‘দেবী উপন্যাসকে চিত্রনাট্যে রুপ দেয়াটা ছিল সবচেয়ে কঠিন’
৬ জুলাই ২০১৮ ১৯:৩৮
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
তিনি নিজেকে বিজ্ঞাপনের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিজ্ঞাপনের চিত্রনাট্য লেখেন, পাশাপাশি বিজ্ঞাপন নির্মাণও করেন। একাধিক আনন্দের খবরে এখন দারুন ভালো সময় যাচ্ছে অনম বিশ্বসের। ৮ জুলাই (রোববার) তার হাতে উঠছে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের জন্য যৌথভাবে পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই আনন্দের সঙ্গে বছরব্যাপী যুক্ত হয়ে আছে নতুন সিনেমার উত্তেজনা। বহুল আলোচিত ‘দেবী’ সিনেমার পরিচালক তিনি। জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান নিজের প্রযোজিত প্রথম সিনেমায় ভরসা রেখেছেন তার ওপর। শরতে আগমন ঘটবে দেবী’র।
কিন্তু এত আন্দের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা কি কিছুই ছিলনা? হয়ত ছিল, হয়ত বা না। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে অনম বিশ্বাস জানিয়েছেন এমন অনেক কথাই। সঙ্গে মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন বিস্তারিত। জানিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের খুঁটিনাটি বিষয়।
- চিত্রনাট্যকার হিসাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাচ্ছেন। কেমন লাগছে?
আমি চিত্রনাট্যকার হিসাবে যৌথভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য নির্বাচিত হয়েছি-এই খবরটি প্রথম জানতে পারি পরিচালক অমিতাভ রেজার কাছ থেকে। সত্যি বলতে আমি একদমই ভাবিনি যে জাতীয় পুরস্কার পাবো। চিত্রনাট্য লেখার সময় চরিত্রগুলোকে কিভাবে আরও ভালোভাবে তুলে ধরা যায় সেটাই শুধু চিন্তায় ছিল। রাষ্ট্রীয় সম্মান পাবো এমন চিন্তা তখন মাথায় ছিল না। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার জন্য প্রচুর মানসিক শক্তির প্রয়োজন হয়। এটি কায়িক শ্রমের মতোই। এই শ্রমের জন্য পুরস্কৃত হলে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে নিজের ভেতর।
- এবার ‘দেবী’ প্রসঙ্গে আসি। মিসির আলিকেই কেনো বড় পর্দায় আনার পরিকল্পনা করলেন?
মিসির আলীকে বড় পর্দায় আনার পরিকল্পনা আমার ছিল তা নয়। জয়া আহসান এই উপন্যাসটির জন্য সরকারী অনুদান পাওয়ার পর এটি আমার কাছে আসে। উপন্যাসটি থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মাণি এবং এই ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছাটা জয়া আহসানের অনেক দিনের। এটা ঠিক যে জয়া আহসান আমার উপর চলচ্চিত্রটি নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন, এজন্য আমার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করেছিল। কারণ মিসির আলী আমার প্রিয় একটি চরিত্র। শুধু তাই নয় আমি হুমায়ূন আহমেদের অনেক বড় ভক্ত।
- হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ ঝুঁকি নয় কি?
ঝুঁকি ঠিক বলব না। আবার ঝুঁকি নেই এটাও বলব না। হুমায়ূন আহমেদ এদেশের জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিক। তার লেখা উপন্যাসের চরিত্রগুলো সম্পর্কে প্রত্যেক পাঠকের নিজস্ব মতামত আছে। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো যেমন মিসির আলী, হিমুকে পাঠকরা নিজেদের ভেতর ধারণ করে। সেকারণে সবার মনজয় করা সম্ভব নয়। অনেকে অনেক রকম নেতিবাচক সমালোচনা করবেন। উপন্যাসে সবসময় চিত্রনাট্যের সব উপাদান থাকে না। কিছু কাহিনী সংযোজন বিয়োজন করতে হয়। সেজন্য পাঠক যখন চলচ্চিত্র দেখে তখন তাদের কাছে অসামঞ্জস্য মনে হয়। ‘দেবী’ উপন্যাসকে চিত্রনাট্যে রুপ দেয়াটা খুব কঠিন ছিল। এটা একটি ঝুঁকিপূর্ণ দিক। আবার হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস হলে সবাই আরও বেশি আগ্রহী হবে ছবিটি দেখার জন্য। তার আলাদা কদর আছে বাংলাদেশে। ফলে ছবির ব্যবসা বাড়বে।
- সাহিত্যনির্ভর ছবি নিয়ে কি পর্দায় ভালো খেলা যায়?
