‘হক এর ঘর’ মুক্তি পাচ্ছে ইউটিউবে
২৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৪
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই-এর দর্শন অনুসারীদের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে ফাখরুল আরেফীন খান পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হক এর ঘর’। এটি অনলাইনে মুক্তি পাচ্ছে ২৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার)। গড়াই ফিল্মস ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দেয়া হবে প্রামাণ্যচিত্রটি।
আরও পড়ুন : নিকিয়াঙ্কার পর বিয়ের লাইনে কপিল শর্মা
বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই-এর তিরোধানের পর থেকে আখড়া বাড়ির সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল লালন মাজার শরিফ ও সেবা সনদ কমিটির মাধ্যমে। লালন অনুসারী প্রকৃত বাউলদের সাধন-ভজন, দীক্ষা, দক্ষিণা অনুষ্ঠান (দোল পূর্ণিমা ও পহেলা কার্তিক) প্রভৃতি তদারকি করতেন তারাই। পরবর্তীতে তাদের সেই অধিকার কেড়ে নেয়া হয়।
পাকিস্তান শাসন আমলে লালন ফকিরের গান সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য লালন মাজার চত্বরে লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পর লালন লোকসাহিত্য কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে লালন একাডেমী করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে কুষ্টিয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম বাউলদের মাজার থেকে পিটিয়ে বের করে দিয়ে লালন মাজার দখল করে নেয়। সে সময়ের লালন মাজার শরীফ ও সেবা সদন কমিটির সভাপতি ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু সাঁই (প্রয়াত) এর ভাষ্য মতে ১৯৮৪ সালের ১৭ ই অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক (সভাপতি, লালন একাডেমী) ধর্মসভা ও বে-শরিয়তি পথ থেকে ফিরে আসতে বাউলদের জন্যে তওবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ঐ সময় উপস্থিত বাউল ফকিররা জেলা প্রশাসকের আদেশ অমান্য করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে জেলা প্রশাসক লাঠি চার্জের নির্দেশ দেন। রিজার্ভ পুলিশ লালন ভক্তদের বেদম প্রহার করে মাজারের সীমানা থেকে বের করে দেয়।
বাউলদের আদি সংগঠন লালন মাজার শরীফ ও সেবা সনদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু সাঁই (প্রয়াত), সাধারণ সম্পাদক ফকির শামসুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ ফকির ইয়াসিন সাঁই-কে ভয় দেখিয়ে জেলা প্রশাসক মাজারে রক্ষিত সিন্দুকের চাবি নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে লালন মাজারের অধিকার ফিরে পেতে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতার পর ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি বাউলরা আইনের আশ্রয় নেন। কুষ্টিয়া সহকারী জজ আদালতে লালন মাজার শরীফ ও সেবা সদন কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মন্টু সাঁই (প্রয়াত) লালন মাজারে তাদের স্বত্ব ও অধিকার ফিরে পেতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, ‘নালিশি সম্পত্তিতে বাদীগণের স্বত্ব স্বার্থ দখল থাকার ঘোষণা দেয়া গেল’। আদালতের রায়ের পর বাউলদের কাছে মাজার হস্তান্তর না করে বিবাদীরা জেলা জজ আদালতে আপিল করে। এ অবস্থায় ১৯৯৭ সালে লালন মাজার শরীফ ও সেবা সদন কমিটি নিম্ন আদালতে রায় বাস্তবায়ন করতে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করে। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। লালন একাডেমি তথা সরকার ২০০২ সালে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সাঁইজীর মাজারে প্রকৃত লালন অনুরাগী বাউলদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও প্রকৃত লালন দর্শন চর্চা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে হক-এর ঘর নামক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান নির্মাণ করেছেন ‘হক এর ঘর’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র।
সারাবাংলা/পিএ
আরও পড়ুন : উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে আমজাদ হোসেন
আরও দেখুন :
৭ প্রশ্নে ইন্দ্রনীল [ভিডিও স্টোরি]