পাকিস্তানি সিনেমা জগতে যখন গতানুগতিক গল্প আর প্রেডিক্টেবল হরর দিয়ে দর্শককে চমকানোর চেষ্টা চলে, তখন রাফায় রশিদির নতুন সিনেমা ‘দীমাক’ আসে যেন এক নিঃশব্দ ঝড় হয়ে। এটা এমন এক সিনেমা, যেখানে আতঙ্ক ভর করে দেয়ালের ফাটলে, নীরব চাহনিতে, সম্পর্কের দমবন্ধ গলিতে।
‘দীমাক’ নামটা শুনলেই মনে হতে পারে— ইঁদুরে কাটা পুরনো বাড়ি কিংবা ভাঙাচোরা দেয়াল। কিন্তু এই সিনেমায় দীমাক হলো চেপে রাখা আঘাত, বংশপরম্পরায় চলা বিষণ্নতা আর মানসিক শ্বাসরোধ।
এখানে ভূত নেই, আছে না-বলা কথা, ক্ষোভ, নিরব দুর্ব্যবহার, যেগুলো ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলে একটি পরিবারের বন্ধন।
সামিনা পীরজাদা যেন ছায়ামূর্তির মতো খেলেন শয্যাশায়ী কুলসুমের চরিত্র। মা হিসেবে তার ভালোবাসা কেবল কুন্ডলী পাকানো অধিকারবোধ। ছেলের স্ত্রীর ওপর ছায়ার মতো ভর করে থাকে তার নিয়ন্ত্রণ।
ফয়সাল কুরেশি এক দ্বিধাগ্রস্ত ছেলের চরিত্রে, যিনি স্ত্রী আর মায়ের টানাপোড়েনে জর্জরিত। সোনিয়া হুসেন প্রথমদিকে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও সিনেমার দ্বিতীয়ভাগে যেন আগুন হয়ে ওঠেন।
ছবির প্রতিটি সংলাপ নয়, বরং নীরবতা, পলক পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্ত, কিংবা বাতাসে জমে থাকা ভারই এই গল্পকে তীব্র করে তোলে। রাফায় রশিদি’র পরিচালনায় না আছে সস্তা জাম্প স্কেয়ার, না আছে অতিনাটকীয়তা। তিনি বিশ্বাস রেখেছেন নিজের অভিনেতাদের অভিনয়ে, বিশ্বাস রেখেছেন দর্শকের অনুভবে। এই কারণেই সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য নিঃশব্দে শিউরে উঠায়। কখনো তা মনে করিয়ে দেয় M. Night Shyamalan কিংবা The Babadook-এর মতো ডার্ক, সাবটেক্সচুয়াল সিনেমার কথা। তবে ‘দীমাক’ নিজস্ব সংস্কৃতির ভেতরেই তার ভয় সৃষ্টি করে।