Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যে নারী ঘোড়া চালায় তাকে বলে তুরঙ্গময়ী’


৫ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:২৬

পূজা সেনগুপ্ত

ঢাকায় নাকি কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, ঢাকায় নাকি কিছু হয় না। এই সমস্যার সমাধান কে দেবে? ঢাকার মানুষকেই তো এর সমাধান করতে হবে। পূজা সেনগুপ্ত একজন আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী। তিনি তার নৃত্যে মুগ্ধ করেছেন ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চায়নাসহ আরও অনেক দেশ। দারুণ নাচলেও পূজা মূলত এখন ফিজিসিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগ থেকে রীতিমতো প্রথম শ্রেণিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন, কিন্তু পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে নাচকে। তুরঙ্গময়ী নামে একটি নাচের স্টুডিও পর্যন্ত আছে তার। সম্প্রতি চায়না মাতিয়ে আসা পূজা শুক্রবার (৫ অক্টোবর) হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটারে (উন্মুক্ত মঞ্চ) পরিবেশন করবেন তার নৃত্য প্রযোজনা ‘ওয়াটারনেস’।

বহুমুখী এই শিল্পীর সঙ্গে সম্প্রতি আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছিল সারাবাংলার। সেই আলাপের চুম্বক অংশ সারাবাংলার পাঠকদের জন্য তুলে এনেছে সারারাবাংলার অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর মাকসুদা আজীজ

সারাবাংলা: আজ হাতিরঝিলের মুক্ত মঞ্চে আপনার শো। এটা নিয়ে কী ভাবছেন?

পূজা: আমি পেশা হিসেবে নাচ শুরু করার পর থেকে ঠিক করেছি যে প্রতি বছর ঢাকায় অন্তত চারটা শো করব। নানা কারণে এগুলো হয়ে উঠে না। এরপর ঠিক করলাম, এ বছর ৫ অক্টোবর একটা শো করবই। শিল্পকলায় হলের জন্য আবেদনও করলাম। যে কোনো কারণেই হোক সেটা পেলাম না। তারপর ঠিক করলাম যাই হোক আমি শো-টা বাদ দেবো না, এরপর অনেক চেষ্টা আর পরিশ্রমের পরে আজকে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।

সারাবাংলা: মুক্ত মঞ্চ, নাচের একক প্রযোজনা, ঢাকায় সব মিলিয়ে পরিস্থিতি একটু কঠিন নয় কি?

পূজা: এই পুরো বিষয়ে যেটা সবচেয়ে সহজ এবং স্বাভাবিক তা হচ্ছে মুক্তমঞ্চ। নাচ মুক্ত মঞ্চে অনেক দর্শকের মধ্যে হতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। যেটা কঠিন তা হচ্ছে একক প্রযোজনা। গোটা বাংলাদেশেই এই চিত্র খুব বিরল। খুব কম দল এ ধরণের একটা অনুষ্ঠান নিয়ে ভাববে। দর্শক খুব সীমিত। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা সেভাবে শক্তিশালী নয়। তবে এটাই আমরা প্রমাণ করতে চাই, চাইলে সম্ভব।

সারাবাংলা: আমাদের যে ইন্ডাস্ট্রিটা শক্তিশালী না এর কারণ কী?

পূজা: দেখো, ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় শব্দ। আমি নাচকে বা নাচের এমন প্রযোজনাকে তখনই ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারি যখন সেটার ফরোওয়ার্ড ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ থাকবে। এটা শুধু দক্ষতা না, নাচকে দৃষ্টি নন্দন করতে অনেক কিছু চাই। এখানে একজন কস্টিউম ডিজাইনার থেকে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার সবার করার কাজ আছে। ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ আছে, এত বড় করেও যদি বলি, আমাদের এখানে খুব বেসিক প্রয়োজন মিটানোর ব্যবস্থা হয়নি। যেহেতু হয়নি তাই কাজ করাটা আসলেই কঠিন।

 

সারাবাংলা: তাহলে কি ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী করতে পারলে আমরা এমন নাচের অনুষ্ঠান আরও অনেক পাবো?

পূজা: মোটেই না। ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী না তারও একটা শক্তিশালী কারণ আছে। সেটা হচ্ছে আমাদের দেশে সংস্কৃতি কোনো লাভজনক পেশা না। এই পেশার প্রতি মানুষের সমীহ নেই। এখানে আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটাকে যে পেশা হিসেবে নেয়া যায় তা নিয়ে কারও সচেতনতা নেই। মানুষ এখানে আসতে চায় না, এসে পরলে টিকতে পারে না। একটা নৃত্য প্রযোজনায় যে পরিমাণ অর্থ লাগে তা এসে দেখার মানুষ পাওয়া বিরল। এই সম্মানটা যতদিন না আসবে ততদিন পুরো ব্যাপারটাই এমন ঘোলাটে থেকে যাবে।

সারাবাংলা: কিন্তু দর্শোকের তো চাহিদা নেই এমন না, এই ঢাকাতেই তো অনেক বিদেশি শিল্পী হাউজফুল শো করেন। তখন টিকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।

পূজা: আমাদের দর্শক নেই বা চাহিদা নেই এটা ভাবার কোন অবকাশ নেই। এমনকি আমাদের দর্শক বেশ শিক্ষিত। কিন্তু যেটা নেই সেটা হচ্ছে বাজারে জোগান। অধিকাংশের ধারণাই নেই সংস্কৃতি যে একটি বাজার। এখানে প্রচুর অর্থের বিনিয়োগ হয়। এখান থেকে অনেক টাকা উঠে আসে। আমরাই অভিযোগ করি ঢাকায় কিছু হয় না ঢাকায় কিছু পাই না। তাহলে চাহিদা নেই এটা বলা যাবে না। কিন্তু সবগুলো জিনিসের মধ্যে মেলবন্ধন নেই।

