বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম— হুমায়ূন আহমেদ। একজন লেখক, একজন নাট্যকার, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা— আর সবচেয়ে বড় কথা, কোটি মানুষের আবেগের আরেক নাম।
যে মানুষটির কলম আমাদের হাসতো , কাঁদতো, আবার ভালোবাসতে শিখতো।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর, নেত্রকোণার এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম তার। পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার, আর মা আয়েশা ফয়েজ— যিনি তার সাহিত্যিক জীবনের প্রথম প্রেরণা।
শৈশব থেকেই হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন কৌতূহলী, স্বপ্নবাজ, আর ভীষণ সংবেদনশীল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে অধ্যয়ন শেষে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন, কিন্তু জীবনের গল্প লিখতে গিয়ে নিজেই হয়ে গেলেন ‘গল্পের মানুষ’।
১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়— আর সেখান থেকেই শুরু এক নতুন অধ্যায়। এরপর একে একে জন্ম নেয় শত শত চরিত্র— যারা আজও বাঙালির ঘরে ঘরে বেঁচে আছে!
‘হিমু’— হলুদ পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ানো এক স্বপ্নচারী।
‘মিসির আলি’— যুক্তি আর রহস্যের জগতে এক অদ্ভুত মানুষ।
‘শুভ্র’— যিনি নিঃস্ব হয়েও বিশুদ্ধতার প্রতীক।
আর ‘বহুব্রীহি’, ‘আজ রবিবার’, ‘কোথাও কেউ নেই’— এসব নাটক শুধু গল্প নয়, একটা সময়, একটা প্রজন্মের স্মৃতি।
চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’— প্রতিটি ছবিতেই তিনি স্পর্শ করেছেন জীবনের বাস্তবতা আর অনুভূতির গভীরতাকে। তার সিনেমায় যেমন ছিল দেশ, তেমনি ছিল প্রেম, স্বপ্ন, বিশ্বাস আর বেদনা।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই, নিউইয়র্কের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ কোনোদিনই মারা যাননি।
কারণ, তার গল্পের ভেতর আজও তিনি বেঁচে আছেন— একটা নরম বিকেলের আলোয়, একটা ডায়েরির পাতায়, বা হয়তো কোনো বইমেলার ভিড়ে— যেখানে কেউ একটা বই হাতে নিয়ে বলে ওঠে, ‘হুমায়ূনের লেখা না পড়লে যেন মনই ভরে না!’
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদ শুধু এক নাম নন— তিনি এক যুগ, এক অনুভূতি। যিনি বাঙালিকে শিখিয়েছেন— হাসির মধ্যেও কাঁদা যায়, আর জীবনের প্রতিটি দিনেই আছে গল্প।
১৩ নভেম্বর, তার জন্মদিনে, আবারও আলো ছড়াবে সেই কিংবদন্তির নাম— হুমায়ূন আহমেদ। তার গল্প শেষ হবে না, তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন, প্রতিটি শব্দের ভেতর কোটি ভক্তের হৃদয়ের ভেতরে।