অসুস্থ রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে : রামেন্দু মজুমদার
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:০০
পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির আনন্দের পাশাপাশি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতি উদযাপন করবে বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী। বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠবে পুরো দেশ। নানা আয়োজনে স্বাধীনতার বীর যোদ্ধাদের স্মরণ করার পাশাপাশি জাতি ধিক্কার জানাবে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিও।
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সারাবাংলা’র পাঠকদের কাছে নিজের বিজয় ভাবনা তুলে ধরেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গণের উজ্জ্বল মুখ রামেন্দু মজুমদার। বাঙালি জাতির গৌরবময় ৪৭তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এই কণ্ঠযোদ্ধার মুখোমুখি হয়েছিলেন সালেহীন বাবু।
বিজয়ের ৪৭ বছর পূরণ হতে যাচ্ছে। সামনে ৫০ বছর পূর্তি হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার অনুভূতি?
রামেন্দু মজুমদার : এবারের অনুভূতি একটু আলাদা রকমের। কারণ আগামী ৩০ তারিখ জাতীয় নির্বাচন। সুতরাং এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের যাত্রাটা কোনদিকে হবে সেটা আমরা নিশ্চিত হতে চাই। যে ধারা চলছে সে ধারা অব্যাহত থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িক, মানবিক বাংলাদেশ সেটা আমরা নির্মাণ করতে চাই। আমরা চাই সে বাংলাদেশকে আমরা ফিরে পাব।
আরও পড়ুন : ২৫ জানুয়ারি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন
অসাম্প্রদায়কি বাংলাদেশের শুদ্ধি চিন্তাকে আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি?
রামেন্দু মজুমদার: একেবারেই পারিনি। কারণ আমরা ধর্মকে দুষ্টু রাজনীতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করছি। সুতরাং আমরা সেই মানবিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। ক্রমশ ধর্মকে আমরা রাজনীতির সাথে এত বেশি যুক্ত করছি যার ফলে এটা একটা বিরাট সংকট হয়ে দাড়াচ্ছে।
এ সংকট থেকে পরিত্রানের উপায় কি তবে?
রামেন্দু মজুমদার : ধর্ম হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এটাই চিরায়ত নিয়ম। কিন্তু তার সঙ্গে যদি আমরা ধর্মের সাথে রাজনীতি মিলিয়ে ফেলি তা হলে তো খুব বিপদ। যেটা পাকিস্তান আমলে দেখেছি আবার নতুন করে দেখছি। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে কিভাবে জড়িয়েছিলেন?
রামেন্দু মজুমদার : একাত্তরের মে মাসে কলকাতায় যাই। ইচ্ছে ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করার। অনেক চেষ্টার পর স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। তবে নিজের নামে নয়। অন্য নামে।
সে সময় বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা–বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলণও সম্পাদনা করেছিলেন…
রামেন্দু মজুমদার : সে সময় দিল্লি থেকে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা–বিবৃতির একটা ইংরেজি সংকলণ সম্পাদনা করে প্রকাশ করি। ওই সময় কলকাতা বাংলাদেশ মিশনে পুরোনো কিছু পত্রিকা ছিল। এক সময় মনে হল বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা–বিবৃতি নিয়ে কাজ করলে তো মন্দ হয়না। তখন একটা বক্তৃতার বিভিন্ন কাগজ দেখে দেখে ইংরেজিতে বিবৃতি–বক্তৃতা তৈরি করলাম। তবে প্রত্যেক বিবৃতির আগে আমি ইংরেজিতে সম্পাদকীয় নোট দিতাম।
মুক্তিযুদ্ধের কোন বিশেষ স্মৃতি যা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায় –
রামেন্দু মজুমদার : মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যখন সীমান্ত পার হচ্ছিলাম। সে সময় রাতে এক কৃষকের বাড়িতে আশ্রয় নেই। তারা আমাদের রান্না করে খাওয়ায়। তারা একটা পয়সাও আমাদের কাছ থেকে নেননি। তারা কোনও প্রতিদান আশা করেনি। সুতরাং আমি মনে করি এটাই তাদের মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ তখনকার দিনে যে যেভাবে পেরেছে সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করেছে। এ কথাটাই আমরা যেন ভুলে না যাই।
স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের কি বলবেন?
রামেন্দু মজুমদার : অবশ্যই তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানবে এবং সে সময় চেতনাটা কি ছিল সেই জায়গাটা ধরে এগোতে হবে। আর কোনও রকমের অসুস্থ রাজনীতর চক্রে তারা যেন পা না দেয় এটাই থাকবে আমার অনুরোধ কিংবা পরামর্শ।
সারাবাংলা/পিএম
আরও পড়ুন : বছর হলো ‘এক’