নোলক ‘ছিনতাই’ : প্রযোজক বললেন অন্য কথা
২৩ জুলাই ২০১৮ ১৫:৩৬
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
অভিযোগ উঠেছে ‘নোলক’ ছবির প্রযোজক সাকিব ইনতেজার চৌধুরী সনেট উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পরিচালক রাশেদ রাহাকে পরিচালনা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ কারণে রাশেদ রাহা গতকাল রোববার (২২ জুলাই) চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ছবির শেষ দিকে এসে তার বদলে পরিচালক হিসেবে ইফতেখার চৌধুরীকে নিয়ে কাজ করছেন প্রযোজক।
এরপর থেকে অনেকে প্রযোজক সাকিব সনেটের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন। আবার কেউ কেউ প্রযোজকের পক্ষ হয়ে পরিচালককে দোষারোপ করছেন। ক্রমেই তৈরি হচ্ছে জটিলতা। কিন্তু এর পেছনের আসল সত্য কি? এই প্রশ্নটি এখন সবথেকে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুটিংয়ের মাঝপথে কেনো রাশেদ রাহাকে সরিয়ে দেয়া হলো? প্রযোজক সাকিব সনেটকে এমন প্রশ্ন করা হলে, পরিচালকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন সনেট। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন ছবির নাম পরিচালক সমিতিতে নিবন্ধন করাই তখন ওখানে মুক্তির সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে পয়লা বৈশাখ উল্লেখ করি। কিন্তু যখন পয়লা বৈশাখ ঘনিয়ে আসে তখন পরিচালক ছবির কাজ শেষ করতে পারেননি। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি পরিচালক আমাকে লিখিত দেন যে, ২০১৮ সালের বৈশাখের আগেই ছবির কাজ পূর্ণাঙ্গ শেষ করে দেবেন। যদি তাতে ব্যর্থ হন তাহলে সম্মানির টাকা ফেরতসহ ছবির পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়াবেন। এদিকে আমার সহযোগী প্রযোজকরা আমাকে চাপ দিতে থাকেন। তারপরও পরিচালকের ওপর ভরসা রেখে ঈদুল ফিতরে ছবিটি মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সেটাও সম্ভব হয়নি। গত তিন মাস যাবত রাশেদ রাহা আমার ফোন কল ধরেন না। আমি বারবার তাকে ফোন করেছি। সবশেষ মেসেজ করে ছেলেমানুষি রেখে কাজ শেষ করার কথা বলেছি।’
পরিচালকের কাছ থেকে ছবি নিয়ে নেয়ার এটাই কি প্রধান কারণ? সনেট অভিযোগ করে বলেন, ‘শুটিংয়ে পরিচালক অপেশাদার ছিলেন। ইউনিটের সবাই তার ওপর বিরক্ত। আমি সেখানে আমার নির্বাহী প্রযোজকের কাছে স্পট খরচ পাঠিয়েছি, তিনি সেই টাকা দিয়ে আইফোন কিনেছেন। ওমর সানি-মৌসুমিকে দশ থেকে বারো দিন বসিয়ে রেখে মাত্র দুই দিন শুটিং করেছেন।’
সাকিব সনেট আরও বলেন, ‘সব জায়গায় বলা হচ্ছে ছবির কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আসলে এটা ঠিক না, এখন পর্যন্ত ছবির কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। প্রায় ৯০টির মতো দৃশ্য রয়েছে ছবিতে, তারমধ্যে ৫৩টি দৃশ্যের কাজ শেষ হয়েছে।’
রাশেদ রাহার জায়গায় নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীকে সিনেমা শেষ করার দায়িত্ব দেয়ার কথা সাকিব সনেট অস্বীকার করেন। ইফতেখার চৌধুরী এই ছবির সুপারভাইজার ছাড়া আর কিছু না। পরিচালক হিসেবে তার নিজের নাম ব্যবহার করবেন বলে জানান প্রযোজক।
এদিকে ঘটনার আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অভি মিত্র-এর সঙ্গে। তিনি এখন দেশের বাইরে। শুটিং থেকেই তিনি কথা বলেন সারাবাংলার সঙ্গে। একইরকম অভিযোগের কথা জানান তিনি। অভি বলেন, ‘ছবি পরিচালনার কোনো যোগ্যতাই তার নেই। তিনি সহকারীদের দিয়ে শট ডিভিশন করিয়েছেন। সেটে সবসময় তিনি অন্যকাজে ব্যস্ত থাকতেন। কাট বলতেও ভুলে যেতেন। রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত জেগে থাকতেন, অথচ কখনও স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনাই করতেন না। এই ছবিটি নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না। একদিন আমাকে তিনি নিজেই বলেছেন, কেবল নামের জন্য এই ছবিটি করা। তারপর নাটক নির্মাণ করবেন। তাহলে টাকা বেশি পাওয়া যাবে।’
এতো এতো অভিযোগ যে রাশেদ রাহার বিপক্ষে, সেই রাশেদ রাহা সব অভিযোগকে মনগড়া বলেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব একদম মনগড়া কথা। প্রমাণ দেখাতে বলেন। তবে আমি যদি এবিষয়ে বিস্তারিত কথা বলি তাহলে প্রযোজক বিপদে পড়বেন। তার যদি কোন অভিযোগ থাকতো তাহলে তিনি পরিচালক সমিতিতে জানাতেন।’
অন্যদিকে রাশেদ রাহার অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। পরবর্তীতে পদক্ষেপ কি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বুধবার মিটিং করবো। তবে এরমধ্যে আমরা প্রযোজককে জানিয়ে দিয়েছি যে পরিচালকের অনুমতি ছাড়া ছবির বাকি অংশের শুটিং করা যাবে না। আর যদি প্রযোজক শুটিং করেন তাহলে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিতর্কের জন্ম দেয়া ‘নোলক’ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, ববি, মৌসুমি, ওমর সানিসহ আরও অনেকে। পরিচালক রাশেদ রাহা এবং প্রযোজক সাকিব সনেট দুজনেই ‘নোলক’ সিনেমার মাধ্যমেই নাম লেখান চলচ্চিত্রে। কিন্তু প্রথম সিনেমাতেই দ্বন্দ্বের মুখে পড়ে গেলেন পরিচালক-প্রযোজক। বড় তারকার বড় বাজটের এই ছবিটির ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