ভারতের টেলিভিশন জগতে জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘বুলেট সরোজিনী’র সেট এখন কেবল ছাই আর ধোঁয়ার স্তূপ। ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় কলকাতার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এলাকার বিখ্যাত ম্যাকনেল স্টুডিওতে আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যায় স্টার জলসার তিনটি শুটিং ফ্লোর।
সেই সময় সিরিয়ালের শুটিং চলছিল না—অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্যাকআপ করে স্টুডিও ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটে ছিলেন কিছু স্টাফ এবং প্রোডাকশন টিমের সদস্যরা। ভাগ্য ভালো, কেউ আহত হননি। তবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আর্থিক ও মানসিক—দু’ভাবেই কষ্টদায়ক।
সিরিয়ালের নায়ক অভিষেক বীর শর্মা বলেন, “এটা শুধু আগুন নয়, আমাদের স্বপ্ন, পরিশ্রম ও আবেগ একসাথে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তিনটি ফ্লোর একসঙ্গে আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা নয়।”
অভিষেক জানান, শুক্রবার শুটিং বন্ধ রাখা হলেও, শনিবার থেকেই নতুন করে কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে টিম। এই সিদ্ধান্ত অনুপ্রেরণারও এক অনন্য উদাহরণ—শিল্প থেমে থাকে না, সংকটেও শিল্পীরা লড়াই করেন।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিটকেই দায়ী করা হয়েছে। তবে এত বড় দুর্ঘটনায় কীভাবে নিরাপত্তা ত্রুটি ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ম্যাকনেল স্টুডিও, যা আগে বহু জনপ্রিয় শোয়ের শুটিংয়ে ব্যবহৃত হয়েছে, তার মতো জায়গায় এ রকম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি থাকাটা ভাবিয়ে তুলছে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে।
তবে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন—শিল্পীর নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত? আর্থিক ক্ষতির কথা যতই বলা হোক, একটি সেট কেবল কাঠ-প্লাস্টিকের গাঁথুনিই নয়, সেটি শতাধিক মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িত।
অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সহকর্মী, ভক্ত—সবাই শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ‘বুলেট সরোজিনী’ সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র স্ক্রিপ্ট বা অভিনয়ে নয়, এর প্রতিটি চরিত্র যেন দর্শকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল।
এই অগ্নিকাণ্ড আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশগুলোতে টিভি ও চলচ্চিত্র শিল্পের পেছনে থাকা অবকাঠামোগত দুর্বলতা কতটা প্রকট। ফায়ার সেফটি, ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ, কর্মীদের সুরক্ষা—এসব বিষয় এখনো গৌণ বলেই থেকে গেছে।