Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজপুত্র বিদায়ের বাইশ বছর


৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:০৩

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট।।

অধিকাংশ মৃত্যু মানুষকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়। আবার কিছু মৃত্যু মানুষকে বিদায় দেয়না। মনে রাখে যুগের পর যুগ। কালের কৃষ্ণ গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেয়না। সালমান শাহ ঠিক তেমন একজন নায়ক। নব্বই দশকে এফডিসির আকাশে এক ধ্রুবতারার আবির্ভাব ঘটেছিল। আবির্ভাবেই যেন নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। রুপালী পর্দায় তিনি ধ্রুবতারার মতো জ্বল জ্বল করেছেন।

তারপর একদিন আচমকা এফডিসির ঈশান কোনে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা দেখা দিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে খবর এলো- সালমান শাহ মারা গেছেন। তিনি আর দাঁড়াবেন না ক্যামেরার সামনে। দাঁপিয়ে বেড়াবেন না শুটিং ফ্লোর। মুগ্ধতা ছড়াবেন না ভক্তদের মাঝে। কেউ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিতে হয় সবাইকে। তাই ভক্তরা বুকে পাথর চাপা দিয়ে অশ্রুঝরা চোখে কম্পিত কন্ঠে বলেছেন, বিদায়। চির বিদায়। হে রাজপুত্র।


আরও পড়ুন :  প্রযোজক হচ্ছেন অভিনেতা


আজ সালমান শাহ বিদায়ের বাইশ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যু ছিল রহস্যঘেরা। পরিবার পক্ষের দাবি, সালমান শাহকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। দাবির পক্ষে আদালতে মামলাও করেন সালমান শাহর বাবা। এখনও সেই মামলার নিস্পত্তি হয়নি। আত্মহত্যা নাকি হত্যা! এটা নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি রয়ে গেছে।

সালমান শাহ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম ছিলো শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন। চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সালমান শাহ নামে খ্যাতি অর্জন করেন।

নাটকের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সালমান ক্যারিয়ার শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৮৫ সালে। নাটকে অভিনয়ের মাঝেই ১৯৯৩ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় পা রাখেন। বিপরীতে ছিলেন মৌসুমি। অভিষেক সিনেমায় তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। সেসময় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ব্যবসা করে ছবিটি।

বিজ্ঞাপন

সালমান শাহ সম্পর্কে সোহানুর রহমান সোহান সারাবাংলাকে বলেন-

‘সালমান যখন অভিনয় করতেন তখন মনে হতো না যে, তিনি অভিনয় করছেন। বাস্তব মনে হতো। সে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারতো। এ কারণে দর্শকরা তাকে পছন্দ করতো। এমনকি এখনও মানুষ তাকে ভুলতে পারেনি। তার পোশাক নির্বাচন থেকে শুরু করে হাঁটা-চলা, কথা বলা- সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল। এসব কিছুই তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র বানিয়েছে।’

সোহান মনে করেন সালমান শাহর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের সিনেমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি থাকলে আজকে বাংলা সিনেমার অবস্থা এমন ভঙ্গুর থাকতো না। তিনি বলেন-

‘আজকে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। সালমানের প্রয়োজনীয়তা আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি। তিনি বেঁচে থাকলে আজকে চলচ্চিত্র শিল্পের এই করুণ অবস্থা হতো না।’

আজ এই সময়ে এসে সালমান শাহ মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরী পেয়েছে কি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র? প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলেন-

‘এখনও সালমানের উত্তরসূরী আসেনি আমাদের চলচ্চিত্রে। আসলে কারও উত্তরসূরী কেউ হয়না। তার কাছাকাছি হয়। সালমান তার স্বকীয়তার মাধ্যমে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। এখন শাকিব খান তার স্বকীয়তা দিয়ে চলচ্চিত্রে বড় জায়গা দখল করে আছেন। এরকম আরও কিছু শিল্পী আসা দরকার। এখনও শিল্পী সংকট চলেছে। এটি কাটিয়ে ওটা দরকার ।’


আরও পড়ুন :  এগারো বছর পর একসঙ্গে সালমান-বানসালি


এখন যারা শিল্পী রয়েছেন তারা ঠিকমতো নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। সেজন্য নিজেদের পেশাদারিত্বের অভাব এবং সেই সাথে পরিচালকরা তাদের কাজে লাগাতে পারছেন না বলে তিনি মনে করেন।

বিজ্ঞাপন

‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’- সিনেমায় সালমান শাহর ঠোঁট মেলানো কালজয়ী একটি গান। সালমান শাহ ওপারে ভালো আছেন কিনা জানা নেই। তবে তার তো ভালো থাকারই কথা। ভক্তদের ভালোবাসা যার সঙ্গে সে তো খারাপ থাকতে পারেনা।’

প্রিয় নায়ককে আজও হৃদয়ের আবেগ মিশিয়ে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখেন ভক্তরা। সেই চিঠি সেখানে গিয়ে হয়তো পৌছায়, হয়তো পৌছায় না। তাতে কি? উত্তর পাবেনা জেনেও এভাবেই ভক্তরা আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে থাকবে।

 


আসিফের সঙ্গে সারাবাংলায় আড্ডা। পুরোটা দেখুন >>>

https://www.youtube.com/watch?time_continue=37&v=LtQWltCxTCU

 

সারাবাংলা/আরএসও/এএসজি /পিএম

মৃত্যুবার্ষিকী সালমান শাহ সেহানুর রহমান সোহান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর