Wednesday 17 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হুমকির মুখে চমক, বান্নাহ ও অনন্য মামুন

এন্টারটেইনমেন্ট ডেস্ক
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৯

গ্ল্যামার, জনপ্রিয়তা আর দর্শকের ভালোবাসা— বিনোদন জগতকে আমরা সাধারণত এই তিন শব্দেই চিনি। কিন্তু ক্যামেরার আলো নিভে গেলে, পর্দার রঙিন হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক ভিন্ন বাস্তবতা। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাতা অনন্য মামুন, মাবরুর রশীদ বান্নাহ এবং অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমককে ঘিরে যে হুমকি ও হয়রানির ঘটনা সামনে এসেছে, তা আবারও মনে করিয়ে দেয়— খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে কতটা অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন।

চমকের ফোন নম্বর ফাঁস, বান্নাহর লোকেশন ট্র্যাক করার দাবি, আর প্রকাশ্য ভাষায় অপমান ও হুমকি— সব মিলিয়ে ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অনলাইন আক্রমণ নয়, বরং বিনোদন অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল সহিংসতারই প্রতিচ্ছবি। ফেসবুকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এসব হুমকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সেই অন্ধকার দিকটিকে সামনে আনে, যেখানে মতভিন্নতা খুব সহজেই ব্যক্তিগত আক্রমণে রূপ নেয়।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয়তার উল্টো পিঠ

রুকাইয়া জাহান চমক ছোট পর্দার পরিচিত মুখ। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের মত প্রকাশেও তিনি স্পষ্টভাষী। বান্নাহ ও অনন্য মামুন— দুজনই নাটক ও চলচ্চিত্রে আলোচিত নির্মাতা। দর্শকের ভালোবাসা যেমন তাদের এগিয়ে নিয়েছে, তেমনি সেই দৃশ্যমান অবস্থানই হয়তো তাদেরকে বানিয়েছে টার্গেট। জনপ্রিয় হলেই যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা আরও শক্ত হয়— বাস্তবতা ঠিক তার উল্টোটা বলছে।

বিনোদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন হওয়া উচিত তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে। পছন্দ না হলে সমালোচনা হতে পারে, বিতর্কও হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ফাঁস করা, চলাচল নজরদারির ভয় দেখানো— এসব কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হতে পারে না।

ডিজিটাল স্পেসে অনিরাপত্তা

এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে— আমাদের ডিজিটাল স্পেস কতটা নিরাপদ? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে হুমকি দেওয়া, ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এখন যেন খুবই সহজ। অথচ এর প্রভাব গভীর। শিল্পীদের ক্ষেত্রে এর মানসিক চাপ আরও বেশি—শুটিং সেট, পরিবার, ব্যক্তিগত চলাফেরা— সবকিছু নিয়েই তৈরি হয় এক ধরনের অদৃশ্য আতঙ্ক।

মনোবিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের হুমকি দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগ, অনিদ্রা এবং পেশাগত অনীহার জন্ম দিতে পারে। অনেকেই তখন নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন, সৃজনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙার সময়

বিনোদন অঙ্গনে এমন ঘটনা নতুন নয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো চাপা পড়ে যায়। কেউ মুখ খুললে আবার নতুন করে ট্রল, আক্রমণ শুরু হয়— এই ভয়েই অনেকে নীরব থাকেন। তবে সাম্প্রতিক এই ঘটনা আলোচনা তৈরি করেছে, যা ইতিবাচক দিকও বটে। কারণ আলোচনাই পারে জবাবদিহির পথ খুলে দিতে।

শিল্পী সমাজের একটি অংশ মনে করছে, এখন প্রয়োজন সম্মিলিত অবস্থান— প্রযোজক, নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী সবাইকে একসঙ্গে বলতে হবে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি অধিকার।

শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোই সুস্থ সংস্কৃতি

বিনোদন মানেই শুধু বিনোদন নয়; এটি সমাজের আয়না। সেই আয়না ভেঙে গেলে ক্ষতি হয় সবারই। মতভিন্নতা থাকবে, সমালোচনাও থাকবে—কিন্তু তা যেন কখনোই হুমকি বা ভয় দেখানোর ভাষায় না পৌঁছায়। একজন শিল্পী যখন নিরাপদ বোধ করেন, তখনই তিনি মুক্তভাবে সৃষ্টি করতে পারেন।

চমক, বান্নাহ কিংবা অনন্য মামুন— নাম যাই হোক, প্রশ্নটি আসলে আরও বড়। আমরা কি এমন এক সংস্কৃতির দিকে এগোচ্ছি, যেখানে ভিন্নমত মানেই শত্রু? নাকি এখান থেকেই শুরু হবে দায়িত্বশীল দর্শক ও নিরাপদ ডিজিটাল পরিসরের নতুন চর্চা?

বিজ্ঞাপন

এআই ছবি চেনার কিছু সহজ উপায়
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৭

আরো

সম্পর্কিত খবর