বাংলা সিনেমায় যখন দর্শক নতুন ভাষা, নতুন বয়ান আর নতুন সাহসের খোঁজে— ঠিক তখনই আবার আলো জ্বালালেন মেজবাউর রহমান সুমন। ‘হাওয়া’ সিনেমার অভাবনীয় সাফল্যের পর তার দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রইদ’ যেন মুক্তির আগেই নিজের গল্প লিখে ফেলেছে আন্তর্জাতিক পর্দায়।
বঙ্গ ও ফেসকার্ড প্রোডাকশনের প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমার ট্রেলার সম্প্রতি এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত হয়েছে। তবে ট্রেলার প্রকাশের উত্তাপ ছাপিয়ে বড় খবর—বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রটারডাম (IFFR)-এর ৫৫তম আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘টাইগার কম্পিটিশন’-এ অফিশিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে ‘রইদ’। বাংলাদেশের কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য এই বিভাগে জায়গা করে নেওয়া—এই প্রথম। বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক অভিযাত্রায় এটি নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
‘রইদ’-এর গল্প শুনলে মনে হয় একেবারে সহজ— সাদু, তার পাগল স্ত্রী আর বাড়ির পাশের একটি তালগাছ। কিন্তু এই সরলতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে গভীর দর্শন। পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের ভাষায়, ‘এই গল্পে আমরা আসলে আদম ও হাওয়ার আদিম আখ্যানকে খুঁজেছি। হাজার বছরের পুরনো সেই গল্পকে আমরা বর্তমানের অনুভূতিতে পুনর্নির্মাণ করেছি।’
এই অনুভূতির বর্তমানেই মিশে আছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান-এর দেখা গ্রামীণ বাংলার রঙ, গন্ধ আর শরীরী বাস্তবতা। ফলে ‘রইদ’ শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং এক ধরনের শিল্প-অনুভব।
প্রধান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বঙ্গের পক্ষ থেকে প্রযোজক মুশফিকুর রহমান বলেন, দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের এই কঠিন সময়ে খুব কম নির্মাতাই নতুন করে আশা জাগাতে পেরেছেন— মেজবাউর রহমান সুমন তাদের অন্যতম। তার বিশ্বাস, ‘রইদ’ শুধু দেশের দর্শকদের নয়, বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মন জয় করবে।
সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, নাজিফা তুষি, গাজী রাকায়েত, আহসাবুল ইয়ামিন রিয়াদসহ আরও অনেকে। গল্প লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন ও সেলিনা বানু মনি। চিত্রনাট্যে পরিচালকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহিন ফারুক আমিন, সিদ্দিক আহমেদ এবং সুকর্ণ শাহেদ ধীমান।
আগামী বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘রইদ’ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছে—বাংলা সিনেমা এখন শুধু দেশের গণ্ডিতে আটকে নেই। অনুভূতির ভাষায় বলা গল্পও যে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিতে পারে, ‘রইদ’ তারই নীরব কিন্তু শক্ত প্রমাণ।
হয়তো এই সিনেমা দেখার পর দর্শক শুধু গল্প দেখবে না— নিজের ভেতরের কোনো আদিম অনুভূতির সঙ্গেও নতুন করে পরিচিত হবে।