থাইল্যান্ডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন পাকিস্তানের রোমা রিয়াজ— মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আলোয় ঝলমল করা এক তরুণী। কিন্তু আলো যতই উজ্জ্বল হোক, তার চারপাশে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার তীর্যক মন্তব্য। গায়ের রঙ নিয়ে সমালোচনা, বিদ্রূপ আর অপমান— এসবের মুখে দাঁড়িয়েই বিশ্বমঞ্চে নিজের পরিচয় তুলে ধরলেন তিনি।
রোমা রিয়াজের চোখেমুখে এক ধরনের স্থিরতা, যেন বলছেন— সৌন্দর্যের সংজ্ঞা অন্য কেউ দেবেন না। ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা একটি ছোট ভিডিওতে তিনি যে বাক্যগুলো বলেছেন, তা ছুঁয়ে গেছে লাখো মানুষকে: ‘আমার ত্বক পাকিস্তানের মাটির রঙের মতো— সেই মাটি, যেখানে পরিবার গড়ে ওঠে, ঘর বানানো হয়, আর দেশের ভার বয়ে নেয় আমাদের নারীরা।’
একজন প্রতিযোগী হিসেবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেয়ে, একজন নারী হিসেবে নিজের শিকড়কে ভালোবাসার গল্পটাই যেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে।
ভিডিওতে রিয়াজ বললেন, ফর্সা ত্বককে আদর্শ মানা— এই সংস্কৃতি দক্ষিণ এশিয়ার বহু সমাজে গভীরভাবে গেঁথে আছে। ‘কালারিজম আমাদের শিখিয়েছে ফর্সা ত্বককে উদযাপন করতে এবং ভুলিয়ে দিয়েছে আমরা কোথা থেকে এসেছি।’ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, নতুন প্রজন্মের নারীরা আর পুরোনো ধারণার ভেতর আটকে থাকতে রাজি নয়।
‘যে সব নারীকে বলা হয় তারা খুব কালো, খুব আলাদা বা খুব সাহসী—তোমরাও এই দেশের মুখ।’
নেতিবাচকতার মধ্যেও গর্বের জায়গা খুঁজে পেতেন কীভাবে? সমালোচনায় তার মন খারাপ হয় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে রোমা বলেন, তিনি নিজের পরিচয়ে গর্বিত। ‘আমি পাকিস্তানি— আমার শেকড়, আমার মূল্যবোধ, আমার ত্বকের রঙ—সবকিছুতেই আমার দেশের ছাপ আছে।’
তার বক্তব্যে একটি মৃদু দুঃখ, আবার এক প্রবল আত্মবিশ্বাসও। যখন তিনি বলেন, ‘যদি সৌন্দর্য সত্যিই বৈচিত্র্যের মধ্যে থাকে, তাহলে আমরা কেন নিজেদের মানুষের প্রতি এত নেতিবাচক?’—সেখানে যেন রঙবৈষম্যের বিরুদ্ধে এক নরম কিন্তু দৃঢ় প্রতিবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
শেষে রোমা রিয়াজ যা বললেন, তা শুধু মিস ইউনিভার্স মঞ্চের জন্য নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি মেয়ের জন্য একটি ছোট্ট আহ্বান— ‘চলুন আমরা আরও ভালো করি। নিজেদের মানুষকে ভালোবাসতে না পারলে কোনো প্রতিনিধিত্বই মূল্যবান নয়।’
প্রতিযোগিতার ঝলমলে আলোয় রোমা রিয়াজের এই বার্তা অন্য আলো ছড়ায়— নিজের ত্বককে ভালোবাসার আলো।
নিজের মাটিকে ভালোবাসার আলো।
আর নিজের পরিচয়কে গ্রহণ করার আলো।