ঈদুল আজহার ব্যস্ত বিনোদন দুনিয়ায় ছিল আলোচিত ও বহুল প্রচারিত অনেক সিনেমা। তবে তাদের ভিড়ে একটি সিনেমা আলাদা হয়ে উঠেছিল— নারীপ্রধান চরিত্রের জন্য, সংলাপে প্রতিবাদী গর্জনের জন্য, এবং একজন অভিনেত্রীর নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার সাহসী প্রচেষ্টার জন্য। সেই সিনেমা—‘এশা মার্ডার: কর্মফল’, আর সেই অভিনেত্রী— আজমেরী হক বাঁধন।
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে এটি ছিল একমাত্র নারীপ্রধান চলচ্চিত্র। মুক্তির পর কেটে গেছে ২২ দিন, কিন্তু আজও সিনেমা হলগুলোতে প্রচারে ছুটে যাচ্ছেন বাঁধন। যেন এক যোদ্ধা, যিনি নিজের লড়াই নিজেই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আরেকটি অর্জনের জন্য কি আরও ৫০ বছর অপেক্ষা করব? প্রাপ্তির জায়গায় প্রাপ্তি রেখে আমি ক্যারিয়ার এগিয়ে নিতে চাই। আমাকে কাজ করে যেতে হবে।’
এই বক্তব্যেই যেন প্রকাশ পায় তার লড়াকু মনোভাব। কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল মনোনয়নপ্রাপ্ত সিনেমা ‘রেহানা’ দিয়েই যে অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোচনায় আসেন, তিনিই এখন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমায় ভিন্ন এক ধারা তৈরি করছেন।
বাঁধনের অভিনয়জীবনে এতদিন তাকে দেখা গেছে শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা বা সংগ্রামী নারীর চরিত্রে। তবে তিনি নিজেই বলছেন— ‘এই ট্যাগ আমি ভাঙতে চাই। নেগেটিভ চরিত্র করতে চাই, রোমান্টিক সিনেমা করতে চাই, অ্যাকশন ও হরর সিনেমাও করতে চাই। আমি অনেক রোমান্টিক, কিন্তু দর্শক সেটা জানে না।’
রোমান্টিক ও অ্যাকশন গল্পের জন্য বিশেষভাবে পরিচালক রায়হান রাফীর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
‘এশা মার্ডার’ সিনেমায় বাঁধন প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন একজন গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্রে। তবে এই চরিত্রকে তিনি বানিয়েছেন একদম মানুষের মতো— নায়কোচিত নয়, বাস্তবধর্মী। এজন্য তিনি কৃতিত্ব দিয়েছেন পরিচালক সানী সানোয়ারকে। তিনি জানান, ‘আমি অনেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। কীভাবে হাঁটেন, বলেন, রিঅ্যাক্ট করেন— সব পর্যবেক্ষণ করেছি। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে চরিত্রটা জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করেছে।’
বাঁধনকে এবার দেখা যাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চরিত্রে, নতুন সিনেমা ‘মাস্টার’-এ, যেটি পরিচালনা করেছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার। এ বছরই মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এই সিনেমা ছাড়াও বাঁধন নিজ উদ্যোগে ফাইটিং শিখছেন, ভবিষ্যতের একশন চরিত্রে নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
বাঁধনের মতে, “আমার কোনো তাড়াহুড়া নেই। আফসোসও নেই। ‘রেহানা’ করেছি, বিশাল ভরদ্বাজের ‘খুফিয়া’ করেছি, এবার ‘এশা মার্ডার’ করলাম। ভালো চরিত্রের প্রস্তাব পাচ্ছি, দর্শকদের ভালোবাসা পাচ্ছি। এক জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে?” এই কথাতেই যেন ফুটে উঠছে তার পরিণত ভাবনা, শিল্পে নিজের অবস্থান বুঝে এগিয়ে চলার আত্মবিশ্বাস।