বলিউড যখন বক্স অফিসের অঙ্কে ব্যস্ত, তখন একটি ছবি নিঃশব্দে লিখে ফেলল অন্যরকম ইতিহাস— ‘তানভি দ্য গ্রেট’। অনুপম খের পরিচালিত এই ছবিটি শুধু চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়েছে তাই নয়, পেয়েছে সরকারি স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক প্রশংসা। মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লি সরকার একে ঘোষণা করেছে ট্যাক্স ফ্রি। বলিউডের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি এক গর্বের অধ্যায়।
এক অটিস্টিক কিশোরীর গল্প
‘তানভি দ্য গ্রেট’ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত একটি সিনেমা, যেখানে মূল চরিত্র তানভি একজন অটিস্টিক কিশোরী। তাঁর চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে এক ভিন্নতর পৃথিবী— যেখানে শব্দ হয়তো অস্পষ্ট, কিন্তু অনুভব তীক্ষ্ণ, সংলাপ হয়তো ম্লান, কিন্তু মনন গভীর।
তানভির চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভাঙ্গী দত্ত। নিজের অভিনয় নিয়ে তিনি বলেছেন, “আমি শুধু তানভি হয়নি, তানভিই হয়ে উঠেছি।” তার অভিনয়ে দেখা মেলে নিঃশব্দ প্রতিবাদের, ভেতর থেকে গড়ে ওঠা এক অদৃশ্য শক্তির।
অনুপম খেরের পরিচালনায় অন্য এক বলিউড
এই ছবিটি অনুপম খেরের পরিচালনায় এক অভাবনীয় চমক। ৫০০-এর বেশি ছবিতে অভিনয় করা এই অভিজ্ঞ অভিনেতা এবার ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করলেন, একজন সত্যিকারের শিল্পী প্রতিটি মাধ্যমেই আপন আলোয় জ্বলে উঠতে পারেন।

তানভি দ্য গ্রেট
নিউইয়র্ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবির প্রিমিয়ারে হাজির হন খোদ রবার্ট ডি নিরো। সেই স্মৃতিকে অনুপম বর্ণনা করেন, “আমি ভাবতেই পারিনি ডি নিরো আমার ছবির প্রিমিয়ারে থাকবেন। এটি আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।”
মহানায়ক থেকে মানবিক কণ্ঠস্বর
এই ছবির সবচেয়ে বড় সাফল্য তার গল্প বলার ধরনে। তানভির সংগ্রাম, পরিবার ও সমাজের চোখে তাকে দেখা, নিজের চেতনায় নিজের মতো করে বেড়ে ওঠা— এসবই এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা দর্শককে কাঁদায়, ভাবায় এবং বদলে দেয়।
তানভির নিঃশব্দ প্রতিবাদ যেন গর্জে ওঠে পর্দায়, যেন বলে— “চুপ থাকাও একরকম শক্তি।”
তারকাবহুল অভিনয়, কিন্তু গল্পের কেন্দ্রে তানভি
শুভাঙ্গী দত্ত ছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেছেন পল্লবী জোশী, জ্যাকি শ্রফ, বোমান ইরানি প্রমুখ তারকারা। কিন্তু কেউই গল্পটিকে নিজেদের দিকে টানেননি। বরং প্রত্যেকের অভিনয় এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেন তানভিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এক মানবিক বলয়।
সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে সামাজিক বার্তা
‘তানভি দ্য গ্রেট’ শুধু একটি সিনেমা নয়—এ এক সামাজিক আন্দোলন। অটিজমকে ঘিরে গড়ে ওঠা ভ্রান্ত ধারণা, ভীতি আর নিঃসঙ্গতার পর্দা সরিয়ে এই ছবি দিয়েছে সাহসিকতার ভাষ্য। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের প্রতিভা ও শক্তিকে যেন নতুন করে চিনতে শেখাচ্ছে এই চলচ্চিত্র।