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর যেরকম বর্ণনা দেয়া হয় সেরকমভাবে পর্দায় উপস্থাপন করতে হলে অনেক বেশি খেলার প্রয়োজন হয়। সাথে প্রচুর গবেষণার ব্যাপার। ‘দেবী’ চলিচ্চিত্রের ক্ষেত্রে মিসির আলীকে চঞ্চল চৌধুরীর ভেতর দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। মিসির আলীর কথা বলার স্বর কেমন হবে? এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক তর্ক হয়েছে। মিসির আলী তো খিটখিটে মেজাজের। তাই চঞ্চল চৌধুরী কতোটুকু খিটখিটে হলে মিসির আলীর মতো হবে? চুল, দাড়ি কিরকম হবে? অন্যদিকে রাণু চরিত্রে জয়া আহসান কিভাবে দাঁড়াবেন? কিভাবে হাঁটবেন? কিভাবে কথা বলবেন? এসব নিয়ে লম্বা সময় পর্যন্ত গবেষণা করেছি। সেই গবেষণা থেকেই চরিত্রগুলোকে পর্দায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সব সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এরকম চরিত্র নিয়ে খেলতে হয়। তানাহলে চরিত্রটি ঠিকঠাক ফুঁটে ওঠেনা।
- কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রেখে ‘দেবী’র শিল্পী নির্বাচন করেছেন?
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সাথে যাদের বাস্তব চরিত্রের কমবেশি মিল আছে তাদেরকে শিল্পী হিসেবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রধান্য দিয়েছি। মিসির আলীর সাথে চঞ্চল চৌধুরীর কিছুটা মিল আছে। যেটুকু জায়গায় মিল ছিল না, সেসব জায়গায় মিল করে নেয়ার চেষ্টা করেছি। তেমনি রাণু চরিত্রটিকে যেভাবে উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে তার সাথে জয়া আহসানের বাস্তব জায়গা থেকে মিল আছে। রাণু চরিত্রটির শারীরিক বৃদ্ধি হলেও মানসিক দিক থেকে অল্প বয়সে আটকে আছে। জয়া আহসানকে তাই মনে হয়। ইরেশ জাকের যে সাইকো কিলার তা কিন্তু নয়। তবে সে চরিত্রটিতে ভালোভাবে মানিয়ে যেতে পারে। শবনম ফারিয়ার নীলু শান্ত চরিত্র। তবে ফারিয়া বাস্তব জীবনে শান্ত নয়। কিন্তু চরিত্রটির ভেতর ঢুকতে পারে। এইসব বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই শিল্পী নির্বাচন করেছি।
- প্রযোজক হিসেবে জয়া আহসান কেমন?
খুবই উদার মনের প্রযোজক তিনি। সেটে কতৃত্বস্থাপনের চেষ্টা করেননি কখনও। পরিচালক হিসেবে তার সাথে বোঝাপড়া দারুণ ছিল। প্রযোজকের পাশাপাশি তিনি একজন অভিনেত্রী, তাই পরিচালকের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
- প্রযোজক নাকি অভিনেত্রী-কোনটাতে বেশি এগিয়ে রাখবেন জয়া আহসানকে?
এটি জয়া আহসানের প্রথম প্রযোজিত চলচ্চিত্র। এখনই সেভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কতোটা ভালো সেটাতো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও দুই একটি ছবি প্রযোজনা করলে তিনি দুই জায়গাতেই সমান হয়ে যাবেন বলে মনে করি। তবে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি এগিয়ে এখন পর্যন্ত।
- আপনি একাধারে চিত্রনাট্যকার, বিজ্ঞাপন নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা- এরমধ্যে কোন জায়গাটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন?
নিজেকে বিজ্ঞাপনের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেই সবথেকে বেশি পছন্দ করি। আমি অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের জন্য চিত্রনাট্য রচনা করেছি। এমনকি বিজ্ঞাপনের সংগীতায়োজন করেছি। পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন নির্মাণের সাথে যুক্ত হয়েছি। যেহেতু প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি সেহেতু আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পর নিজেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারব।
- বিজ্ঞাপন এবং চলচ্চিত্র- দুইয়ের কাজের পার্থক্যটা কি বলে মনে হয়?
প্রোডাক্টের চিত্রনাট্য তৈরী থেকে আরম্ভ করে শুটিং- সবকিছু দ্রুততম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর চলচ্চিত্র সময় নিয়ে করতে হয়। দ্রুত কিছু করা সম্ভব হয়না।
- সমসাময়িক পরিচালকদের ঈর্ষা করেন?
কারও প্রতি ঈর্ষা হয় না। কারন মূলত আমি ভেতরে ভেতরে একজন লেখক। কোনো নির্মাতার সাথে আমাকে প্রতিযোগীতা করতে হবে সেই ব্যাপারটা আমার ভেতরে কাজ করেনা। তবে আমার কাছে অমিতাভ রেজা, আদনান আল রাজীব বা আরও কয়েকজন কাছের প্রিয় নির্মাতা আছেন যাদের ফ্রেমে সময় ধরার বিষয়টি আমাকে অবাক করে। এটাকে ঈর্ষা বলা যাবেনা।
- চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার পরিকল্পনা আছে কি?
পরিকল্পনা রয়েছে। অনেকগুলো গল্প মাথায় ঘুরছে। তবে ‘দেবী’র পর কোন ধরণের চলচ্চিত্র নিয়ে হাজির হবো সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। আগে ‘দেবী’ মুক্তি পাক। দেখা যাক দর্শক কিভাবে ছবিটি গ্রহণ করে।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