সারাবাংলা: কিন্তু আপনাকে তো মানতেই হবে আগে যেমন শিল্পী ছিল এখন এইখানে শিল্পীর আসাটাও এত নিয়মিত না। চাইলেই অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না।

পূজা: ঐ যে বললাম এই পেশার প্রতি মানুষের সমীহ নেই। একবার আমি দেশের বাইরে শো করতে যাচ্ছিলাম আমাকে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞেস করলেন আপনি কী করেন। আমি বললাম আমি ডান্সার, আমি নাচি। উনি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করলেন, শুধু নাচেন? আমি জবাবে বললাম, না আমি একজন ফিজিসিস্ট। তখন উনি নড়ে বসলেন আচ্ছা আপনি ফিজিক্সে পড়েছেন? তো একজন ফিজিক্সে পড়া মানুষের জন্য যদি সম্মান থাকতে পারে তাহলে শিল্পীর জন্য কেন নেই? সে কি পরিশ্রম করে না, মেধার বিনিয়োগ করে না?

পরিস্থিতিটা যখন এমন হয় তখন কেউই স্রোতের বিপরীতে আসে না। খুব সংস্কৃতিমনা পরিবারের ছেলে মেয়েরাও এই পথ মাড়ায় না। যারা এই পেশাকে জানে না তারা তো আরও না। কোনো শিল্পে বিনিয়োগ না হলে পণ্য আসে না এখানেই বা তার ব্যাতিক্রম কীভাবে হবে?

সারাবাংলা: একটা কথা সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করতে চাইছি, ফিজিক্স-নাচ দুটো দু মেরুর বিষয়। শুধু ফিজিক্স পাশ করতেই মানুষের গলঘর্ম বের হয়ে যায়। আপনি দুটোতেই সাবলীল। এর উপরে আপনি ডিবেট করেছেন, ছেলেবেলায় শুনেছি খেলাধুলাও করতেন- এতসব কীভাবে?

পূজা: (হেসে মুখ লুকিয়ে) খেলাধুলার কথা একদম তুলতে চাই না আমি খুব খারাপ খেলোয়াড় ছিলাম। তবে নাচ আমি সব সময় ভালোবাসতাম। এমনকি যখন জার্মানি থেকে ফিজিক্সে পিএইচডি করার অফার পেলাম সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে নাচের উচ্চ শিক্ষার। আমি নাচটাকেই বেছে নিয়েছি।

সব কিছু একসঙ্গে করতে খুব কষ্ট হতো না, কারণ আমি সময়ের খুব সঠিক ব্যবহার করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ফিজিক্সে পড়তাম সকাল থেকে আমাদের থিওরি ক্লাস হতো, দুপুরে প্রাক্টিক্যাল। মাঝে দুপুরের খাবারের ব্রেক। আমি থিওরি ক্লাস করেই জিমে চলে আসতাম। সেখানে ব্যায়াম করে চলতি পথেই কিছু খেয়ে আবার প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করতাম। প্রতিটা কাজ সময়মতো করতাম। কিছু ফেলে রাখতাম না। ফলে সময়মতো সেটা হয়েই যেত।

সারাবাংলা: নৃত্যশিল্পে তো এমনিই বেশ শারীরিক পরিশ্রম আবার আলাদা করে জিম করা কেন? এটা কি ভালোবাসা নাকি প্রয়োজন?

পূজা: সারা বিশ্বে যা মানুষটা ‘শো ম্যান’ সে নিজেকে দৃষ্টি নন্দন করতে চায়। কারণ তাকে অনেক মানুষ দেখে। কি নৃত্য শিল্পী, কি গায়ক অথবা স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। সবাই জিমে যায়। তারা তাদের মূল গড়ণের সর্বোচ্চটুকু দেয়। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি সেরকম কেউ হবো যাকে কেউ দেখবে ফলে জিম করা।

আমি নাচ থেকে অনেক কিছু শিখিনি যেটা আমি জিম থেকে শিখেছি। আমার ইন্সট্রাক্টার শিখিয়েছেন কীভাবে ‘ইকনোমি অব এক্সপ্রেশন’ করতে হয়। একটা এক্সপ্রেশন শিল্পীর শিল্পকে আরও সুন্দর করতে পারে।

সারাবাংলা: আচ্ছা পূজা তুরঙ্গময়ী সম্পর্কে কিছু বলেন, এটা কীভাবে আসলো এখানে কী হয়?

পূজা: আমার দাদু আমাকে তুরঙময়ী বলে ডাকতেন, এর অর্থ যে নারী ঘোড়া চালায়। তো আমার ধারণা ছিল আমি বড় হয়ে এমন কেউ হব। অবশেষে আমি যখন স্টুডিও স্টাব্লিশ করি তখন এই নামটা পছন্দ করি। তুরঙ্গময়ীতে আমরা শুধু নাচি না। আমরা নাচ নিয়ে গবেষণা করি। নাচ শেখাই, অনুশীলন করি। মোট কথা আমরা এখানে নাচে বাস করি।

সারাবাংলা: পূজা আপনার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

পূজা: আপনাদের ধন্যবাদ।

সারবাংলা/এমএ/পিএ

নৃত্য পূজা সেনগুপ্ত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর