‘অভিমান আর অভিযোগ নিয়ে নাটক ছেড়েছি’
৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:২৯
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
স্পর্শিয়া হাসতে ভালোবাসেন। প্রায়ই মৃদু হাসেন কথার ফাঁকে ফাঁকে। যেন রুপকথার কোন রাজকুমারি এসে তার ভেতর ভর করে তখন। তার মায়াবী কণ্ঠ আর মোহিত হাসি মোহাবিষ্ট করে রাখে সামনের মানুষটিকে।
তবে সেসব মায়ার স্তর পেরিয়ে, নিজেকে সামলে রেখে, কথা হলো স্পর্শিয়ার সঙ্গে। প্রসঙ্গ; ক্যারিয়ার এবং কাজ। নাটক ছেড়েছেন তিনি। মনোযোগী হয়েছেন সিনেমায়। কিন্তু কেন? কোন অভিমান? এরকম প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হলো তাকে। স্পর্শিয়া বিনয়ের সঙ্গে দিয়েছেন সেগুলোর উত্তর।
- যতটুকু জানলাম, আপনি সিনেমায় থিতু হতে চাইছেন। বাংলা সিনেমার বর্তমান যে মন্দাভাব চলছে তাতে এমন সিদ্ধান্ত কতোটা যৌক্তিক?
আমি অভিনেত্রী। অভিনয় আমার পেশা। এতোদিন টেলিভিশনে অভিনয় করেছি, এখন সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি। সেকারণে অভিনয় করছি। আর বাংলা সিনেমার এখনকার অবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইলে অনেক কথা এসে যায়। নানান মানুষের নানা মত আছে এ বিষয়ে। তবে আমি মনে করি আমরা যদি সিনেমায় কাজ না করি তাহলে সিনেমার উন্নতি হবে না। সিনেমার অবস্থা ভালো না বলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে সেটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
- ছোটপর্দা ও বড়পর্দা- দুটো দুরকম প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম দুটির মধ্যে কি ধরনের পার্থক্য রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
পার্থক্য অনেক। ছোটপর্দায় তো মানুষ চাইলেই টেলিভিশন খুলে দেখতে পারে। আর বড় পর্দায় মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে তারপর দেখে। টেলিভিশনে অভিনয়ের অনেক কিছু ফাঁকি দিতে পারি। বড় পর্দায় সেটা সম্ভব নয়। সুযোগ নেই বললেই চলে। মানুষ খুব সহজে ভুলটা ধরে ফেলে। তাই অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয় সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে।
- এই যে ছোটপর্দাকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনার কি মনে হয় না নাটকের ক্যারিয়ার আরও লম্বা করা যেতো ? আরও অনেক মানসম্মত কাজ করতে পারতেন?
সিনেমায় কি মানসম্মত করা সম্ভব না? নাটকে তো টানা আট বছর কাজ করলাম। নাটকের যা অবস্থা তাতে আমি হতাশ। এরচেয়ে সিনেমা নিয়ে আমি অনেক বেশি আশাবাদি। দেখুন, সিনেমা করার জন্য নাটক ছাড়িনি। নাটকে এখন যে সিস্টেম চলছে সেই সিস্টেমের কারণে অনেক অভিমান আর অভিযোগ সঙ্গী করে নাটক ছেড়েছি। নাটকের ভালো স্ক্রিপ্ট নেই, চরিত্র নেই, বাজেট নেই। এতোসব সমস্যা নিয়ে নাটক করা সম্ভব নয়।
- ‘বন্ধন’ সিনেমার কাজ শেষ করেছেন। ‘আবার বসন্ত’ সিনেমার কাজ শুরু করলেন। নতুন সিনেমাটিতে কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন?
অনেক আগে ‘বন্ধন’ সিনেমার কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরে ছবিটি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আমরা টিম মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের পরে মুক্তি দেয়ার।
আর ‘আবার বসন্ত’ সিনেমায় আমাকে মূল চরিত্রে দেখা যাবে। সিনেমায় আমি একজন স্বাধীনচেতা মেয়ে। আমার নিজস্ব ব্যবসা আছে। আমি অন্য কারও ওপর নির্ভরশীল নই। নিজেই নিজের মতো চলি। এছাড়া এই সময়ে আমি সত্যিকারে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াই।
এতোটুকুই বলতে পারব। আর বাকি গল্প নিয়ে জিজ্ঞেস করবেন না। এখনই সব ফাঁস করে দেয়া ঠিক হবে না।
- দুটোই অনন্য মামুনের সিনেমা। পরিচালক অনন্য মামুনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের জেরেই কি তার সিনেমায় অভিনয় করছেন?
