েছে।

তারা বলছেন, এই যে জলবায়ুর পরিবর্তন, এর এক ভয়াবহ প্রভাব এসে পড়ে মানুষের জীবন ব্যবস্থায়। এতে অপেক্ষাকৃত নাজুক অবস্থায় থাকা জনগোষ্ঠী আরও নাজুক হয়ে পড়ে। তারা সংক্রমণ রোগে ভোগে। আর তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে, নিরাপদ পানি পান, বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়া হয় না।

ড. স্ট্রোনার মুখে হুঁশিয়ারি, আর যদি ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে সেটাই এই গ্রহ থেকে প্রাণির অস্তিত্ব বিলোপ করে দিতে যথেষ্ট হবে।

আর অধ্যাপক ব্র্যাডশ’ মনে করছেন, প্রাণিকূলের নানা প্রজাতির বিলুপ্তির যে স্বাভাবিক গতি কিংবা ধারাবাহিকতা এতদিন চিন্তা করা হচ্ছিল, এই নতুন গবেষণা তাদের বলছে— প্রকৃত চিত্র হবে তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর