সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় সবচেয়ে গ্ল্যামারাস— আর একই সঙ্গে সবচেয়ে বিতর্কিত— আসর যদি কোনোটা থাকে, সেটা নিঃসন্দেহে মিস ইউনিভার্স। থাইল্যান্ডে চলছে ৭৪তম আয়োজন, আর শুরু থেকেই যেন উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিচারক, প্রতিযোগী ও আয়োজকদের চারদিকে।
বড়সড় আলোচনার জন্ম হয় যখন অফিসিয়াল জুরি প্যানেলের দুই সদস্য হঠাৎ করেই দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন। প্রথমেই পদত্যাগ করেন লেবানিজ– ফরাসি সংগীতশিল্পী ওমর হারফুশ। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেন— একটি ‘গোপন জুরি বোর্ড’ নাকি আগেই ঠিক করে ফেলেছে কোন ৩০ জন প্রতিযোগী ফাইনালে যাবে। তার অভিযোগ, সেই গোপন বোর্ডে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কিছু প্রতিযোগীর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওমরের পরই দায়িত্ব ছাড়েন ফরাসি ফুটবল ম্যানেজার ক্লোদ মাকেলে। তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগের কথা জানালেও ঘটনাটি নতুন করে বিতর্ককে ঘনীভূত করেছে।
এদিকে প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই আরেকটি ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। থাইল্যান্ডের এক কর্মকর্তা প্রি-ইভেন্টের সময় মিস মেক্সিকো ফাতিমা বশকে অপমান করেন— যা দেখে কয়েকজন প্রতিযোগী সরাসরি অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান। এতে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ আরও বাড়ে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের নামটা আলাদা করে চোখে পড়ে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানজিয়া জামান মিথিলা, যিনি জনপ্রিয়তার ভোটে এবার রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন— ১৫ লাখ ৫০ হাজার ভোট! তিনি এখন শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানোর খুব কাছাকাছি।
মিথিলার পোশাক, স্টাইলিং ও উপস্থাপনায় বাংলাদেশি ঐতিহ্য বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। জামদানি, শাপলা ও সবুজ–লালের মিশেলে তৈরি তার পোশাক আন্তর্জাতিক দর্শকদের নজর কাড়ছে। প্রতিটি র্যাম্পে ছিল দেশকে তুলে ধরার গর্ব আর আত্মবিশ্বাস।
যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকিনি রাউন্ড নিয়ে কিছু সমালোচনা হয়েছে, তবে প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী সেই সেশনে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক। সমালোচনার মাঝেও মিথিলা ছিলেন স্থির, পেশাদার এবং আত্মবিশ্বাসী।
সব মিলিয়ে বিতর্ক, ড্রামা, ভোটযুদ্ধ আর গ্ল্যামারের মিশেলে এবারের মিস ইউনিভার্স আসর বেশ সরগরম। আর এই মঞ্চে বাংলাদেশের মিথিলা যে অন্যতম আলোচিত মুখ—তা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। এখন অপেক্ষা ২১ নভেম্বরের— দেখা যাক, কার মাথায় ওঠে সৌন্দর্যের মুকুট।