আমার এরকমটা মনে হয় না। কারণ মামুন ‘বন্ধন’ সিনেমার পরও আরও কয়েকটি সিনেমা বানিয়েছেন। সেগুলোতে আমি অভিনয় করিনি। ‘আবার বসন্ত’ সিনেমায় আমাকে নির্বাচন করার কারণ জানতে চেয়েছিলাম অনন্য মামুনের কাছে। তখন তিনি আমাকে বলেছেন, এই চরিত্রের জন্য আমি মানানসই। সেকারণে আবার তার সঙ্গে কাজ করছি।
- ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিংবা লবিংয়ের খুব বেশি প্রভাব রয়েছে বলে কি মনে করেন?
অবশ্যই। আমি সেটার ভুক্তভোগী। আমি পিআর মেইনটেইন করতে পারি না। আবার ভাইয়া বলে তেলানো আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। এজন্য অনেক জায়গায় অবহেলিত হয়েছি। যা কিছু আশা করতাম তা পাইনি। আমার ক্ষেত্রে আমি কখনো লবিংয়ের সুযোগটা নিতে চাই না। এটা আমার আত্মসম্মানে বাধে। আসলে কাজের মাধ্যমেই আমি এগিয়ে যেতে চাই।
- অনলাইনের জন্যও আপনি কাজ করেছেন। এই মাধ্যমটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অনলাইনের জন্য আমি তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। এখন প্রযুক্তির যুগ। মানুষের হাতের মুঠোয় সবকিছু চলে আসছে। অনলাইন কনটেন্টের দরকার আছে। তা নাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। অনলাইনে বিশ্বের মানুষ এখন নিজের মতো করে অনুষ্ঠান দেখছে।
- ওয়েব ফিল্ম মানেই তো অযাচিত যৌনতার প্রভাব। এধরনের প্রভাব রুখতে ওয়েব ফিল্মের সেন্সরের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। অভিনেত্রী হিসেবে আপনি কোন দিকে অবস্থান নেবেন- পক্ষে না বিপক্ষে?
ওয়েব কনটেন্টের ওপর ভিত্তি করে সেন্সর হওয়া উচিত। যেমন- অনেক কনটেন্ট আছে যেগুলো ছোটদের উপযোগী না। সেন্সরে কনটেন্ট বিবেচনায় বয়সের সেন্সর করা উচিত। অ্যাডাল্ট কনটেন্ট হলে ১৮ বছরের নীচে কেউ দেখতে পারবে না। কারণ আমি চাই না ১৩ বছরের কেউ অ্যাডাল্ট বা ভায়োলেন্স সিনেমা দেখুক। একইসঙ্গে ওয়েব সিনেমার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবং সীমাবদ্ধতা পাশাপাশি থাকা উচিত।
- মজার একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনার হাসি কোনো পুরুষকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখতে যথেষ্ট। নিজে কখনো আয়নার নিজের হাসি দেখে মোহিত হয়েছেন?
মোহিত হই কিনা জানিনা! তবে আমি নিজেকে খুব ভালোবাসি। আমার পায়ের নখটাও আমার প্রিয়। কোনকিছু নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। আমি আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট। আয়নায় নিজের হাসি দেখে মোহিত হওয়ার চেয়ে আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আগামী দিনে ভালো মানুষ হিসেবে দেখার প্রত্যাশা করি।
- কোন স্বপ্নের পুরুষ যাকে মায়াবি হাসি দিয়ে ঘায়েল করতে চান?
(অট্টহাসি) মায়াবি হাসি দিয়ে কাউকে ঘায়েল করতে চাই না। কেউ যদি আমার হাসিতে থাকা মায়ার বদলে আমাকে মায়া দিতে রাজি হয় তাহলে আমি তাকে মায়া দিতে রাজি আছি।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