যারা গিটার রিফে গর্জন খুঁজে পেয়েছিলেন, যারা মনে করতেন সংগীত মানে শুধুই প্রেম নয়— একটা বিদ্রোহ, একটা বেঁচে থাকার তীব্র ঘোষণা— তাদের জন্য ‘ওজি অসবর্ন’ মানে ছিল এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
২২ জুলাই ২০২৫, বার্মিংহামের আকাশটাও যেন একটু বেশিই ভারী ছিল। চলে গেলেন সেই মানুষটি, যিনি হেভি মেটালের ভাষাকে শুধু গানের মধ্যেই আটকে রাখেননি, বরং একে বানিয়েছিলেন জীবনযাপন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ থেকে পপ কালচারের আইকন _
ওজির পুরো নাম ছিল জন মাইকেল অসবর্ন। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৭০-এর দশকে ‘ব্ল্যাক সাবাথ’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। সেই ব্যান্ডেরই সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি নিয়ে এসেছিলেন এক বিপ্লব— যেখানে গানের লিরিক ঘুরপাক খেতো মৃত্যু, অন্ধকার, সমাজবিচ্ছিন্নতা ও অতিপ্রাকৃত বিষয় ঘিরে।
তার কণ্ঠে ছিল একধরনের অদ্ভুত দোলা, যা ভয়ের মধ্যে নেশা তৈরি করত। হঠাৎ চিৎকার, হঠাৎ নীরবতা— এই বৈপরীত্যই ছিল তার নিজস্ব স্টাইল। আর স্টেজে দাঁড়িয়ে তার সেই অতিরিক্ত নাটকীয়তা? ঠিক সেটাই তো ছিল ‘ওজি’!
এক জীবন, এক যুদ্ধ _
২০০৩ সালে ওজি অসবর্ন প্রকাশ্যে জানান যে তিনি পারকিনসনের রোগে ভুগছেন। এরপরও থেমে থাকেননি। চলার শক্তি হারালেও, গানের শক্তি হারাননি। জীবনের শেষ বছরগুলোতে হুইলচেয়ারে থেকেও কাজ করেছেন, রেকর্ড করেছেন, এমনকি পারফর্মও করেছেন।
মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন আগেই, বার্মিংহামের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে ব্ল্যাক সাবাথের পুরনো সহযোদ্ধা গিজার বাটলার, টনি আইওমি, এবং বিল ওয়ার্ড-এর সঙ্গে শেষবারের মতো মঞ্চে ওঠেন তিনি। সেটাই ছিল বিদ্রোহীর শেষ গর্জন।
শুধু গায়ক নন, এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবী _
‘ওজি’ শুধুই গান গাইতেন না—তিনি গানের ভেতর দিয়ে একপ্রকার সামাজিক কথোপকথন চালাতেন। মাদক, মানসিক স্বাস্থ্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে শুরু করে শিল্পীমনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব— সবই উঠে এসেছে তার গানে।
২০০২ সালে এমটিভি রিয়্যালিটি শো The Osbournes-এর মাধ্যমে তিনি তার পরিবারকে নিয়ে এলেন বিশ্বসংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘মিউজিক্যাল মিসফিট’-এর ক্যারিকেচার থেকে তিনি হয়ে উঠলেন ‘হাউসমেট নেক্সট ডোর’— এক বহুমাত্রিক রূপ, যা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ছিল।
পারিবারিক বিদায়, কিন্তু স্থায়ী উত্তরাধিকার _
মৃত্যুকালে ওজি রেখে গেছেন স্ত্রী শ্যারন অসবর্ন ও পাঁচ সন্তান- জেসিকা, লুইস, অ্যামি, কেলি এবং জ্যাক। তবে তিনি রেখে গেছেন আরও কিছু—
একটি বিপ্লবের ধ্বনি,
হেভি মেটালের নতুন সংজ্ঞা,
‘ব্যক্তিগত যন্ত্রণাকেও গান বানানো যায়’— এই বার্তা।
শেষ ট্র্যাকের শেষে নীরবতা _
সঙ্গীত ইতিহাসে খুব কম মানুষ আছেন, যাদের নাম শুনলেই এক গোটা ঘরানা সামনে চলে আসে। ওজি অসবর্ন ঠিক তেমনই একজন। তিনি গানের মধ্য দিয়ে কখনও চিৎকার করেছেন, কখনও কেঁদেছেন, কখনও মঞ্চের এক কোণায় দাঁড়িয়ে নির্বাক থেকেছেন।
তার জীবনের শেষটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই— তবু শেষবারের মতো যখন মঞ্চে দাঁড়ালেন, যখন গাইলেন সেই বিদ্রোহী লাইনগুলো, তখন যেন বারবার মনে পড়ছিল—
“I am Iron Man!”
এখন সেই লৌহমানব আর নেই। কিন্তু তার গানের গর্জন এখনো থামেনি— রেডিওতে, স্ট্রিমিংয়ে, মঞ্চে আর হাজারো তরুণের গিটারে।