বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অভিনয়ের এক অতুলনীয় ধ্রুবতারা। আজ, ২৪ জুলাই, সেই মহানায়ক উত্তম কুমারের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালের এই দিনেই থেমে গিয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চিরস্মরণীয় এক শিল্পীর জীবন। তবে থামেনি তার প্রভাব, থামেনি ভালোবাসা—আজও তিনি জীবন্ত হয়ে থাকেন রূপালি পর্দার প্রতিটি আবেগঘন দৃশ্যে, দর্শকের হৃদয়ে। উত্তম কুমার এক জীবন্ত কিংবদন্তি। আসল নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্র তাকে ‘উত্তম’ বলেই জানে, বোঝে এবং ভালোবাসে।
‘সপ্তপদী’, ‘নায়িকা’, ‘হারানো সুর’, ‘স্রষ্টি’, ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘চিড়িয়াখানা’—এমন অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে তিনি শুধু অভিনয় করেননি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন সেই গল্পগুলোরই এক অনিবার্য অংশ। তার চোখের চাহনি, সংলাপ বলার ছন্দ, নায়িকাদের প্রতি সম্মান আর গ্ল্যামার— সবকিছু মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘মহানায়ক’।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন উত্তম কুমার। সে সময় তিনি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির শ্যুটিং করছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। তার মৃত্যুতে থমকে গিয়েছিল কলকাতার রাস্তাঘাট, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ হৃদয়। এক যুগ শেষ হয়েছিল, শুরু হয়েছিল কিংবদন্তিকে স্মরণ করার নতুন অধ্যায়। আজ মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে কলকাতার শিল্পী সংসদ, যেটি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন টলিউড শিল্পীদের সহায়তায়, সেখানে হয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান। তার ছবিগুলো পুনঃপ্রদর্শিত হয়েছে, বাজানো হয়েছে কালজয়ী গানগুলো— ‘তুমি যে আমার’, ‘এত সুখ সইতে পারি না’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’— সব মিলিয়ে আজও যেন তিনি আমাদের মাঝেই আছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বার্তায় বলেছেন— ‘মহানায়ক উত্তম কুমার শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন আর ভালোবাসার প্রতীক, চিরন্তন উত্তরাধিকার।’
উত্তম কুমার সিনেমাকে শুধু গ্ল্যামার বা রোমান্স দেননি, তিনি দিয়েছেন এক নতুন ভাষা, নতুন মান। তার অভিনয়ের গভীরতা আজও নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নামে প্রতি বছর ‘মহানায়ক সম্মান’ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে।
মৃত্যু হয়ত শরীরের, স্মৃতির নয়। উত্তম কুমার ছিলেন, আছেন, থাকবেন— চলচ্চিত্রের প্রতিটি ছায়া-আলোর ভাঁজে। আজকের দিনে তাই আমরা শুধু বলি, ‘মহানায়ক আপনি ছিলেন, না হলে— বাংলা সিনেমা এতটা রঙিন হতো না।’