কথনে মুগ্ধতা ছড়ালেন অভিনেত্রী টিলডা সুইনটন
১০ নভেম্বর ২০১৮ ১০:৪২
।।সালেহীন বাবু ।।
টিলডা সুইনটন। ঢাকা লিট ফেস্টের অন্যতম পরিচিত মুখ। এর আগেও লিট ফেস্টে এসেছিলেন হলিউডের এই অভিনেত্রী। সেবার শুনিয়েছিলেন তার চলচ্চিত্রের নানা গল্প কথা। এবার তিনি এসেছেন ডকুমেন্টরি ফিল্ম বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে। ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ছিল অস্কার, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোবজয়ী টিলডা সুইনটনের বিশেষ অধিবেশন ‘রিডিং’। তিনি হলিউডের একজন নামী অভিনেত্রী হয়েও বহু মঞ্চ প্রযোজনার কাজ করেছেন। এর পাশাপাশি ইন্সটলেশন আর্ট নিয়েও কাজ করে থাকেন তিনি।
‘দি লাস্ট অ্যান্ড ফাস্ট ম্যান’ রিডিংয়ে এর শুরুতেই ঢাকার ভক্তদের সামনে কথা বলেন তিনি। যেখানে তিনি বলেন, ‘সমাজে থাকতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু নিজের বিচার নিজে করতে হবে। তাই বলে বিচারের নামে খামখেয়ালিপনা করা যাবে না। কোন কিছু জানতে বাধা নেই। জানতে হবে সেটাই যেটা সঠিক।’
টিলডা সুইনটন বলেন, ‘কেউ অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না। কারণ অতীত না থাকলে বর্তমান আসবে না। আবার বর্তমান না থাকেলে ভবিষ্যতের প্রশ্নই উঠে না। অতীতে যে বিষয় মনে হত সম্ভব নয় বা হবে না, বর্তমানে তাই হচ্ছে। ঠিক তেমনি এখন যা কিছু অসম্ভব মনে হয় ভবিষ্যতে তাই সম্ভবপর। তাই এগিয়ে যেতেই হবে।’
তার এই রিডিং পর্বের বিশেষ দিক ছিল প্রতিটি প্যারা পড়া শেষে একবার করে ‘প্যাশন’ বা ধৈর্য্য শব্দটি বারবার বলা বা উচ্চারণ করা।
রিডিং পর্ব শেষে দেখানো হয় টিলডা সুইনটন পরিচালিত একটি প্রামাণ্যচিত্র। যেখানে বেশকিছু কুকুরছানা নিয়ে আনন্দ সময় কাটানোর দিকগুলো প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।
১৯৬০ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি । ১৯৯৭ সাল হলিউড ছবিতে অভিষেক হয় তার। থ্রিলার ধাঁচের চলচ্চিত্র ‘দি ডিপ এন্ড’-এ অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তবে অরলান্ডোতে অভিনয়ের পর তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃতি লাভ করেন।টিলডা সুইনটন চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু ১৯৮৫ সালে।
পরীক্ষামূলক ছবির ব্রিটিশ পরিচালক ডেরেক জারমানের হাত ধরে ‘কারাওয়াজ্য’ ছবির মাধ্যমে তার পথচলা শুরু। এই জুটি আরও সাতটি ছবি উপহার দেন ভক্তদের। এর মধ্যে ‘দ্য লাস্ট ইংল্যান্ড, ‘দ্য গার্ডেন’, ‘ওয়ার র্যাকুইয়াম’, ‘এডওয়ার্ড টু’, আর ১৯৯৪ সালে জারমানের মৃত্যুর আগে ‘ইউটেনস্টাইন’ এর মতো ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য।
টিলডা সুইনটন ‘অ্যাডওয়ার্ড টু’ ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৯১ সালের ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। একে একে লিন হার্শম্যান লিসন, জন মেবারি, জিম জারমুশ, ওয়েস অ্যান্ডারসন, জোয়েল ও ইথান কয়েন এবং লুকা গুয়াদাইনিনোর সাথে কাজ করে দর্শকদের ‘দ্য লাভ ফ্যাক্টরি’, ‘আই অ্যাম লাভ’, ‘অ্যা বিগার স্প্ল্যাশ’-এর মতো চমৎকার কিছু ছবি উপহার দিয়ে গেছেন। এ বছর নভেম্বরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত ছবি ‘সাসপিরিয়া’।
টিলডা, জুন হো-এর সাথে আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ছবি ‘স্নোপিয়ার্সার’ এবং ‘ওকযা’তেও কাজ করেছেন। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ানো রম্য-চলচ্চিত্র ‘ট্রেইনরেক’ এবং জনপ্রিয় মার্ভেল স্টুডিও প্রযোজিত ব্লকবাস্টার ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ ছবিতে নিজের অভিনয়শৈলী দিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। ‘মাইকেল ক্লেটন’-এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য বাফটা এবং অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) দুটোতেই ২০০৮ সালের শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র অভিনেত্রীর পুরষ্কার পান তিনি।
সুইনটন ২০১১ সালে লিন রামসের পরিচালনায় ‘উই নিড টু টক আবাউট কেভিন’-এ অভিনয় করেন। ছবিটি প্রথম দেখানো হয় কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায়। সেখানে সমালোচকদের মুগ্ধ করা ছবিটি একাধিক পুরষ্কার বাগিয়ে নেয়, আর গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটার মতো সম্মাননায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান সুইনটন।
জমজ সন্তানের এই গুণী জননি থাকেন স্কটিশ হাইল্যান্ডসে।
সারাবাংলা/পিএম