বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে আবারও সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। প্রথমে প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খানের আবেগমথিত ফেসবুক পোস্ট, পরে বর্তমান স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের প্রতিক্রিয়া— দুই নারীর লেখা যেন এক জীবন, এক মানুষকে ঘিরে দুই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ।
অতীতের আবেগে গুলতেকিন
৩ অক্টোবর গুলতেকিন খান নিজের ফেসবুকে লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো এক শীতের রাতের বেদনাময় অভিজ্ঞতার কথা। সেই লেখায় ফুটে ওঠে সম্পর্কের ফাটল, অবহেলা ও এক তরুণী স্ত্রীর অসহায়তা। তিনি আফসোস করে বলেন, ‘অল্প বয়সে যে ভুল আমি করেছি, অন্য কোনো মেয়ে যেনো আর সেই ভুল না করে।’
এই পোস্টের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় ব্যাপক আলোচনার ঝড়— কেউ গুলতেকিনের সাহসের প্রশংসা করেন, কেউ বা অতীত টেনে আনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
শাওনের স্মৃতিতে ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে’
এরই দুই দিন পর, ৫ অক্টোবর, মেহের আফরোজ শাওন পোস্ট করেন হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই ‘নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ’–এর একটি অংশ।
সেই পোস্টে শাওন লিখেছেন _
একদিন লক্ষ করলাম, সে (শাওন) ঝিম ধরে কম্পিউটারের ফেসবুকের পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের পাতায় অশ্রুবিন্দু।
আমি বললাম, সমস্যা কী?
কেয়ারগিভার বলল, কোনো সমস্যা না। সামান্য মন খারাপ। কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
আমি বললাম, আমাকে বলো, দেখি, মন খারাপ কাটানোর চেষ্টা করতে পারি কি না।
তোমাকে বলব না। তোমার মন খারাপ হবে।
আমি বললাম, সহজে মন খারাপ হবে, এমন মানুষ আমি না। বুঝতে পারছি, ফেসবুকে পাঠানো কারও কমেন্ট পড়ে তুমি আপসেট হয়েছ। কী লিখেছে?
শাওন পড়ে শোনাল। কেউ একজন লিখেছে, তোমার উচিত শিক্ষা হয়েছে। আমি খুশি যে তোমার স্বামীকে ক্যানসার দিয়ে আল্লাহ তোমাকে শিক্ষা দিলেন। এই শিক্ষা তোমার আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল।
শাওনের মেয়ে লীলাবতী যখন মারা গেল, তখনো সে এ ধরনের চিঠিপত্র পেত। লেখা থাকত, তোমার কঠিন শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি। আরও শাস্তি হবে। এই ধরনের কথা।
আমি শাওনকে বললাম, পৃথিবীতে মানসিক অসুস্থ অনেক মানুষ। তাদের নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা ভাবব সুস্থ মানুষদের কথা। তোমার ফেসবুকে শত শত মানুষ কত চমৎকার সব কথা লিখছে। লিখছে না?
-হ্যাঁ।
-এর মধ্যে একজনের কথা চিন্তা করো। সে চলে গেছে মক্কায়, কাবা শরিফে। সেখান থেকে তোমাকে জানিয়েছে, আমি স্যারের জন্য দোয়া করতে এসেছি। শাওন আপু, আপনি একটুও চিন্তা করবেন না। এরপরও কি মন খারাপ করা তোমার উচিত?
শাওন বলল, না, উচিত না।
-তাহলে মিষ্টি করে একটু হাসো।
-হাসতে পারব না।
বলেও সে হাসল।
আমাদের আশপাশে বিকৃত মানসিকতার মানুষের সংখ্যা কি বাড়ছে? মনে হয় বাড়ছে। একজনের কথা বলি, সে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য হাস্যকর কাণ্ডকারখানা শুরু করল। একটা পর্যায়ে গেটের সামনে স্ট্রাইক করার মতো অবস্থা। মহা বিরক্ত হয়ে তাকে আসতে বললাম। ২৩-২৪ বছরের যুবক। কঠিন চোখমুখ। আমি বললাম, এখন বলো, আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য এত ব্যস্ত হয়েছ কেন? বিশেষ কিছু কি বলতে চাও?
-চাই।
-তাহলে বলে ফেলো।
-আপনার লেখা আমার জঘন্য লাগে।
-এই কথাটা বলার জন্য এত ঝামেলা করেছ?
-হ্যাঁ! কারণ সরাসরি এই কথা আপনাকে বলার কারোর সাহস নাই। সবাই আপনার চামচা।
-আমি বললাম, আরও কিছু কি বলবে?
-হ্যাঁ।
-বলে ফেলো।
সে ইংরেজিতে বলল, আই ওয়ান্ট ইউ টু ডাই সুন।
আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম (ইংরেজিতে), ‘আই হোপ অ্যান্ড প্রে ইউ হ্যাভ আ লং অ্যান্ড মিনিংফুল লাইফ।’
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া
দুই পোস্ট ঘিরে ভক্তদের মধ্যে চলছে তীব্র বিতর্ক। কেউ বলছেন— ‘একজনের স্মৃতি ব্যক্তিগত, অন্যজনের স্মৃতি শ্রদ্ধার।’ আবার কেউ বলছেন, ‘দু’জনই হুমায়ূনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই তাদের অনুভূতি প্রকাশের অধিকার আছে।’