উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা—যার কণ্ঠে সুর যেন নিজেই প্রাণ ফিরে পায়। আজ সেই শিল্পীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে জন্ম নেওয়া সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র এবার পা রাখলেন ৭৪তম বছরে। অন্য সব বছরের মতো এ বছরও দিনটি এসেছে ভালোবাসা, অনুভব আর স্মৃতির ঝাঁপি খুলে। তবে এবারের জন্মদিনে নেই বড় কোনো আয়োজন, নেই আলো–ঝলমলে অনুষ্ঠান। বরং পরিবারের সঙ্গেই কাটবে তার বিশেষ এই দিন।
নীরবতার মধ্যেও উজ্জ্বলতা
রুনা লায়লার জন্মদিন মানেই ভক্তদের মধ্যে উচ্ছ্বাস, শিল্পীদের শুভেচ্ছা আর নানান আয়োজন। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং অন্যান্য কারণ বিবেচনায় এবার তিনি বেছে নিয়েছেন এক শান্ত, সাদামাটা উদযাপন।
কিন্তু উদযাপন ছোট হলেও শিল্পীর প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা এতটুকু কমেনি— বরং আরও গভীর হয়েছে।
১৮ ভাষার সঙ্গীতযোদ্ধা
ছয় দশকের সংগীতজীবন। বাংলা, হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, ইংরেজি থেকে উর্দু—সব মিলিয়ে ১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। প্রতিটি ভাষায়ই তাঁর কণ্ঠ পায় অনন্য রঙ। ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে যিনি একসময় গোটা উপমহাদেশ মাতিয়েছিলেন, সেই গানই এবার নতুন আঙ্গিকে ফিরেছে কোক স্টুডিও বাংলায়। মাত্র একদিন আগে প্রকাশ হওয়া গানটি দেখে নতুন–পুরোনো সবাই আবারও মুগ্ধ।
কোক স্টুডিওতে নতুন আবির্ভাব
কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় সিজনে তার অংশগ্রহণ নিয়ে ছিল নানা জল্পনা। প্রথমে কেউ কিছু নিশ্চিত করেনি। শেষে তিনিই জানালেন— হ্যাঁ, তিনি গান গেয়েছেন। ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত টিজার আর ১৬ নভেম্বরের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ যেন তার জন্মদিনের আগাম উপহার হয়ে এলো শ্রোতাদের জন্য। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মেলবন্ধনে এই গান আবারও প্রমাণ করল— সময় যতই বদলাক, রুনা লায়লা এখনো সমান শক্তিতে জ্বলে ওঠেন মাইক্রোফোনের সামনে।
জন্মদিনে উপন্যাস
এবারের জন্মদিনে রয়েছে একটি আলাদা চমক। প্রকাশ পেয়েছে তাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মায়ার সিংহাসন’—আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের লেখা। বাংলার জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তার আবির্ভাব, সংগ্রামের দিন, কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প— সব উঠে এসেছে এই বইতে। জন্মদিনে একজন শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানানোর এর চেয়ে সুন্দর উপায় আর কী হতে পারে?
স্মৃতির কথা, সংগ্রামের কথা
জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বললেন— ‘ছোটবেলার জন্মদিনগুলোই বেশি মনে থাকে… হাজার হাজার গান করেছি, প্রতিটি রেকর্ডিং ছিল নিজের সঙ্গে নতুন আরেকটা চ্যালেঞ্জ। আমি এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, তাই আজ এতদূর আসতে পেরেছি।’ একটি বাক্যেই যেন সারা জীবনের পথচলা। সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শ্রম, শৃঙ্খলা আর অদম্য মনোবল।
সময় বদলায়, কিংবদন্তি নয়
আজকের দিনে বড় আয়োজন নেই, নেই মঞ্চের আলো। কিন্তু আছেন রুনা লায়লা—শত শত গানের স্মৃতি, অবিনশ্বর কণ্ঠ, আর কোটি মানুষের ভালোবাসায় ঘেরা এক শিল্পী। নীরব জন্মদিনেও তিনি উজ্জ্বল, কারণ তার সংগীতই তার প্রকৃত উৎসব।
শুভ জন্মদিন রুনা লায়লা।
আপনার সুর আমাদের জীবনে রঙ ছড়িয়ে যাক আরও বহু বছর।