Thursday 06 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাবের আজ জন্মদিন

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৩০

বাংলা চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ইতিহাসে কিছু নাম সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। তাদেরই একজন, অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। আজ, ৬ নভেম্বর, সেই গৌরবময় অভিনেতার জন্মদিন।

১৯৩১ সালের এই দিনে জামালপুরের মেলান্দহের মুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ছিলেন একাধারে শক্তিমান অভিনেতা, দৃঢ় কণ্ঠস্বরের অধিকারী এবং পর্দার রাজকীয় উপস্থিতির প্রতীক। তাইই তো দর্শকরা তাকে ডেকেছিলেন — বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন নবাব।

যে চরিত্র তাকে কিংবদন্তি বানায়

‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ — ১৯৬৭ সালের এই সিনেমাটি যেন তার ক্যারিয়ারের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিল। সিরাজের ভূমিকায় আনোয়ার হোসেনের চোখের ভাষা, বেদনার গভীরতা আর সংলাপের দৃঢ়তা দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছিল বছরের পর বছর। মৃত্যুর দৃশ্যের সময় তার মুখের অভিব্যক্তি এতটাই বাস্তব ছিল যে, দর্শকরা সেটিকে অভিনয় নয়, সত্যিকারের বেদনা ভেবেছিলেন। সেদিনই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা পর্দার নবাব।

বিজ্ঞাপন

নাট্যজীবনের শিকড় থেকে সিনেমায় উত্থান

শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল তার অগাধ টান। স্কুলের নাটক, কলেজের মঞ্চে ‘পদক্ষেপ’ নাটক—এইসবই ছিল শুরু। পরে ঢাকায় এসে তিনি যোগ দেন বেতারের নাটকে, আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় ‘মিনার্ভা থিয়েটার’। তার সঙ্গে কাজ করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহা, মেহফুজ— তৎকালীন তারকাদের এক উজ্জ্বল দল।

১৯৬১ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে প্রথম অভিনয়। এরপর ‘সূর্যস্নান’-এ নায়ক রূপে হাজির হয়ে প্রমাণ করেন— তিনি পর্দার জন্যই জন্মেছেন।

‘হার্ট অ্যাটাকের রাজা’— এক ব্যতিক্রমী উপাধি

চলচ্চিত্রজগতে তাকে মজা করেই বলা হতো ‘কিং অব হার্ট অ্যাটাক’! কিন্তু এই নামের পেছনে ছিল দর্শকের ভালোবাসা— কারণ তার অভিনয়ে ছিল এক অদ্ভুত রকমের সত্যতা। সংলাপের মুহূর্তে চোখের ঝিলিক, কণ্ঠের কম্পন, আর মুখের নিঃশব্দ কান্না— সবকিছু মিলে তিনি দর্শকের হৃদয়ে ব্যথা জাগিয়ে তুলতেন।

‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমায় তার সংলাপ—’মানুষ ভালো থাকতে চায়, কিন্তু পারে না’— শুধু চলচ্চিত্র নয়, যেন জীবনের বাস্তব দর্শন হয়ে উঠেছিল।

প্রতিটি চরিত্রে বাস্তবের ছোঁয়া

আনোয়ার হোসেন ছিলেন সেই শিল্পী, যিনি চরিত্রে ‘অভিনয়’ করতেন না, বরং চরিত্রে বাস করতেন। রাজা, কৃষক, খলনায়ক কিংবা পিতার চরিত্র— সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন অনন্য। ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘লাঠিয়াল’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘পালঙ্ক’— প্রতিটি ছবিতেই তার উপস্থিতি ছিল জীবন্ত বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
তার অভিনয়ের ভেতর ছিল এক নীরব ঝড়— যা চোখের দৃষ্টিতে, সংলাপের টানে, কিংবা নিঃশব্দ বিরতিতে দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছে যেত।

গৌরব ও পুরস্কার

বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, নিগার পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে একুশে পদক এবং ২০১০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন নবীন শিল্পীদের পরামর্শদাতা— যাদের শেখাতেন, ‘চরিত্রকে মুখস্থ নয়, অনুভব করতে হয়।’

শেষ অধ্যায়

জীবনের শেষভাগে অসুস্থতা তাকে থামিয়ে দেয়। ২০১৩ সালের আগস্টে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

কিন্তু তার চলে যাওয়া সত্ত্বেও আজও তার কণ্ঠ, সংলাপ আর মুখের গভীরতা ফিরে আসে সিনেমার দৃশ্যান্তরে— যেন এখনো তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন।

সারাবাংলা/এসজে/এএসজি
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর