পাকিস্তানি টেলিভিশনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন ‘শাশুড়ি-বউ’ কেন্দ্রিক নাটকের ভিড়ে দর্শক হাঁপিয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই ARY Digital নিয়ে এসেছে এক অসাধারণ ব্যতিক্রম— ‘পারওয়ারিশ’। এটি কোনো গর্জন নয়, বরং নিঃশব্দে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো এক আবেগঘন নাট্যপ্রয়াস। বাইরের থেকে স্বাভাবিক মনে হওয়া একটি পরিবারের ভেতরের জটিলতা, ভালোবাসা আর নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বকে নির্মোহভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে।
মিসাম নকভী পরিচালিত এবং কিরণ সিদ্দিকীর সংবেদনশীল চিত্রনাট্যে গড়া ‘পারওয়ারিশ’ আসলে প্রশ্ন তোলে— একটি শিশুকে বড় করতে গিয়ে কীভাবে আমরা তাকে চেপে ধরি আমাদের নিজের পূরণ না হওয়া স্বপ্ন আর চাপিয়ে দেই একটানা বাধ্য থাকার দায়?
নাটকটি খুব উচ্চস্বরে কথা বলে না, বরং কাহিনির প্রতিটি দৃশ্যে ছোট ছোট নীরব সংকেত, দৃষ্টি, কিংবা অব্যক্ত বাক্য দিয়েই এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন গড়ে তোলে।
একটি দৃশ্যে মা বলেন, ‘আমি তোমার জন্য সব ছেড়ে দিয়েছি। শুধু চেয়েছি আমার কথা মানো।’ শোনার মতো একটা আবেগপূর্ণ লাইন। কিন্তু এর ভিতরেই লুকিয়ে আছে ভালোবাসার নামে নিয়ন্ত্রণের নিঃশব্দ শ্বাসরোধ।
অন্য এক দৃশ্যে ছেলে বলে, ‘আপনি ভাবেন আমি বদলে গেছি, কারণ এখন আর চুপ করে থাকি না।’ — এখানে কোনো চিৎকার নেই, আছে কষ্টের উপলব্ধি, ভাঙা সম্পর্কের ভেতরের হাহাকার।
নাটকের মূল চরিত্রে সামর জাফরি (ওয়ালি) এবং আইনা আসিফ (মায়া) যেন চরিত্রেই মিশে গেছেন। তাদের অভিব্যক্তিতে ফুটে ওঠে প্রতিটি না-বলা কথা। আবুল হাসান ও রেহাম রফিক— দুজনে মিলে গড়ে তোলেন একটি জটিল পারিবারিক সম্পর্কের পরিপূর্ণ চিত্র।
‘পারওয়ারিশ’ কোনো বিপ্লব ঘটাতে চায় না। বরং ঘরে বসেই আমাদের পরিচিত পরিবারের ভেতরে থাকা আবেগিক ক্লান্তি, চুপ চাপ বিদ্রোহ আর ভালোবাসার অপব্যাখ্যা তুলে ধরে। এই নাটকে বিদ্রোহ নেই, আছে চিৎকার না করা ক্লান্তি।
একটি সংলাপ মনে গেঁথে থাকে— ‘তুমি ভাবো আমি স্বাধীন, কিন্তু আমি কেবল তোমার ভয় থেকে দূরে সরে গেছি।’
নাটকটির সবচেয়ে বড় শক্তি এর নির্মাণ শৈলী। নকভী দর্শককে ভাবতে দেয়, অনুভব করতে দেয়। চোখ ধাঁধানো এডিটিং বা চরম আবেগের বহিঃপ্রকাশ নেই। সবকিছু এমনভাবে পরিবেশন করা হয়েছে যেন আপনি নিজেই প্রতিটি দৃশ্যের এক নীরব সাক্ষী।