‘ক্যান্সার’ আমাকে জীবনের মূল্য বুঝতে শিখিয়েছে- মনীষা কৈরালা
১০ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০৩
।। এসএম মুন্না, লিট ফেস্ট থেকে ।।
আগের দিন ভক্ত-অনুরাগীদের সামনে তুলে ধরেছিলেন নিজের চলচ্চিত্র জীবন ও পথ চলার নানা কাহিনী। সে দিনও হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা তার কথা মুগ্ধ হয়ে শুনলেন। এবারও শুনলেন হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা। এবার তিনি বললেন নিজের চিকিৎসার কথা। ক্যান্সার জয় করার কথা। সেই সঙ্গে তিনিও কাঁদলেন, অন্যকেও কাঁদালেন। তিনি বললেন, ‘ক্যান্সার আমাকে বদলে দিয়েছে, আমি ভেতর থেকে বদলে গেছি। আমার পৃথিবী বদলে গেছে। আমি কখনও মনে করিনি আমাকে আর বেশ কিছুদিন বাঁচতে হবে। তবে বিশ্বাস ছিল, দৃঢ় ছিলাম, আমি একদিন পুরোপুরি সুস্থ হবো। আমি এখন সুস্থ। তবে আমি কখনও মা হতে পারবো না।’ এ কথা যখন বলছিলেন তখন মনীষার যেন গলা ধরে আসছিল। চোখে কোণে পানি। এ সময় হলভর্তি দর্শক শ্র্রোতাদের মধ্যেও কেউ কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন বলিউড অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। লিট ফেস্টে মূল মঞ্চে শুক্রবার প্রথমবার দর্শকদের সামনে আসেন তিনি। সেখানে মন খুলে কথা বলেন এই বলিউড অভিনেত্রী। কথা বললেন নিজের প্রকাশিত বই ‘হিল্ড’ নিয়ে। শোনালেন ক্যান্সার আক্রান্ত ও চিকিৎসাকালীন অভিজ্ঞতার কথা। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে হলভর্তি দর্শকরাও শুনলেন তার কথা।
মনীষা কৈরালা বলেন, ‘২০১২ সালে ১০ ডিসেম্বরের কথা, সে দিন আমার দিকে মৃত্যু তাকিয়ে ছিল। কিন্তু আমি মরতে চাই না। চোখ বন্ধ করে ছিলাম, চোখ মেলে দেখি আমার আকাশ কালো হয়ে আসছে। মনোবল দৃঢ় রাখার চেষ্টা করেছি। নিজেকে নিজেই আশ্বস্ত করলাম, আমাকে এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে’।
এবরপর নিজের লেখা বই ‘হিল্ড’ থেকে বেছে বেছে কয়েকটি লাইন দর্শকদের পড়ে শোনান মনীষা কৈরালা। এ সময় তার চোখে কোণে পানি জমা হয়। মনীষা বলেন, ‘আমি জানি না আমার ক্যান্সার হওয়ার পর কতটা সময় পার হয়ে গেছে। আমি যখন জানতে পারলাম আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ। ৫৬ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্য্যে আছি। তখন আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম কী হবে আমার। আমি কী অল্প সময় বেঁচে থাকবো, নাকি ক্যান্সার জয়ী হবো’।
মনীষা বলেন, ‘সে সময়গুলো আমি জীবনের কঠিন বাস্তবতার মধ্যে ছিলাম। কিছুটা বিষন্ন ছিলাম। অস্বস্তি লাগতো। শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। পাকস্থলি অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গিয়েছিল। মেডিকেল পরীক্ষা করার পর জানা গেলো আমার লিড স্টেজে ক্যান্সার। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরাও আমাকে বলতে চাচ্ছিলেন না যে আমার ক্যান্সার হয়েছে। আমি বিস্ময় নিয়ে চিকিৎসকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অনেক পরে আমাকে জানানো হলো ‘আমার জরায়ুর ক্যানসার’। বাঁচতে হলে সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা শোনার পর মনে হলো আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু।’
মনীষা কৈরালা আবারও বই থেকে বেশ কিছু লাইন পড়ে শোনান। তারপর তিনি আবার বলেন, ‘ক্যান্সারের কথা শোনে আমার বন্ধু, পরিবার সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো কোথায় আমার চিকিৎসা হবে। অস্ত্রোপচার হবে। কেউ বলল যুক্তরাষ্ট্র, কেউ ব্যাংকক, কেউবা মুম্বাই। তার সঙ্গেও ছিল গভীর বেদনার বিষয় যেটা ছিল আমি কখনও মা হতে পারবো না।’
মনীষা কৈরালা বলেন, ‘মুম্বাইয়ের চিকিৎসকরা যখন বললেন এই সার্জারি খুবই জটিল। তখন আমার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্খীদের আবারও পরামর্শ। এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম। যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসা অনেক অনিশ্চয়তার বিষয়। এ জন্য শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। কখন সেরে উঠবো। এই নিয়ে আমার বইয়ের একটা চ্যাপ্টার আছে। নাম ‘ইন্তেজার।’ সেখানে এই বিষয়ে বিশদ লেখা আছে।
কথা বলতে বলতে মনীষা কৈরালা যেনো খানিকটা সময় নিলেন। বললেন, ‘ক্যান্সার চিকিৎসায় দুই জায়গায় শর্ত থাকে। এক অস্ত্রোপচার সফল হতে হবে। দুই অস্ত্রোপচার পরবর্তী চিকিৎসা সফল হতে হবে। তার সঙ্গে রয়েছে কেমোথেরাপি। আমার সব ধরনের চিকিৎসা সফল হওয়ার পর চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করলাম আমি কি বাঁচবো এখন? ছয় মাসে ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার পর আমাকে বলা হলো ৩ বছর পর্যন্ত আবারও ক্যান্সার বেড়ে ওঠার ৯০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, এখনও আছি।’
শেষ দিকে একটাই কথা বললেন মনীষা। ‘লাইফ ইজ ফুল অব পজেটিভ স্টোরিজ’। এর আগে জীবন ইতিবাচক গল্পের সম্ভার উল্লেখ করে মনীষা কৈরালা বলেন, ‘আমি মনে করি যেকোনও পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষা দেয়। আমি ক্যান্সারের প্রতি কৃতজ্ঞ। ‘ক্যান্সার’ আমাকে জীবনের মূল্য কী তা শিখিয়েছে। ভীত হয়ে মরে যাওয়ার জন্য কখনই প্রস্তুত ছিলাম না। অনেক মানুষের কাছে আমার অনেক আশা ছিল যে তারা এগিয়ে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কিছুই হয়নি। তবে কিছু মানুষ সে সময়ে আমার পাশে এসেছিলেন মহান মানুষ রূপে। এ থেকেই বলতে পারি পৃথিবীতে এখনও ভালো মানুষ আছে। ’