‘ওয়ারফেজ-এর গান গাইতে পারবেন না মিজান’
১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৪১
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
‘ওয়ারফেজ’ ছেড়ে যাওয়ায় ব্যান্ডটির গান পরিবেশনের ওপর মিজানকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কপিরাইট বোর্ড। তার গলায় ওয়ারফেজের গানকে ‘বেআইনি’ বা ‘মেধাস্বত্ব আইনের’ পরিপন্থী বলেও রায় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যান্ডটির বর্তমান সদস্যদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বোর্ড এ আদেশ দিয়েছেন।
কপিরাইট বোর্ডের রেজিস্টার জাফর রাজা চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেছেন, ‘মিজান ওয়ারফেজ থেকে বের হয়ে গেছেন আরও অনেক আগে। এখন দলটির কোন গান তার গাওয়া উচিত না। এ ব্যাপারে মেধাস্বত্ব আইনে কপিরাইট বোর্ড রায় দিয়েছে। আমি মনে করি এই রায় মিজানের মেনে নেয়া উচিত। তবে তিনি চাইলে রায়ের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘ব্যাপারটি শেষ হয়ে গেছে’ বলে এড়িয়ে যেতে চান তিনি। পরে কপিরাইটবোর্ডের রায়টি তাকে জানানো হলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ওয়ারফেজে কাজ করেছি, গানগুলো সবাই মিলেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনে লিখেছেন, বিভিন্ন জনে সুর করেছেন, মানে আমাদের মতো মানুষেরা। যারা সুর করেছেন বা কণ্ঠ দিয়েছেন তারা কিন্তু ব্যান্ডের নামে লিখে দিয়ে আসিনি। এটাও লিখে দিয়ে আসিনি যে এই গান শুধু এরাই বাজাবে আর পৃথিবীর কেউ বাজাতে পারবে না। এই কথাটা আমি কপিরাইট অফিসেও বলেছি।’
মিজান জানান কপিরাইট বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিপরীতে তিনি আপিল করবেন। সেই সঙ্গে ওয়ারফেজের গানও তিনি নিয়মিতই পরিবেশন করবেন।
ওয়ারফেজের সাবেক এই ভোকাল বলেন, ‘আমি গাইবো, পৃথিবীতে যদি কেউ পারে যেন আমাকে ঠেকায়। এইগুলো আমার অর্জন। আমি একটা মৃত বিষয়কে চৌদ্দ বছরে বাঁচিয়ে তুলে এখানে নিয়ে এসেছি। আপনারা সেটা জানেন। আর আমি গাইবো সেগুলোই যেগুলো গাওয়ার অধিকার আমার আছে। যতগুলো গানে আমার কণ্ঠ আছে আমি সেগুলো গাইবো। আমার গলার কি দাম নেই?’
মিজানের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কপিরাইটবোর্ডের রেজিস্টার জানিয়েছেন, তাদের রায় অমান্য করা হলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ওয়ারফেজের দলনেতা ও ড্রামার শেখ মনিরুল আলম টিপু কপিরাইট বোর্ডের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেছেন, ‘আইন আইনের মতো করে চলবে। আশা করছি উভয় পক্ষই সেই আইনকে সম্মান জানাবে। এর বেশি কিছু বলার নেই আমার।’
১৯৮৪ সালের ৬ জুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া ওয়ারফেজ এখন পর্যন্ত আটটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। যেখানে গান রয়েছে ৮৬টি। পাঁচটি সিঙ্গেলসও রয়েছে তাদের। এই ৯১টি গানের মধ্যে ‘বেওয়ারিশ’ ও ‘অমানুষ’ শিরোনামের দুটি গান ছাড়া অবশিষ্ট সব গানেরই গীতিকার ও সুরকার হলেন ওয়ারফেজ ব্যান্ড দলের সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা। ওই দুটি গানের গীতিকার হলেন ওয়ারফেজ দলের অন্য তিনজন সদস্য আশিকুর রহমান, কমল ও কুশল। ‘বেওয়ারিশ’ গানটির সুরকার এককভাবে মিজান। আর ‘অমানুষ’ গানটির সুরকার মিজান, অনি ও কমল। তবে অ্যালবামের গানগুলোর স্বত্ব ওয়ারফেজ ব্যান্ডের নামে সংরক্ষিত।
কপিরাইট বোর্ডের রায়ে বলা হয়েছে, ওয়ারফেজ ব্যান্ডের অনুমতি ছাড়া তাদের গান যদি কেউ বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে তবে কপিরাইট আইন অনুযায়ী তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে ভোকাল হিসেবে জনপ্রিয় মেটাল ব্যান্ড ওয়ারফেজে যোগ দিয়েছিলেন মিজান। তিন বছর পর ২০০২ সালে ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ডটি থেকে বেরিয়ে যান শ্রোতাপ্রিয় এই গায়ক। ২০০৭ সালে আবার ফেরেন। দ্বিতীয় যাত্রায় ২০১৬ পর্যন্ত নয় বছরে দলটির হয়ে বিভিন্ন স্টেজশো’র পাশাপাশি দুটি অ্যালবামেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ‘পথচলা’ [২০০৯] ও ‘সত্য’ [২০১২] অ্যালবামের আগে ২০০০ সালে ‘আলো’ অ্যালবামটিও প্রকাশিত হয়েছিল মিজানের গলায়।
দ্বিতীয়বার ‘ওয়ারফেজ’ থেকে বের হয়ে ‘মিজান অ্যান্ড ব্রাদার্স’ শিরোনামে একটি গানের দল গড়েন মিজান। এই সময়ে শুরু করেন নিজের সলো ক্যারিয়ারও। তবে ওয়ারফেজ ছাড়লেও ওয়ারফেজের গান ছাড়েননি মিজান। স্টেজে ও টেলিভিশনে নিয়মিতই সাবেক ব্যান্ডের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করতে থাকেন তিনি। যা নিয়ে ওয়ারফেজের সদস্যরা আপত্তি তোলে, অভিযোগ গড়ায় কপিরাইট বোর্ডেও! সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কপিরাইট বোর্ড মিজানকে ওয়ারফেজের গান গাইতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধ করে রায় দিয়েছেন।
সারাবাংলা/টিএস/পিএম