ঢাকা: দেশের প্রথম ও বৃহত্তম মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে পাওয়া শেয়ার মানি অনেক কম─ এমন অভিযোগ প্রযোজকদের। দীর্ঘদিনের এ অভিযোগ নিয়ে ২০-২১ জন প্রযোজক মিলে সম্প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। সেখানে তারা এসি চার্জ বাবদ বড় অংকের টাকা কেটে নেওয়াসহ বেশ কিছু ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে নায্যতার ভিত্তিতে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে টিকিটে প্রযোজকের শেয়ার নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২২ মে) প্রযোজকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিনেমা হলটির কর্তৃপক্ষ।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে স্টার সিনেপ্লেক্স কাউন্টার টিকিট সেল অর্থাৎ টিকিট বিক্রির মোট আয় থেকে শেয়ার মানি দেবে। স্টার সিনেপ্লেক্সের সঙ্গে হওয়া সমাঝোতা উদ্যোগের প্রথম কয়েকটি বৈঠকে ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকের মিটিংয়ে আমি থাকতে না পারলেও অন্যরা আমাকে জানিয়েছেন। আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা স্টার মেনে নিয়েছে। তারা আমাদের কাউন্টার সেল বা গ্রস সেলের ওপর এখন থেকে শেয়ার মানি দেবে।’
তিনি জানান, এখন থেকে স্টার একজন প্রযোজককে কাউন্টার সেলের ওপর ১ম সপ্তাহে ৩১ শতাংশ, ২য় ও ৩য় সপ্তাহে ৩০ শতাংশ, ৪র্থ সপ্তাহে ২৭ শতাংশ এবং ৫ম সপ্তাহ থেকে যতদিন সিনেমাটি চলবে ততদিন ২৫ শতাংশ করে শেয়ার মানি দেবে। হল মেইনটেইন্স চার্জ বা এসি চার্জ, সরকারি ট্যাক্সসহ বাকি সবখরচ এখন থেকে হল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
স্টার টিকেটের নেট মূল্যের ওপর শেয়ার মানি নির্ধারণ করত। মাঝে এ ক্ষেত্রে নিয়ম করেছিল যে, ৬০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হলে প্রযোজক নেট সেলের ৬০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ হলে ৫০ শতাংশ শেয়ার মানি পাবে। এখন থেকে এ নিয়ম খাটবে না বলেও জানান খোরশেদ আলম খসরু।

সমঝোতা বৈঠকের পরে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রযোজকরা
বৈঠকে উপস্থিত প্রযোজক জাহিদ হাসান অভি, শাহরিন আক্তার সুমি, শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে কথা বলে সারাবাংলা। তারা কেউই শেয়ার মানি কিংবা এসি চার্জ কমা বা বাড়ার ব্যাপারে সরাসরি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। জাহিদ হাসান অভি সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘যা হয়েছে তা দু’পক্ষের জন্য উইন উইন পরিস্থিতি অর্থাৎ দু’পক্ষই এতে লাভবান হবে। আমরা সবাই মিলে একটি সমাঝোতা চুক্তিতে এসেছি। ফলে এখন থেকে প্রযোজকরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হবে।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রযোজকরা আমাদের একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজকে (বৃহস্পতিবার) আমরা তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। বেশ হৃদতার সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সবাই নায্যতার ভিত্তিতে একটি সমাঝোতায় এসেছি। এখন বলতে পারি, আমরা আগেও যেমন বাংলা সিনেমার পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’
আগে ৬০০ টাকার টিকেটের মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্স অ্যাডমিশন ফি ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সা (৩৯.৯০ শতাংশ), এসি রক্ষণাবেক্ষণ ২২২ টাকা (৩৭ শতাংশ), ভ্যাট বাবদ ৬৯ টাকা ২৩ পয়সা (১১.৫৩ শতাংশ) মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স ৬৯ টাকা ২৩ পয়সা (১১.৫৩ শতাংশ) কেটে রাখত।
ভ্যাট ও মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স বাবদ ২৩ শতাংশ অর্থ বাদে বাকি ৭৭ শতাংশ অর্থ প্রযোজক ও হলমালিকদের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কথা। তবে স্টার সিনেপ্লেক্স এসি রক্ষণাবেক্ষণের নামে ৩৮ শতাংশ অর্থ কেটে নিত। বাকি থাকে ৩৯ শতাংশ। এখান থেকেই প্রযোজককে শেয়ার মানি দেওয়া হতো।