হাসিনা আ ডটার’স টেল: প্রত্যাশার পুরোটাই পূর্ণ
১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১০:৩১
।। মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক ।।
ঢাকা: সাধারণেই অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী… বঙ্গবন্ধুকন্যার সাধারণ থাকা, সাধারণের মতো কথা বলা আর সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়া— এই তিনে মুগ্ধ হয়ে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এমন শিরোনামে একটা স্টোরি লিখেছিলাম। সেটা ছিলো নিউইয়র্কে একটি ডিনার পার্টির কিছুটা সময় নিয়ে। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে হাসিনা আ ডটার’স টেল দেখে সেই ধারণা পূর্ণতা পেল। রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে তখন চলছিল ডক্যুড্রামাটির দ্বিতীয় প্রিমিয়ার শো। শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাংবাদিকতা জগতের মানুষেরা এসেছিলেন দেখতে। হলজুড়েই ছিলো মুগ্ধতা। পুরো এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে দর্শক উপভোগ করেছে কাহিনী চিত্রটি। কিন্তু শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কাহিনী চিত্র কি উপভোগ করার মতো? দুই বোন যখন একটার পর একটা জীবনের গল্প বলে চলছিলেন, তখন কোনোটিতে দম ধরে রেখে দীর্ঘক্ষণ পরে কষ্টমাখা বড় শ্বাস ছাড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল আশপাশের দর্শকদের দিক থেকে। আবার কোনো কোনো গল্পে কিংবা কাহিনীতে হাসি ছড়িয়ে পড়ছিল গোটা হলজুড়ে।
দুই বোন মিলে তাদের জীবনের সাধারণ কথাগুলো শোনালেন, তেমনি শোনালেন জীবনের কঠিনতম সময়ের কাহিনীও। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী সময়ের কী দুর্বিসহ জীবন পার করতে হয়েছে, তা এই ডক্যুড্রামা পুরোপুরি স্পষ্ট করেছে।
কাহিনীর উপস্থাপনায় মুন্সিয়ানা ছিল… ফলে পুরো সময়টিই ছিল মনযোগ ধরে রাখার মতো।
মূল উদ্দেশ্য শেখ হাসিনার গল্পটি বলা। আর সে কারণেই এর নাম ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’। উপস্থাপনার ঢং এমন— কখনও ছোট বোন শেখ রেহানা বললেন তার বোনের গল্প, কখনও হাসিনা নিজেই বললেন তার গল্প।
ফিল্মটি তৈরি নিয়ে কোনো ঢাক-ঢোল কিংবা হুলুস্থুল ছিল না। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও অ্যাপেলবক্স ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় এটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করেছেন রেজাউর রহমান খান পিপলু। সিনেম্যাটোগ্রাফি করেন সাদিক আহমেদ। প্রযোজনায় ছিলেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও নসরুল হামিদ বিপু।
যতই সাধারণ বলা হোক না কেন, শেখ হাসিনার জীবনটি অনেক বেশি নাটকীয়। অসংখ্য ছোট বড় সুখ-দুঃখ-কষ্ট-আনন্দের গল্প। আনন্দটা কমই, প্রায় পুরোটাই কষ্টের। তবে ফিল্মে তার বর্ণনা ছিলো সাবলীল। জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলোকে এক সুতোয় বাঁধার চেষ্টা ছিল। আর তাতে সফল হয়েছেন নির্মাতা।
গল্পচ্ছলে জীবনের গল্পগুলো দুই বোন জানাচ্ছিলেন। কখনও মেঝেতে আসন পেতে বসে নাতিকে কোলে নিয়ে, কখনও সোফায় কিংবা চেয়ারে, কখনও দাঁড়িয়ে কিংবা হেঁটে হেঁটে শোনাচ্ছিলেন জীবনের গল্প। সেসব গল্পে কখনও হেসেছেন, কখনও কেঁদেছেন। ঘটনাগুলোর বর্ণনায় সংশ্লিষ্ট বিষয় কিংবা বস্তুর বাস্তব চিত্রায়নের প্রয়াস ছিল। বেলজিয়ামের বাড়ি, ক্যান্ডললাইট ডিনার, সীমান্ত পার হয়ে জার্মানি যাওয়া, সেখানকার বসবাস, ভারতের যে বাড়িতে ছিলেন, কিংবা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার পরিদর্শন— এসব কিছুকেই যতটাসম্ভব বাস্তবসম্মতভাবে দেখানোর প্রচেষ্টা ছিল নির্মাণ কাজে।
