অভিনেত্রী কাল্কি কোয়েচলিন, উপস্থিত হয়েছেন প্রাক্তন স্বামী অনুরাগ কাশ্যপের মেয়ের বিয়েতে। প্রাক্তনের পারিবারিক আয়োজনে কাল্কির অংশগ্রহণ অনেকের চোখে স্বাভাবিক নাও হতে পারে। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙলেও মানবিক বন্ধন কি সহজে ছিঁড়ে যায়? সমাজ এখনো সেই সহনশীলতা অর্জন করেনি— যেখানে ‘বিচ্ছেদ’ মানেই ‘শত্রুতা’ নয়, বরং দুই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সম্মতিপূর্ণ আলাদা পথ বেছে নেওয়া।
কাল্কি সেখানে গিয়েছিলেন একজন বন্ধুর মতো। একজন অভিভাবকতুল্য আত্মীয়ের মতো। তবুও তিনি হয়েছেন কটাক্ষের শিকার। অনেকে প্রশ্ন তুলেছে— ‘কেন গেলেন?’ কেউ বলেছে ‘দেখনদারি’, কেউবা তুলেছে চরিত্র নিয়ে মন্তব্য। অথচ এই যে নিজের ব্যক্তিগত বেদনা সয়ে এক তরুণীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো— এ তো এক নিঃশব্দ সাহসিকতা।
২০০৮ সালে ‘দেব ডি’ ছবির সেটে প্রেম, তারপর ২০১১ সালে বিয়ে। কিন্তু ২০১৫ সালেই তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। এই সময়কাল কাল্কির জীবনে সহজ ছিল না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া, থেরাপি নেয়া, নিজের পরিচয়ের টানাপোড়েন— সবই স্পষ্ট করে বলেছিলেন তিনি নিজেই। বলেছিলেন, ‘ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারও সঙ্গে দেখা সহজ নয়।’
এই স্বীকারোক্তি কেবল একটি নারীর নয়, বরং আমাদের সমাজে বহু নারীর অব্যক্ত বেদনার প্রতিচ্ছবি। কাল্কি সেই অস্বস্তিকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলেন— ‘আমি এখন স্বাভাবিক।’ তবুও সমাজ তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে আজও পারছে না।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদ দেখা একটি কিশোরী— যার জীবনে ছাপ রেখে গেছে ভাঙনের ধাক্কা। কাল্কি নিজেই বলেছেন, সেই শৈশবের প্রভাবই পরবর্তীতে তার সম্পর্কেও ছায়া ফেলেছিল। এই সংবেদনশীল স্বীকারোক্তি একাধারে ব্যক্তিগত, একাধারে সামাজিক।
এমন ভেতরের মানুষ কাল্কির নামেই যখন রটে— ‘কেন সে প্রাক্তনের মেয়ের বিয়েতে?’ তখন প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এখনও নারীর নিজস্ব সম্পর্কের অধিকারকে পুরোপুরি মেনে নিতে পেরেছি?
২০২০ সালে কন্যাসন্তানের জন্ম, তারপর প্রেমিক গাই হার্সবার্গের সঙ্গে ২০২৪ সালে বিয়ে। এখন গোয়ার শান্ত পরিবেশে বসবাস করছেন পরিবারসহ। কিন্তু মাতৃত্বও তার জন্য রেহাই বয়ে আনেনি সমাজের বিচারদৃষ্টির হাত থেকে। ‘বিয়ে ছাড়া মা হওয়া’, ‘ভিন্ন ধর্মে সম্পর্ক’—এসব নিয়ে বহুবার কটাক্ষের তীরে বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তবুও থেমে যাননি।
বলিউডের ফাঁপা গ্ল্যামার জগতে কাল্কি বরাবরই ব্যতিক্রম। নারীবাদ, থিয়েটার, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মুখ খোলার সাহস তার মধ্যে ছিল শুরু থেকেই। হয়তো তার কারণেই আজ এই সমাজের ছুরি-কাঁচির হাতেও তাকে নরম হতে হয়নি।