পাক-ভারত যুদ্ধ: বলিউডের ৫টি বিখ্যাত চলচ্চিত্র
৭ মে ২০২৫ ১৮:১৯
পাক-ভারত যুদ্ধ কেবল সীমান্তের ঘটনা নয়; এটি ইতিহাস, রাজনীতি এবং মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের এক বহুমাত্রিক উপাখ্যান। এই যুদ্ধের আবহেই বলিউড নির্মাণ করেছে কিছু ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র—যেগুলো শুধু যুদ্ধ নয়, বরং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানবিকতা, সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের গভীর চিত্র তুলে ধরে। নিচে এমনই ৫টি শক্তিশালী চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা পাক-ভারত যুদ্ধের ইতিহাসকে রুপালি পর্দায় জীবন্ত করে তোলে।
বর্ডার (১৯৯৭): সাহসের বালুচর
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের লংওয়ালা সীমান্তের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি আজও বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশাত্মবোধক ছবির একটি। পরিচালক জে.পি. দত্তা অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে যুদ্ধক্ষেত্রের মানসিক চাপ, সৈনিকদের ভয় এবং ত্যাগকে চিত্রায়িত করেছেন। সানি দেওলের মেজর কুলদীপ চরিত্রটি কেবল একজন সেনানায়ক নয়, বরং দেশের জন্য আত্মবিসর্জনের প্রতীক।
এলওসি কার্গিল (২০০৩): তুষারাচ্ছন্ন আত্মত্যাগের কাব্য
১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে তৈরি এই চলচ্চিত্রটি বলিউডের সবচেয়ে দীর্ঘতম ছবিগুলোর একটি। ছবিটির দৈর্ঘ্য ৪ঘণ্টার অধিক। কার্গিলের পাহাড়ে যুদ্ধের বাস্তবতা, জীবনের অনিশ্চয়তা ও কৌশলগত টানাপোড়েনের এক বিস্তৃত ক্যানভাস তুলে ধরেন পরিচালক জে.পি. দত্ত। সঞ্জয় দত্ত, অজয় দেবগন, সাইফ আলি খান থেকে শুরু করে একাধিক জনপ্রিয় তারকাদের একসঙ্গে দেখা যায় এই ছবিতে। ছবিটি কখনও রোমাঞ্চকর, কখনও হৃদয়বিদারক—কিন্তু সর্বত্র দেশপ্রেমই মূল সুর।
রাজি (২০১৮): নীরব যুদ্ধ, নারীর চোখে
যুদ্ধ মানেই শুধু বন্দুক ও বিস্ফোরণ নয়—গোয়েন্দা তথ্যও যুদ্ধ জয়ের অন্যতম হাতিয়ার। সেই সত্যকেই তুলে ধরেছে ‘রাজি’। ভারতীয় নারী সেহমত খানের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি ১৯৭১ সালের পাক-যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গুপ্তচরবৃত্তির জটিল আবর্তে নারীর মনস্তত্ত্ব তুলে ধরেছে অসাধারণভাবে। আলিয়া ভাটের অনবদ্য অভিনয়ে ফুটে উঠেছে দ্বিধা, ভয়, প্রেম এবং দায়িত্ববোধ। মেঘনা গুলজারের নির্মাণে যুদ্ধের নেপথ্য কূটনীতি এক নিঃশব্দ অথচ তীব্র বাস্তবতায় ধরা দেয়।
দ্য গাজি অ্যাটাক (২০১৭): সমুদ্রের অতল গহ্বরে এক অদৃশ্য যুদ্ধ
ভারতীয় সিনেমায় সাবমেরিন যুদ্ধ এক নতুন অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান নৌসংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘দ্য গাজী অ্যাটাক’ ইতিহাসের এক অনালোচিত যুদ্ধকাহিনি পর্দায় এনেছে। পাকিস্তানি সাবমেরিন ‘পিএনএস গাজী’-কে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর গোপন মিশন নিয়ে ছবির কাহিনি এগোয়। সাবমেরিনের ক্লসড স্পেস, টানটান উত্তেজনা ও দেশরক্ষার গোপন লড়াইকে পরিচালক অত্যন্ত বাস্তবভাবে তুলে ধরেছেন। রানা দাগ্গুবতি, কে কে মেনন ও তাপসী পান্নুর অভিনয় ছবিটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে দেয়।
হিন্দুস্তান কি কসম(১৯৭৩): আকাশপথে বিজয়ের অঙ্গীকার
এই ক্লাসিক চলচ্চিত্রটি ভারতীয় বিমানসেনার দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধকে তুলে ধরে। পরিচালক চেতন আনন্দ যুদ্ধের গ্ল্যামার নয়, বরং যুদ্ধকালে বিমানচালকদের সাহস ও দায়িত্বের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন নিপুণভাবে। রাজ কুমার এবং প্রিয়া রাজবংশের সংলাপ ও অভিনয় ছবিকে আবেগঘন করে তোলে। যুদ্ধের আকাশপথের রণকৌশল এবং ঝুঁকিপূর্ণ মিশনগুলো চিত্রায়নে ছবিটি সে সময়কার সিনেমায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
শেষ কথা: যুদ্ধ নয়, মানুষের গল্প
এই পাঁচটি ছবির প্রত্যেকটি আলাদা ধাঁচে নির্মিত হলেও এক জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যায়—সেগুলো কেবল যুদ্ধ নয়, বরং যুদ্ধজয়ী মানুষদের গল্প বলে। কখনও সৈনিকের চোখ দিয়ে, কখনও একজন নারীর নিঃশব্দ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। বলিউডের এই ছবিগুলো দর্শকদের কেবল রোমাঞ্চ নয়, বরং ইতিহাসকে অনুভব করার সুযোগ দেয়—মন দিয়ে, মগজ দিয়ে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মানবিকতা ও সাহসিকতার এই চলচ্চিত্রগুলো সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদে।
সারাবাংলা/এজেডএস