একটি কথা স্পষ্ট করেই বলা যায়, গল্পগুলো শুনেই শেষ হয় যায়নি, তার অনুরণন থেকে গেছে দর্শকদের মাঝে। এর কোনোটি তাদের ভাবিয়েছে, কোনোটি কাঁদিয়েছে, কোনোটিতে খুশি-কিংবা আনন্দের উদ্রেক করেছে বটে। তবে সব মিলিয়ে একটি গর্বের কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে।
ড্রামাটিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহনা ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনার জীবনের ওপর যে পূর্ণ প্রভাব এখনও রেখে চলেছেন, তার প্রকাশ নানাভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগের সময়টিতে একটি সাধারণ পারিবারিক আবহে যতটা হাসিখুশি থাকার উপকরণ থাকে, তা দেখানোর প্রয়াস রয়েছে এই ডক্যুড্রামায়। বিরল কিছু ছবি, ভিডিওচিত্র এই ফিল্মে দেখতে পাবেন দর্শক।
কখনও বাবা-মায়ের প্রিয় মেয়েটি, কখনও নিজেই মমতাময়ী মা, কখনও প্রিয় বোনটি হয়ে এই ফিল্মে উপস্থাপিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। কাহিনীর ধারাবাহিকতায় রাজনীতির যতটুকু না আনলেই নয়, ততটুকুই এসেছেন। তাতে তিনি উপস্থাপিত হয়েছেন গণমানুষের নেত্রী হিসেবে। তবে অতি সচেতনভাবে এতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
তবে শেখ রেহানার মুখে একটি কথা খুবই গুরুত্ব রাখে। তিনি বলছিলেন, ছোটবেলা থেকে শেখ হাসিনা খুব একটা কাজ করতে চাইতেন না; নিজের রুমে ঘুমিয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন। সে কারণে মা তার রুমের নাম দিয়েছিলেন অলসখানা। কিন্তু আজ? শেখ হাসিনা একজন কর্মঠ প্রধানমন্ত্রী, সদাব্যস্ত তার জীবন। শেখ রেহানা বলেন, খুব ইচ্ছা করে, মাকে যদি কাছে পেতাম বলতাম— তোমার অলস মেয়েটি আজ কত কী করছে!
দুই বোনের ওপর মায়ের প্রভাব কতটা ছিল, ভালোবাসা কতটা যে প্রগাঢ় ছিল, আর মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কতটাই যে ছিলেন কষ্টসহিষ্ণু, স্নেহবৎল আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার যে ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা; তা নানা কথা ও মন্তব্যে ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মা ও তার নিজের বয়সের খুব একটা পার্থক্য ছিল না। ফলে তারা ছিলেন বন্ধুর মতো। শেখ রেহানা বলেছেন, তিনি ছিলেন মায়ের কাছাকাছি। মায়ের রিপোর্টার। ভাইবোন কে কী করছে তা মাকে জানানোই ছিল কাজ। কাহিনীতে বারবার এসেছে টুঙ্গীপাড়ার কথা। টুঙ্গীপাড়ার বাড়িটিই তাদের শেকড়। শেখ হাসিনা এও জানিয়েছেন, রাজনীতিতে যখন অবসর নেবেন, টুঙ্গীপাড়ার বাড়িতে গিয়েই থাকবেন।
যেখানেই যাই, যত কিছুই করি নিজেদের শেকড়কে আমরা কখনোই ভুলে যাই না, ভুলব না— এই ছিলো দুই বোনের অভিব্যক্তি। যাকে অঙ্গীকারও বলা চলে। আর এই সব সাধারণেই তারা হয়ে ওঠেন অসাধারণ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিনে ডক্যুড্রামাটির ট্রেলার মুক্তি পায়। তখন থেকেই অপেক্ষা একটি অভিনব কিছু দেখার। ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ সে প্রত্যাশার পুরোটাই পূরণ করেছে।
আরও পড়ুন-
সন্ধ্যায় ‘হাসিনা-আ ডটার’স টেল’ এর প্রিমিয়ার
সারাবাংলা/এমএম