ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ তারকা শাকিব খান। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাণিজ্যিক ছবির মাঠে রাজত্ব করে আসছেন। দর্শকদের ভালোবাসা, প্রযোজকদের আস্থা আর ক্রমাগত সুপারহিট ছবি— সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এক নায়কতন্ত্র। এ কারণেই তার নামের আগেই অনেকসময় ‘মেগাস্টার’ বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয়। তবে এই শব্দচয়ন নিয়ে এবার প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা জাহিদ হাসান।
সম্প্রতি এক টক শোতে ঈদের নতুন ছবি ‘উৎসব’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, “আমাদের এখানে শাকিব খানের নামের আগে ‘মেগাস্টার’ জুড়ে দেওয়া হয়, অন্য সবাই শুধু চিত্রনায়ক থাকে। কেন এমন হয়?” তার মতে, এই ধরনের ট্যাগ এক ধরণের আলাদা শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করে, যা বাকি শিল্পীদের অবমূল্যায়ন করতে পারে।
এই বক্তব্যের পর থেকেই নেটদুনিয়ায় শুরু হয় আলোচনা— শাকিব খান কি সত্যিই ‘মেগাস্টার’ নাকি এটা মিডিয়া তৈরি এক ইমেজ?
চলতি কোরবানির ঈদে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’, এবং একইসঙ্গে এসেছে জাহিদ হাসান অভিনীত ‘উৎসব’। বিস্ময়ের বিষয় হলো, শাকিবের বিপুল প্রচার ও হল দখল থাকার পরও, চতুর্থ সপ্তাহে এসে ‘উৎসব’ আয় এবং প্রদর্শনী সংখ্যায় ‘তাণ্ডব’কে পেছনে ফেলেছে।
জাহিদ হাসান শেক্সপিয়ারের একটি উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘কোনো কিছু হওয়া বড় ব্যাপার না। হয়ে থাকাটা বড় ব্যাপার।’ এই কথার মাধ্যমে হয়তো তিনি ইঙ্গিত করেছেন, মিডিয়া নির্ভর বিশেষণের চেয়ে, চলচ্চিত্রের স্থায়িত্ব আর গুণগত মানই শেষ পর্যন্ত বড় বিচার।
শাকিব খান যে ঢালিউডের বড় নাম, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু জাহিদ হাসানের আপত্তি শব্দচয়নে, ব্যাখ্যায় নয়। তার বক্তব্য, একটিকে ‘মেগাস্টার’ আর বাকিদের ‘চিত্রনায়ক’ বললে, চলচ্চিত্রশিল্পে একটি শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হয়। সেই বৈষম্য থেকেই জন্ম নেয় ঈর্ষা, বিভাজন ও শিল্পের ক্ষয়।
তিনি বলেন, ‘তাণ্ডব, উৎসব, নীলচক্র, ইনসাফ—সব আমাদের সিনেমা। আমরা চাই প্রতিটি ছবি ভালো চলুক। কারণ সিনেমা বাঁচলে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে।’
জাহিদ হাসানের বক্তব্য আসলে ব্যক্তি-আক্রমণ নয়, বরং পেশাগত ভারসাম্যের দাবি। যেখানে তারকারাও শিল্পের অংশমাত্র, সমগ্র শিল্প নয়। এবং মিডিয়ার উচিত ‘স্টারডম’ নির্মাণের আগে শিল্পীসত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া।
একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তা যেমন স্বীকৃতি, তেমনি তার ব্যবহারও দায়িত্বের। শাকিব খান ‘মেগাস্টার’ হতেই পারেন, কিন্তু সেই পরিচয় যদি অন্যদের ছোট করে দেয়—তাহলে সেটি শিল্পের ক্ষতি।