ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে যখন ধর্ম, সন্ত্রাস ও রাজনীতির টানাপোড়েন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, ঠিক তখনই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বলিউড সুপারস্টার আমির খান। কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— ‘ধর্ম ও সন্ত্রাস কি কখনো একসূত্রে গাঁথা হতে পারে?’
জবাবে আমির খান স্পষ্ট করেই বলেন— ‘আমি একজন গর্বিত মুসলিম। পাশাপাশি একজন ভারতীয় হিসেবেও গর্বিত। এই দুটো কথাই ভীষণভাবে সত্যি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম কখনোই মানুষ হত্যা করতে শেখায় না। বরং এটি করুণা, শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম। কেউ যদি ইসলামের নামে সহিংসতা ছড়ায়, সে ইসলামকে অপব্যাখ্যা করছে।’
আমিরের এই মন্তব্য কেবল একজন শিল্পীর ধর্মীয় অবস্থান নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিকের মানবিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি। বলিউডে বহু বছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতায় তিনি বরাবরই সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন, তবে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি।
অভিনেতা বলেন, ‘কোনও ধর্মই নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। আর যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় তাদেরকে আমি মুসলিম বলে মনে করি না।’
আমির খানের বক্তব্য একটি বড় বার্তা দেয়— আজকের ভারত কিংবা বিশ্বে ধর্মীয় পরিচয় যত গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই জরুরি সেই পরিচয়ের মধ্যে মানবিকতা খুঁজে পাওয়া। তিনি যেন বলতে চাইলেন, ইসলাম মানেই সন্ত্রাস নয়, মুসলমান মানেই সহিংস নয়। বরং, একজন মানুষ হিসেবে কারও প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করাই প্রকৃত ধর্মের প্রকাশ।
এই বক্তব্যের পেছনে আরেকটি প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আগামী ২০ জুন মুক্তি পাচ্ছে আমির খানের নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পর’— যেটি অনেকাংশেই মানবিকতার গল্প বলে।
সিনেমাটিতে আমির অভিনয় করেছেন একজন বাস্কেটবল কোচের ভূমিকায়, যাকে শাস্তিস্বরূপ পাঠানো হয় বিশেষভাবে সক্ষম কিছু কিশোরের প্রশিক্ষক হিসেবে। তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, বেড়ে ওঠা, চ্যালেঞ্জ এবং জয়ের গল্প নিয়েই ছবির আবেগঘন নির্মাণ।
পরিচালক আর. এস. প্রসন্ন, যিনি এর আগে ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’–এর মতো সিনেমা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, এবার তুলে ধরেছেন ভিন্ন ধরনের এক স্পোর্টস-ড্রামা। আমিরের ভাষায়, ‘এই ছবি শুধুই খেলার গল্প নয়, এটি মানুষকে বিশ্বাস করার, তাদের সক্ষমতা আবিষ্কারের এবং সমাজের ভিন্নধর্মী সদস্যদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর গল্প।’