কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু আর নেই
১৮ অক্টোবর ২০১৮ ১০:২৭
বিনোদন করেসপন্ডেন্ট ।।
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ৯ টা ৫৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্কয়ার হাসপাতাল পরিচালক [মেডিকেল সার্ভিসেস] ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন।
বেলা সাড়ে এগারটায় ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন স্কয়ার হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮ টায় আইয়ুব বাচ্চু বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ড্রাইভার আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমরা তাকে মৃত অবস্থাতেই পাই। তারপরও ১৫ থেকে ২০ মিনিটি চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। পরে ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে আমরা মৃত ঘোষণা করি।’
‘হার্টের ৩০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে বেঁচে ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু’
ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন বলেন, তিনি বহুদিন হৃদরোগে ভুগছিলেন। ২ সপ্তাহ আগেও তিনি চেকআপ করিয়ে গেছেন। এর আগে ২০০৯ সালে তার হার্টে রিং পরানো হয়। আর ২০১২ সালে ফুসফুসে পানি জমার কারণে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুকে।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে আসেন তার অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রংপুরে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এলআরবি ব্যান্ডের জনপ্রিয় এই ভোকাল। ৫৬ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। সংগীত জীবনের দীর্ঘ চার দশকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার কণ্ঠ দেওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
‘জাতীয় ঈদগাহে জানাজা, অন্তিম শয়ান চট্টগ্রামে’
এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতা পান তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ [১৯৮৮] দিয়ে।
১৯৯১ সালে বাচ্চু এল আর বি ব্যান্ড গঠন করে। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ এবং ‘তবুও’ বের হয়।
‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, গতকাল রাতে’ গানগুলো সে সময় দারুণ জনপ্রিয় হয়। তার গাওয়া ‘চলো বদলে যাই’ বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই।
১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতেও প্লেব্যাক করেছেন। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান।
২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম ‘বলিনি কখনো’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম ‘যুদ্ধ’। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ ২০১৫ সালে বাজারে আসে। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।
গিটারে সারা ভারতীয় উপমহাদেশে আইয়ুব বাচ্চু বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুণভাবে অণুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন।
২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’ ও ‘হলুদ বাতি’ শিরোনামের দুটি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
সারাবাংলা/টিএস/এসএমএন/আরএসও/জেডএফ/এমএম