Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফর্সা মানেই সুন্দর নয়: নন্দিতা দাশ


৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:০৬

নন্দিতা দাশ

।।এসএম মুন্না, লিট ফেস্ট থেকে ।।

ফর্সা মানেই সুন্দর নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের বিকল্পধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা-নারীবাদী সমাজকর্মী নন্দিতা দাশ। একই সঙ্গে তিনি নারীর গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল করে তুলতে প্রসাধনী সামগ্রীর বিজ্ঞাপনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন ‘একটু কালো বর্ণের মেয়েদের কেমন করে দেখছে সমাজ! ভাবুন তো? বিউটি প্রোডাক্ট বেড়েই চলেছে। চামড়া ফর্সা করার জন্য কত ধরনের ফেইসওয়াস যে বাজারে এসেছে! আমার মতে, এই পণ্যগুলো নারীদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে দিচ্ছে। আমি যখন নারীদের নিয়ে একটি ক্যাম্পেইন করেছি, তখন দেখলাম বিউটি প্রোডাক্টগুলো ওদের মনকে কিভাবে ছোট করে দেয়। কেউ কেউ তো আত্মহত্যা করতেও গিয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা লিট ফেস্টের অষ্টম আসরের দ্বিতীয় দিন বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘ব্রেকিং ব্যাড’ নামের এক সেশনে এসে তিনি কথা বলেন। নন্দিতা দাশ বলেন, ‘কোনো ধরণের যৌন নিপীড়ন আমি একেবারেই সহ্য করব না। নারীদের বলছি, তোমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখো, বিশ্বাস হারিও না। সহ্য করতে করতে নিপীড়করা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর না, এবার এসো প্রতিবাদ করো।’

নন্দিতা দাশ কথা বলেন তার অভিনীত সিনেমা ‘ফায়ার’ নিয়ে। দীপা মেহতার পরিচালনায় এ সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছিলেন এক সমকামী নারীর চরিত্রে। এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ও সিনেমাটি মুক্তির পর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। কট্টরপন্থীদের কঠোর সমালোচনা ও প্রেক্ষাগৃহে হামলার ঘটনায় সেন্সর বোর্ড একাধিকার এই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। পরে অবশ্য ছবিটিকে আটকে রাখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

নন্দিতা দাশ বলেন, ‘এখন ভারতের আদালতে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সময়ে একজন নারী অভিনেত্রী বোল্ড ক্যারাক্টার প্লে করবে, তাও আবার সমকামী নারীর চরিত্রে, ভূভারতের সংস্কৃতি কি তা মেনে নেবে? সমাজ নারী স্বাধীনতার কথা বললেও সে সময়ে আমাদের সে সিনেমাটিকে তারা মেনে নিতে পারেনি। আমার পরিচিতজনরা দেখা হলেই বলত, ‘আচ্ছা আপনি এই বাজে সিনেমাটিতে কেন অভিনয় করলেন বলুন তো! আচ্ছা আপনি তো সমকামী চরিতে অভিনয় করেছেন, বাস্তবেও কি আপনি সমকামী?’ আমি যখন বিমানে উঠেছি অন্য দেশে যাব বলে, তখনও সেই প্রশ্ন। প্রশ্ন পিছু ছাড়েনি আমাকে।’

বলিউডের আলোচিত ‘ফেরাক’ সিনেমার পরিচালক নন্দিতা দাশ বলেন, ‘ফেরাক-সিনেমা মুক্তির পর সবাই ভাবল, এই সেরেছে! একজন নারী অভিনেত্রীর সিনেমা মুক্তি পেল! পরিচালক হিসেবে নয়, আমার পরিচয় হল আমি নারী, আমার পরিচালক সত্তার কথা বেমালুম ভুলে গেলো ওরা।’

তারপরেও সমালোচনায় দমে যাননি পরিচালক নন্দিতা দাশ। বললেন, ‘আমি মোটেও দমে যাইনি। এতটুকুও লজ্জা পাইনি। নিজের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আমি নিজেই করে নিয়েছি।’

বলিউডের আইটেম গানগুলোতে নারীদের বাজেভাবে প্রদর্শন করার কঠোর সমালোচনাও করেন নন্দিতা দাশ। বললেন, ‘কজন পরিচালকের মুখ্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে, নারীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কিভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন। ভায়োলেন্সের ব্যাপারটা কিভাবে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলবে, সেটাই ভাবতে থাকে ওরা। ব্যাপারটি ভীষণ অস্বস্তিকর।’

নন্দিতা দাশের জন্ম ১৯৬৯ সালে মুম্বাই নগরে। হিন্দি ভাষার পাশাপাশি এই অভিনেত্রী তিনটি বাংলা ছবি, মালায়ালাম, তামিল, উর্দু, রাজস্থানী, কনড়সহ ভারতের বেশ কিছু  আঞ্চলিক ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ পর্যন্ত ১০ টি ভাষার ৪০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে ফায়ার, ১৯৪৭ আর্থ, বাওয়ান্দার, আজাগি, বিফোর দ্য রেইনস অন্যতম।

নন্দিতা দাশের সমাজ ও রাজনীতি-সচেতনতা তার সিনেমায় স্পষ্ট। তার অভিনীত ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার সিনেমা ‘১৯৪৭ আর্থ’-এ অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিষেক অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২০০৭ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত মালায়ালাম-ইংরেজি সিনেমা ‘বিফোর দ্য রেইন’ মূলত ভারতের ইংরেজ শাসন এবং এর প্রভাবকেন্দ্রিক।

তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘ফিরাক’। ছবিটি হিন্দি, উর্দু এবং গুজরাটি ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল ২০০৮ সালে। ‘মান্টো’ তার দ্বিতীয় সিনেমা। লিট ফেস্টের প্রথম দিন উৎসবে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।

২০০৯ সালে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ফ্রান্স সরকার তাকে ‘অড্রে দেস আর্টস অ্যাট দেস লেটারস’ সম্মাননায় ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এশিয়ান ফেস্টিভ্যাল অব ফার্স্ট ফিল্ম পুরস্কার’, ‘নন্দী পুরস্কার’, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব কেরালা পুরস্কার’সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। দুইবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি শিল্পকলায় অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী ফোরামের নিকট থেকে সম্মানিত হন।

সারাবাংলা/পিএ

অভিনেত্রী ঢাকা লিট ফেস্ট নন্দিতা দাশ পরিচালক মান্টো

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর