Thursday 10 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রার লাশ নিতে অস্বীকৃতি বাবার

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
১০ জুলাই ২০২৫ ১৮:৫৬

একজন মেয়ের মৃত্যুতে যখন তার নিজের বাবা লাশ গ্রহণ করতেও অস্বীকৃতি জানান, তখন মৃত্যু আর নিঃসঙ্গতা—দুটো শব্দ আলাদা থাকে না। পাকিস্তানের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের মৃত্যুর পর যা ঘটেছে, তা শুধু একটি মৃত্যুর গল্প নয়, বরং আমাদের সময়ের এক করুণ সামাজিক প্রতিচ্ছবি।

হুমাইরার লাশ উদ্ধার হয় করাচির ডিফেন্স ফেজ-৬ এলাকার নিজ ফ্ল্যাট থেকে। মৃতদেহ এতটাই পচে গিয়েছিল যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি প্রায় এক মাস আগেই মারা গিয়েছেন। অথচ কেউ খোঁজ নেয়নি। ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে, লাশ সংরক্ষিত হিমঘরে। অথচ তার বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি মেয়ের লাশ নেবেন না। এমনকি সম্পর্কও ছিন্ন করেছেন অনেক আগে।

বিজ্ঞাপন

এই মৃত্যু এখন শুধুই একটি পুলিশ ফাইল বা ফরেনসিক অপেক্ষা নয়। এটি এক মানসিক, সামাজিক এবং মানবিক প্রশ্ন—কীভাবে একজন মানুষ এতটা একা হয়ে যায়?

হুমাইরার জন্ম লাহোরে। স্বপ্ন নিয়ে পা রাখেন করাচিতে। ২০১৩ সালে মডেলিং শুরু। এরপর জনপ্রিয়তা, ‘তামাশা’র মতো রিয়েলিটি শো-তে অংশগ্রহণ, ক্যামেরার ঝলকানি… কিন্তু শেষদিকে সেই হুমাইরাই হয়ে ওঠেন একাকী। ২০১৮ সাল থেকে একাই থাকতেন। ২০২৪ সাল থেকে ভাড়াও দিতে পারতেন না।

সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। নিঃসঙ্গতা তার জীবনের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়।

একজন পিতা কীভাবে নিজ সন্তানের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান? উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরও গভীর সংকট সামনে আসে। সমাজে নারী যখন নিজের মতো করে বাঁচতে চায়, ক্যারিয়ার গড়তে চায়, স্বাধীনতা চায়—তখনই শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিবার, সমাজ, ধর্ম, সংস্কারের লড়াইয়ে সে পরিণত হয় এক ‘ভিন্নচিন্তায় বিপথগামী’ নারীতে।

সম্ভবত হুমাইরাও ছিলেন তেমন একজন, যিনি নিজের পথ বেছে নিয়েছিলেন। এবং সেই পথটাই তাকে করে তোলে পরিত্যক্ত।

এই মৃত্যু শোবিজের ভেতরের বিষণ্নতা, মানসিক স্বাস্থ্য সংকট, সামাজিক অবহেলা ও পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। জনপ্রিয়তা মানেই যে সুখ বা নিরাপত্তা নয়—হুমাইরার গল্প তা আবারও প্রমাণ করল।

অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “আত্মীয় না থাকলেও, একজন মানুষ হিসেবে হুমাইরার প্রতি রাষ্ট্র বা সমাজের একটা দায়িত্ব ছিল।” আরেকজন লিখেছেন, “এ মৃত্যুর দায় শুধু হুমাইরার নয়, আমাদেরও।”

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রা