কে কি বললো সেটা ভাবলে এখানে আসতে পারতাম না- শ্রীলেখা মিত্র
১৪ আগস্ট ২০১৮ ১৫:৩১
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
কালো পাড়ের লাল শাড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর চোখে কাজল। মায়াবি এক চাহনি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দার্জিলিংয়ের সরু রাস্তায়। এভাবেই ক্যামেরায় ধরা দিলেন শ্রীলেখা মিত্র। শীতল আবহাওয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, প্রথবারের মতো তিনি অভিনয় করছেন বাংলাদেশের টেলিছবিতে। খায়রুল বাসার নির্ঝরের লেখা ‘দার্জিলিংয়ে ভালোবাসা’ শিরোনামের টেলিছবিটি পরিচালনা করেছেন রাশেদ রাহা। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঈদুল আজহার অনুষ্ঠানমালায় দেখানো হবে এটি।
শ্রীলেখা মিত্র দুই বাংলাতেই জনপ্রিয়। জনপ্রিয় কমেডি শো মীরাক্কেল-এ বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকে তিনি আরও ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছেন এদেশের দর্শকদের কাছে। অভিনয় করেছেন অসংখ্য ছবিতে। ছোটপর্দায়ও তার উপিস্থিতি দেখা গেছে।
সম্প্রতি এই গুণী অভিনেত্রী কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে। এ সময় তিনি টেলিছবিতে নিজের চরিত্র, কাজের অভিজ্ঞতাসহ ক্যারিয়ার নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন।
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন মনে হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আপনার সৌন্দর্য্য। কোনও রহস্য আছে নাকি?
এটাকে আমি রহস্য বলব না। বংশগত কারণ হতে পারে। আমি নিজের প্রতি একটু বেশি যত্নবান। নিয়ম করে সব কাজ করি। শৃঙ্খলায় জীবন যাপন করি। খাওয়ার বেলায় সচেতন থাকি।
- প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের একটি টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ভালো ছিল। তবে আরও একটু ভালো হতে পারতো। তাড়াহুড়ো করে কাজটি হয়েছে। আর্থিক সমস্যা ছিল। বাংলাদেশ থেকে আরও একজন অভিনয়শিল্পী আসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে আসেননি। সেজন্য কলকাতা থেকেই অভিনয়শিল্পী নিতে হল। সময় নিয়ে টেলিছবিটি করতে পারলে ভালো হতো। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজটি করা হয়েছে। তবে সবমিলিয়ে বলব খুব একটা খারাপ লাগেনি কাজটি করতে।
আরও পড়ুন : সেলেনার আশা
- এতে আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই।
সাত বছর বিবাহিত জীবনযাপন আমার। কিছু কারণে স্বামী স্ত্রী’র মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। দার্জিলিংয়ে ছেলেদের একটি গ্রুপ বেড়াতে যায়। সেখানে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার থেকে ছেলেটি বয়সে ছোট। তবুও তার অ্যাটিটিউড, কথাবার্তা আমার ভালো লাগে। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। এই ভালোলাগা যে ভালোবাসা তা কিন্তু নয়। তবে কেউ সম্পর্ক মনে করলে সম্পর্ক, মনে না করলে সম্পর্ক না। বাসে, ট্রেনে অনেক লোকের সঙ্গে দেখা হয়। ভালো লাগে। তাই বলে সেটাকে প্রেম বা সম্পর্ক বলা যাবেনা।
এরকম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্রটির নাম থাকে হীরা। সবশেষে হীরার জীবনে কি হয় সেটা জানতে টেলিছবিটি দেখতে হবে।
- পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহা কেমন?
খুব চুপচাপ। কাজ নিয়ে কোন বাড়তি চাপ নিতো না। একদম নিশ্চিন্ত থাকতো। তার এমন নিশ্চিন্ত থাকা দেখেই আমার টেনশন হতো। তবে তাকে আমার খারাপ লাগেনি। আগামীতে আরও ভালো কাজ করবে বলে মনে করি। সেজন্য তাকে আরও বেশি অর্গানাইজড হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কাজটা যেন ঠিকঠাক গুছিয়ে সঠিক সময়ে করা যায়।
আরও পড়ুন : এ যেন নিজেকেই ফিরে দেখা
- শুনেছি বাংলাদেশ আপনার আবেগের এক জায়গা। বাংলাদেশে শেষ কবে এসেছিলেন?
আমি গত বছর বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে রুনা লায়লা ও আলমগীর সাহেবের বাড়িতে ছিলাম। তারা আমার বাংলাদেশের পুরো ট্যুরটা অ্যারেঞ্জ করে দেন। তাদের আতিথেয়তা ভোলার নয়। শুধুমাত্র তাদের কারণে আমি আমার বাবা’কে দীর্ঘ ৫৮ বছর পর বাংলাদেশে তার দেশের বাড়িতে নিয়ে যেতে পেরেছি। সেজন্য আমি রুনা লায়লা-আলমগীর দম্পতির কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
- বাংলাদেশের নাটক বা চলচ্চিত্র দেখা হয়?
সিনেমা তেমন একটা দেখা হয়না। কলকাতায় ফেস্টিভ্যালে কোন ভালো সিনেমা হলে দেখি। আর সত্যি কথা বলতে নাটক আগে দেখতাম, এখন দেখা হয়না।
- বাংলাদেশে আপনার পছন্দের অভিনেতা–অভিনেত্রীর নাম জানতে চাই।
নাটকের কথা বলতে পারব। অভিনেত্রীদের মধ্যে বিপাশা হায়াত, সুবর্ণা মুস্তাফা আমার খুব পছন্দের। আনুশেহ আনাদিলের গান ভালো লাগে।
- মনে হচ্ছে কলকাতার চলচ্চিত্রে আগের মতো আপনার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। ধারণাটা কি ঠিক?
আমি তো কাজ করছি। তবে কম কাজ করি। আর আমি যেচে গিয়ে কারও কাছে কাজ চাইনা। কারও যদি আমাকে দরকার হয় ডাকবে, দরকার না হলে ডাকবে না। এখন বড় যে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, হয়তো তারা আমকে পছন্দ করেনা। তাই তাদের ছবিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন : স্বপ্ন দেখাবে ‘সুই ধাগা’
- আজকাল আপনার কিছু খোলামেলা কথা নিয়ে দুই দেশের সংবাদ মাধ্যমে চর্চা হচ্ছে। শ্রীলেখা মিত্র কি অনেক বেশি সোজাসাপ্টা কথা বলেন?
আমি বরাবরই সোজাসাপ্টা কথা বলি। আজকে নতুন না। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারিনা। যা বলার মুখের সামনে বলে দিই। এতে আমাকে যে যাই বলুক না কেনো! তাতে আমি তোয়াক্কা করিনা। জীবনটা আমার। কে কি বললো সেটা নিয়ে বসে থাকলে আজকে এখানে আসতে পারতাম না।
- টলিউডে ক্যারিয়ারে এখন যে অবস্থানে আছেন, এই অবস্থানে আপনি কি সন্তুষ্ট? নাকি আরও অনেক দূর যেতে পারতেন?
আমি কখনও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবিনি। আমি কাজটাই করে যাই মন দিয়ে। কোন শিল্পী আসলে সন্তুষ্ট হতে পারেনা। কোথায় আছি? কোথায় যেতে পারতাম? এসব আমাকে ভাবায় না। আমি শুধু অভিনয় করিনা। সামাজিক কাজ করি, ইভেন্টের কাজ করি। টুকটাক লেখালেখি করি।
- শ্রীলেখা মিত্র কি সিঙ্গেল?
হ্যাঁ, এখনও সিঙ্গেল। ভবিষ্যতে বিয়ে করার ইচ্ছাও নেই। একা জীবন দিব্যি কেটে যাচ্ছে। কোন ঝামেলা নেই।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